ফিফা বর্ষসেরায় মেসির বিস্ময়কর বিজয়

২০২৪ সালের শুরুতেই লিওনেল মেসির বাজিমাত। তিনি জিতে নিয়েছেন ফিফা বর্ষসেরা অ্যাওয়ার্ড। হারিয়েছেন আর্লিং হালান্ড আর কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ২০২৩ সালে মেসির পারফরম্যান্স আহামরি ছিল না। বরং ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে মেসির চেয়ে এগিয়ে ছিলেন নরওয়েজিয়ান গোলমেশিন হালান্ড। কিন্তু সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন মেসি। মূলত মেসির তারকাখ্যাতির কাছেই হার মেনেছেন হালান্ড।

১৫ জানুয়ারি লন্ডনে বসে ফুটবলের বিশ্ব নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফিফার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আসর। ছেলেদের বিভাগে সেরা তিনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন মেসি, হালান্ড আর এমবাপ্পে। ফিফার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেসি আর হালান্ড পেয়েছেন সমান ৪৮টি করে ভোট। অধিনায়ক আর ভক্তদের ভোট ছিল মেসির পক্ষে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কোচ আর সাংবাদিকদের ভোটে এগিয়ে গেছেন হালান্ড। কিন্তু মেসি জিতেছেন জাতীয় দলের অধিনায়কদের ভোটে প্রথম পছন্দের তালিকায় এগিয়ে থাকায়। ফিফার ‘রুলস অব অ্যালোকেশন’-এর ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত।

ফিফার ভোট গণনার বিষয়টা একটু জটিল। বিজয়ীদের মধ্যে ভোট সংখ্যা সমান হলে বিবেচনায় আসে ভোটারদের ভোটের মান। এখানে জাতীয় দলের অধিনায়কদের ভোটের রেটিং বেশি। ফিফার রুলস অব অ্যালোকেশনের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ সংখ্যক পাঁচ পয়েন্ট ভোট বা প্রথম স্থানের অধিকারীই হবেন বর্ষসেরা। ফিফা বলছে, হালান্ডের সঙ্গে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে টাই হলেও মেসি সর্বোচ্চ ১০৭ বার ৫ পয়েন্টের ভোট পেয়েছেন। যেখানে হালান্ড পেয়েছেন ৬৪ বার। হাল্যান্ডের দুর্ভাগ্য, অসাধারণ মৌসুম কাটিয়েও ফিফার কঠিন নিয়মের বেড়াজালে আটকে যাওয়ায় বিশ্বসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পেলেন না।

কাতার বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিবেচনায় আনা হয় ফিফা অ্যাওয়ার্ডে। মূলত কাতার বিশ্বকাপের জন্য ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পূর্ববর্তী ফিফা অ্যাওয়ার্ডে আনা হয় এই নিয়ম। অর্থাৎ সর্বশেষ ফিফা অ্যাওয়ার্ডে খেলোয়াড়দের আট মাসের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই সময়ে হালান্ড জিতেছেন ইপিএল, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ আর উয়েফা সুপার কাপ। মেসি জিতেছেন পিএসজির হয়ে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান এবং ইন্টার মিয়ামির হয়ে ইউএস লিগ কাপ। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে মেসি যোজন পিছিয়ে ছিলেন হালান্ডের চেয়ে। হালান্ড জিতেছেন ইপিএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা খেলোয়াড় আর সেরা উদীয়মান তারকার পুরস্কার। জিতেছেন উয়েফা গোল্ডেন শু আর চ্যাম্পিয়নস লিগের গোল্ডেন বুট। আর ফিফার নির্ধারণ করে দেওয়া সময়ে তার ছিল ৩৩ ম্যাচে ২৮টি গোল।

একই সময়ে মেসি শুধু জিতেছিলেন ইউএস লিগ কাপের সেরা গোলদাতা আর সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। মেসি ২০২৩ সালে পিএসজি আর ইন্টার মিয়ামি মিলিয়ে ৩৩ ম্যাচে করেছেন ২০ গোল, ১১ অ্যাসিস্ট। জাতীয় দলের জার্সিতে মেসির গোল ছয়টি। অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে থাকা এমবাপ্পেও পিএসজির হয়ে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান আর ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ জিতেছেন। পেয়েছেন লিগ ওয়ানের সেরা গোলদাতা আর সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ফিফার জটিল সমীকরণে চূড়ান্ত বিজয়ী আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না খোদ মেসি। সম্ভবত পুরস্কার জিতবেন, এমন আশা ছিল না বলেই তার অনুপস্থিতি। মেসির পক্ষে জমকালো আয়োজনের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন ফরাসি কিংবদন্তি এবং মেসির সাবেক সতীর্থ থিয়েরি অঁরি। এ নিয়ে 

তৃতীয়বার এবং সবশেষ টানা দুইবার ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ হলেন মেসি। ২০১৯ ও ২০২২ সালে ফিফা বর্ষসেরা হয়েছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।

ফিফার বিবেচনায় বর্ষসেরা কোচ ম্যানচেস্টার সিটিকে ‘ট্রেবল’ জেতানো পেপে গার্দিওলা। নারী বিভাগে সেরা খেলোয়াড় স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী আইতানা বোনমাতি। সেরা নারী কোচ হয়েছেন ইংল্যান্ড নারী দলের ডাচ কোচ সারিনা ভাইগমান। ছেলেদের বিভাগের বর্ষসেরা গোলরক্ষক ম্যানসিটির ব্রাজিলিয়ান এডারসেন। ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার মেরি আর্পস টানা দ্বিতীয়বারের মতো জিতেছেন মেয়েদের ‘দ্য বেস্ট’ গোলকিপারের ট্রফি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //