হাসান আল মামুনের বড় স্বপ্ন

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হাসান আল মামুন। দেশের সবেধন নীলমণি তিনটি ফুটবল সাফল্যেই জড়িয়ে তার নাম। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চার জাতি টুর্নামেন্ট, ১৯৯৯ সালের এসএ গেমস স্বর্ণ আর ২০০৩ সালের সাফ শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের গর্বিত সদস্য তিনি। তাকে দেশের ইতিহাসের সেরা ‘রাইট-ব্যাক’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। যার খেলার মধ্যে ইউরোপীয় ফুটবলের আদল ছিল স্পষ্ট। প্রচুর স্ট্যামিনা, রক্ষণভাগ সামাল দিয়ে ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে যাওয়া আর সময়মতো ফিরে আসায় তার জুড়ি মেলা ছিল ভার। 

মামুনের ফুটবলে হাতেখড়ি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯৯২ সালে দশম শ্রেণিতেই টিম বিজেএমসির হয়ে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু। পরবর্তী সময় ইয়াংম্যান্স ফকিরাপুল, আবাহনী ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, শেখ জামাল ধানমন্ডি আর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মতো বড় দলে খেলেছেন। ২০১৬ সালে চিটাগাং আবাহনীর জার্সি গায়ে খেলোয়াড় জীবনের ইতি টানেন। ক্লাব ক্যারিয়ারেও জিতেছেন ৯টি ট্রফি। বুট-জোড়া তুলে রাখার পর সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন চট্টগ্রাম আবাহনী আর শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলে হ্যাভিয়ের কাবরেরার সহকারী তিনি।

জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে দুই বছর পূর্ণ করেছেন মামুন। এ সময়ে কাবরেরা-মামুন জুটির বাংলাদেশ ক্রমশ উজ্জ্বল। র‍্যাংকিং উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ ১৪ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলা আর বিশ্বকাপের প্রিমিলিনারি পেরিয়ে গ্রুপপর্বে জায়গা করে নেওয়া জানান দিচ্ছে, আপাতত সঠিক পথেই চলছে দেশের ফুটবল। সামনেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের ফিলিস্তিন পরীক্ষা। ২১ মার্চ কুয়েতে প্রথম লেগ। দ্বিতীয় লেগ ঢাকার কিংস অ্যারেনায়। ফিফা র‍্যাংকিংয়ের ৯৯তম অবস্থানে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে ১৮৩তম বাংলাদেশের লড়াই সহজ হবে না। তা ছাড়া ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে পূর্ববর্তী চার খেলায় একটি ড্র ছাড়া কোনো সাফল্য নেই লাল-সবুজের দলের।

মামুন জানিয়েছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা র‍্যাংকিং আর শারীরিক সক্ষমতা- সব দিকেই এগিয়ে। সর্বশেষ এশিয়ান কাপে তারা আমিরাতকে রুখে দিয়েছে। হারিয়েছে হংকংকে। তবে ঢাকায় নিজেদের মাঠে আমরা 

হোম-অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগাতে চাই। আর কুয়েতের মাঠ দুই দলের জন্যই নিরপেক্ষ ভেন্যু। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন আমাদের উজ্জীবিত করবে বলে বিশ্বাস করি। আমরা ফিলিস্তিনিদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না।’

বাফুফের সিদ্ধান্ত, ফিলিস্তিনের বিপক্ষে মূল প্রস্তুতি ক্যাম্পের আয়োজন হবে সৌদি আরবে। ক্যাম্প হবে আল-তায়িফ শহরের কিং ফাহাদ স্পোর্টস সিটিতে।

মামুন জানিয়েছেন, সৌদির সঙ্গে কুয়েতের আবহাওয়ার মিল আছে। তাই মার্চের ১-২ তারিখের মধ্যেই সৌদিতে ক্যাম্প করে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চান। সৌদিতে খেলতে চান কমপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। সেটা হতে পারে কোনো জাতীয় দলের সঙ্গে।

বর্তমান বাংলাদেশে স্ট্রাইকার সংকট রয়েছে। পেশাদার লিগের দলগুলোতে স্ট্রাইকিং পজিশন মূলত বিদেশিদের জন্য বরাদ্দ। মামুনের চোখে ফর্টিস এফসির ফয়সাল আরমান আকাশ, শেখ জামালের ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, শেখ রাসেলের সুমন রেজা আর মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমনের সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষ স্ট্রাইকার হিসেবে গড়ে ওঠার। তিনি আরও বলেন, ‘কোচ কাবরেরার পরিকল্পনায় পুরো দলের সবাই গুরুত্বপূর্ণ। দলে মোরসালিন আর রাকিবদের মতো খেলোয়াড় রয়েছে। উইঙ্গার রাকিব চলতি বিপিএলে পাঁচ গোলের সঙ্গে দুই অ্যাসিস্ট করে বিদেশিদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। মোরসালিনের রয়েছে সহজাত প্রতিভা। সোহেল রানাদের মতো খেলোয়াড়রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ দল বর্তমানে টিম হিসেবে খেলতে শিখছে।’ 

খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশকে তিনটি শিরোপা জিতিয়েছেন। কোচিং প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেও দেশকে অন্তত ‘সাফ’ বিজয়ী দেখতে চান মামুন। জানালেন, ‘২০২৩ সালের সাফ সেমিফাইনালে আমরা কুয়েতের মতো শক্তিধর দলের বিপক্ষে ১২০ মিনিট লড়াই করে একমাত্র গোলে হেরেছি। শুধু সাফ অঞ্চলের দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা হলে আমরা শিরোপা জিতে ফিরতেও পারতাম। তবে সাফের সাফল্যে দেশের ফুটবল নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। এখন আমরা কোনো দলের সঙ্গে লড়াই করতে ভয় পাই না।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //