শেরপুরের ভাবনা খেলবেন পেশাদার নারী ফুটবল লীগে

এক পা দু’পা করে আস্তে আস্তে স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন শেরপুরের নারী ফুটবলার ভাবনা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে ওঠে আসা নিভৃত পল্লীর কিশোরী ভাবনা এখন লিখিয়েছে দেশের নারী ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে। বাংলাদেশ ওমেন্স ফুটবল লীগে জামালপুর কাচারীপাড়া ফুটবল একাদশের রেজিস্টার্ড খেলোয়াড় হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছেন ভাবনা।

শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লীর বাসিন্দা এক ডেকোরেটর কর্মীর মেয়ে এই ভাবনা। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তার ফুটবলে হাতে খড়ি। মেয়ে খেলাধুলায় আগ্রহী হওয়ায় তাকে বাধা দেননি তার বাবা-মা। পাড়া-প্রতিবেশীরা বাঁকা চোখে দেখলেও তাকে ভ্রূক্ষেপ করেননি। বরং তারা মেয়ে ভাবনার ভবিষ্যৎ ফুটবল ভাবনায় সবসময় সহযোগী হয়েছেন। কয়েক বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে শেরপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামে খেলার সময় ভাবনা নজর কাড়েন স্থানীয় ফুটবল অনুরাগীদের।

মানিক ফুটবল একাডেমীর প্রধান কোচ গোলাম শাহরিয়ার রবীন ভাবনাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। তাকে তার একাডেমীতে বিনাবেতনে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন। সেই থেকে শুরু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিদিন অটোরিকশায় করে গ্রাম থেকে শেরপুর শহরে এসে স্টেডিয়ামে ছেলেদের সাথে মানিক ফুটবল একাডেমীতে অনুশীলন ও কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। তার অধ্যবসায় এবং অনুশীলন সবাইকে চমৎকৃত করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার খেলায় পরিপক্বতার ছাপ পরিলক্ষিত হয়। মানিক ফুটবল একাডেমীর কর্ণধার ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক দত্ত ভাবনার ফুটবল প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে শেরপুর জেলা নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করে তার বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন সারথি হন। নানাভাবে অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকেন। মেয়ে বিভিন্ন জায়গাতে খেলতে যাওয়া এবং জেলা দলে সুযোগ পাওয়া, অধিনায়ক হওয়ায় বাবা-মা’র মনেও অন্যরকম ভালোলাগা অনুভূত হতে থাকে। তারা মেয়েকে ফুটবল খেলতে আরো উৎসাহিত করতে থাকেন। নিয়মিত একাডেমীতে পাঠান। ভাবনাও নিজেকে বড় ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন নতুন স্বপ্ন বুনতে থাকেন।

ভাবনা বলেন, বাংলাদেশ ওমেন্স ফুটবল লীগে দল পাওয়ায় আমি দারুণ খুশী। এটা দেশের নারী ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়। এটা আমার জন্য নিজেকে প্রমাণ করার বড় সুযোগ। আমি মাঠে নামার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। ক্লাব যদি আমাকে পর্যাপ্ত সময় মাঠে খেলায়, তাহলে নিজের সেরাটা দিয়ে খেলার চেষ্টা করবো।

তিনি বলেন, কোচ রবীন ভাইয়ের (গোলাম শাহরিয়ার রবীন) অনুপ্রেরণা, সাহস জোগানো ও শাসনের জন্য আমি আমার স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তার জন্যই আমার নারী ফুটবল লীগে খেলার সুযোগ হয়েছে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে ভাবনা জানায়, আমার স্বপ্ন একদিন জাতীয় নারী ফুটবল দলের হয় খেলার। আমাদের জেলার জ্যোতি আপা (নিগার সুলতানা জ্যোতি) বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। আমিও স্বপ্ন দেখি, তার মতো একদিন ফুটবলেও আমার দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার। আমি নিজেকে একজন বড় ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।

ভাবনার বাবা বলেন, মাইনসে অনেকে অনেক কথা বলেছে, আমি কোন কথায় কান দেই নাই। মেয়ে যখন ফুটবল খেলবার চায়, আমি তারে বাধা দেই নাই। যহন আমার মেয়েরে স্যারেরা খেলবার নেয়, তহন আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমি চাই মেয়ে আমার আরো আগাই যাক। ওর জন্য আমি সবার কাছে দোওয়া চাই।

মানিক ফুটবল একাডেমীর প্রধান কোচ গোলাম শাহরিয়ার রবীন বলেন, ভাবনা অনেক পরিশ্রমী, স্কিলফুল এবং স্বপ্নবাজ। পরিবারও তার পাশে থাকার কারণে ফুটবলকে ভালোবাসে ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠার পথ সুগম হয়েছে। ওমেন্স লীগে খেলার সুযোগ হওয়ায় ভাবনার ফুটবল জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হতে যাচ্ছে। আশার বিশ্বাস সে ভালো করবে। তার জন্য শুভকামনা রইলো।

শেরপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, ভাবনা আমাদের শেরপুর জেলা নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক। সে এখন পেশাদার নারী ফুটবলে খেলতে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের। আমাদের জেলা থেকে সে ই প্রথম দেশের শীর্ষ ফুটবল আসরে খেলার এমন সুযোগ পেয়েছে। তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //