রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম ‘গোল্ডেন-বয়’ বেলিংহ্যাম

দেড় যুগের বেশি সময় ধরে ইউরোপের ক্লাব ফুটবল মাতিয়ে রেখেছিলেন লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। শুধু ইউরোপ না, তারা শাসন করেছেন বিশ্ব ফুটবল। কাতার বিশ্বকাপ জিতে মেসি জায়গা করে নিয়েছেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের তালিকায়। রোনালদোও আন্তর্জাতিক ও পেশাদার ক্যারিয়ারে সর্বকালের গোল-রেকর্ড গড়ে ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের তালিকাতেই আছেন। তবে হয়তো খুব বেশিদিন তাদের দেখা যাবে না ফুটবলের অসামান্য ক্যারিশমায় ভক্তদের মাতাতে। তাই প্রশ্ন জাগছে, মেসি-রোনালদোর পর ফুটবল বিশ্বের ‘শাসন-দণ্ড’ উঠবে কার হাতে?

বিশ্ব ফুটবল মূলত ইউরোপকেন্দ্রিক। ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতায় পারফর্ম করেই যে কোনো খেলোয়াড়কে প্রমাণ করতে হয় বিশ্বসেরা হিসেবে। মেসি-রোনালদো ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের পাট চুকিয়েছেন। তাদের পরবর্তী যুগে ইউরোপের বড় তারকা হিসেবে কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, আর্লিং হালান্ড, গ্যাভিরা বিশ্ব শাসন করবেন আভাস মিলেছে। আর অধুনা উদীয়মান প্রতিভার তালিকায় যোগ হয়েছে জুড বেলিংহ্যামের নাম। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লিখিয়েছেন বেলিংহ্যাম। ইংল্যান্ডের তারকার বয়স মাত্র ২০ বছর। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চলতি মৌসুমে হাঁকিয়েছেন ১৪ ম্যাচে ১৩ গোল। রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যাওয়ার পর করিম বেঞ্জেমা ছিলেন। তিনিও এখন পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি ক্লাব আল ইত্তিহাদে। দলে জোসেলু ছাড়া সত্যিকার অর্থে কোনো স্ট্রাইকার নেই। ভিনি-রদ্রিগো ফরোয়ার্ড না, তবে গোল করার সক্ষমতা আছে। তাই নতুন মৌসুমে গোল করা নিয়ে রিয়ালের দুশ্চিন্তা ছিলই। যা দূর করেছেন বেলিংহ্যাম।

বেলিংহ্যাম নিজেও পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার নন। তিনি মধ্যমাঠের খেলোয়াড়। কিন্তু তাকেই কোচ কার্লো আনচেলত্তি ব্যবহার করছেন কখনো ফলস-নাইন কিংবা ফরোয়ার্ড হিসেবে। নতুন ভূমিকায় নিজেকে দুর্দান্ত প্রমাণ করেছেন বেলিংহ্যাম। রোনালদোর পর স্প্যানিশ লা লিগায় প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে রিয়ালের জার্সিতে টানা পাঁচ ম্যাচে গোলের রেকর্ড গড়েছেন। করেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের অভিষেকে গোল। বার্সেলোনার বিপক্ষে ‘এল-ক্ল্যাসিকো’ ম্যাচেও বেলিংহ্যাম রিয়ালকে এনে দিয়েছেন মর্যাদার জয়। এ ছাড়া আগস্টে লা লিগা অভিষেকে নির্বাচিত হয়েছেন ‘মাসের সেরা খেলোয়াড়’। অক্টোবরেও পেয়েছেন একই স্বীকৃতি। স্পেনের ফুটবলে ডেভিড বেকহ্যাম, স্টিভ ম্যাকম্যানামানসহ নামি-দামি ইংলিশ ফুটবলারের পদচারণা দেখা গেছে। কিন্তু কেউ লা লিগার ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ নির্বাচিত হননি। যা বেলিংহ্যাম চার মাসের মধ্যে দুবার করে দেখিয়েছেন।

এদিকে নভেম্বরে বেলিংহ্যামকে নির্বাচিত করা হয়েছে ‘গোল্ডেন-বয়’ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হিসেবে। ইতালীয় ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম টুটস্পোর্টস এ পুরস্কার দেয়। বিজয়ী নির্বাচন করা হয় বিভিন্ন দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোটে। খেলোয়াড়রা মনোনয়ন পেয়ে থাকেন ইউরোপের শীর্ষ লিগে খেলে, এ ক্ষেত্রে ২১ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনায় নেওয়া হয় না। ৪ ডিসেম্বর ইতালির তুরিনে বেলিংহ্যামের হাতে পুরস্কার লে দেবে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বেলিংহ্যামই রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন গোল্ডেন-বয়। 

বেলিংহ্যামের ক্যারিয়ার শুরু বার্মিংহ্যামের একাডেমি দলে। ২০১৯-২০ মৌসুমে পেশাদার ক্যারিয়ারের অভিষেক বার্মিংহ্যামেই। পরবর্তী তিনটি মৌসুম কাটিয়েছেন জার্মানির বুন্দেস লিগায় বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। জার্মানির লিগেও বেলিংহ্যাম ছিলেন অনবদ্য। ২০২২-২৩ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ডর্টমুন্ডের হয়ে ৪২ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন। নির্বাচিত হয়েছেন বুন্দেস লিগার বর্ষসেরা ফুটবলার। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় হিসেবে যা প্রথম। বেলিংহ্যাম শুধু ক্লাব ফুটবল না, আন্তর্জাতিক ফুটবলেও ছুটছেন অসামান্য গতিতে। তবে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে তার ভূমিকা গোল করা নয়, তিনি মধ্যমাঠ থেকে আক্রমণ গড়ে দেওয়ার সহযোগী। কাতার বিশ্বকাপে ছিলেন অনবদ্য। মাইকেল ওয়েনের পর তিনিই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //