বদলে যেতে পারে দেশের ফুটবলের গতিপ্রকৃতি

বাংলাদেশের ফুটবল বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে রয়েছে, যেখান থেকে আন্তর্জাতিক আসরে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখা সম্ভব না। যদিও ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সাফের শিরোপা জিতেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবল টুর্নামেন্টে ১৯৯৯ থেকে খেলেছে টানা তিনটি ফাইনাল। এখন সবই ধূসর স্মৃতি।

বরং ২০২৩ সালে ১৮ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে ওঠা বিবেচিত হচ্ছে বড় সাফল্য হিসেবে। ভারতে ওমান ও কুয়েতের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর হেরে যাওয়া কিংবা মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে জয়টা এখন আমাদের জন্য বড় পাওয়া। বলা যায়, ধুঁকতে থাকা ফুটবলে কিছুটা হলেও ‘অক্সিজেন’ সঞ্চার করতে পেরেছে সাফ টুর্নামেন্ট থেকে। 

সাফের পর বাংলাদেশের পরীক্ষা এশিয়ান গেমসে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে চীনের হাংজুতে আনুষ্ঠানিক পর্দা উঠবে এশিয়ান গেমসের। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাদেশের ক্রীড়াযজ্ঞে বাংলাদেশের পুরুষ আর নারী ফুটবল দল লড়ছে। এশিয়ান গেমস ফুটবলে পুরুষ দলের অংশগ্রহণ নতুন না, কিন্তু মেয়েরা খেলছে প্রথমবারের মতো। সাম্প্রতিক সময়ে কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটনের পদত্যাগ আর স্বপ্নাসহ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ের অকাল অবসরের ধাক্কা লেগেছে নারী ফুটবলে। ভারপ্রাপ্ত কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুর অধীনে নিজ দেশের মাটিতে নেপালের বিপক্ষে খুইয়েছে সিরিজ। যদিও সিরিজের দুটি ম্যাচই ড্র ছিল। কিন্তু ট্রফি নির্ধারণী টাইব্রেকারে হেরেছে সাবিনা খাতুনরা। 

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়েই সাফের শিরোপা জিতেছিল নারীরা। পরবর্তী নয় মাস আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা হয়নি। যার মাসুল দিতে হয়েছে নেপালের কাছে সিরিজ হেরে। এশিয়ান গেমসে নারী ফুটবল দলের জন্য কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। বরেণ্য ফুটবলার সাইফুল বারী টিটুর কোচিংয়ে মেয়েরা প্রথম খেলতে নামবে আন্তর্জাতিক আসরে। সাফ অঞ্চলে সাফল্যের পর মেয়েদের নিয়ে অনেকেই এশিয়ান স্তরে স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের মিল কতটুকু, বোঝা যাবে এশিয়ান গেমসে।

এশিয়ান গেমসে মেয়েদের জাতীয় দল খেললেও পুরুষদের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নিয়মানুযায়ী সেখানে অংশ নেবে অনূর্ধ্ব-২৩ দল। সঙ্গে থাকবে তিনজন সিনিয়র ফুটবলার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ঘোষণা করেছে ২২ সদস্যের স্কোয়াড। সিনিয়র কোটায় জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে এশিয়ান গেমসে থাকছেন মুরাদ হাসান ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার অধীনে এশিয়ান গেমসে ছেলেরা খেলবে ‘এ’ গ্রুপে। প্রতিপক্ষ ভারত, মিয়ানমার ও চীন। মেয়েরা ‘ডি’ গ্রুপে, প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি জাপানের সঙ্গে ভিয়েতনাম আর নেপালকে ।

পুরুষ ও নারী উভয় ইভেন্টে বাংলাদেশের জন্য গ্রুপ পর্ব পেরুনো হবে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ২০১৮ সালে জাকার্তা-পালেমবাং এশিয়ান গেমসে কাতারের মতো দেশকে হারিয়ে নক আউট পর্বে উঠে ইতিহাস গড়েছিল জামালরা। ২০২৩ সালে পুরনো সাফল্যের পুনরাবৃত্তির চাওয়া সকলের। গেমস চলাকালে এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং এএফসি কাপের খেলা আছে। দুই আসরে খেলবে পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এবং ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র। ফলে এই দুই দলের খেলোয়াড়দের পাচ্ছে না বাফুফে। যা এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের শক্তি খর্ব করবে। 

এশিয়ান গেমসের পরই রয়েছে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ বাছাই। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের ‘এইচ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন। এশিয়ান কোয়ালিফাইয়ার্সের পর রয়েছে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই। প্রথম রাউন্ডে আগামী ১২ অক্টোবর মালদ্বীপের মাঠে আতিথ্য নেওয়ার পর ১৭ অক্টোবর নিজেদের মাটিতে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। চিরচেনা দলের বিপক্ষে ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ লড়াই জিতলে মিলবে পরবর্তী রাউন্ডের টিকেট। যা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য জরুরি। বর্তমানে ফুটবলের যা অবস্থা, তাতে মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জিততেই হবে। জিতলে ফুটবলের ওপর সৃষ্টি হওয়া আস্থা বাড়বে। নইলে ফের অন্ধকার যুগে ধাবমান হবে দেশের ফুটবল।

ক্লাব পর্যায়েও দারুণ কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের প্লে-অফ রাউন্ডে দেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে খেলতে চলেছে চ্যাম্পিয়নরা। আগামী ১৫ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচ বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ শারজাহ কিংস। ওই ম্যাচ জিতলে ২২ আগস্ট ইরানে গিয়ে ট্র্যাক্টর এফসির বিপক্ষে তাদের প্লে-অফ ম্যাচ। এই দুই ম্যাচ জিতলে বসুন্ধরা কিংস চ্যাম্পিয়নস লিগের মূল পর্বে জায়গা করে নেবে। কোনো ম্যাচ হারলেও বসুন্ধরা সরাসরি খেলবে এশিয়ান ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে। আবাহনীর সামনে আছে প্লে-অফ জিতে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে খেলার সুযোগ।

সব মিলিয়ে সামনের কয়েকটা মাস বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ান গেমস কিংবা যুব এশিয়ান বাছাই, জাতীয় দলের বিশ্বকাপ বাছাই এবং এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে বসুন্ধরা আর আবাহনী প্রত্যাশিত সাফল্য পেলে বদলে যেতে পারে দেশের ফুটবলের গতিপ্রকৃতি। তেমন হলে ২০২৩ সাল বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য হতে পারে পুনঃজাগরণের নতুন মাইলফলক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //