মেসির দলবদল

আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনো হয়নি। শুধু মৌখিক একটা ঘোষণা এসেছে। তাতেই কবর রচিত হয়েছে লিওনেল মেসির দলবদল নিয়ে আকাশ-বাতাস কাঁপানো গুঞ্জনের। নাটকীয় সব গুঞ্জনকে মাটি চাপা দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায় মেসির ভবিষ্যৎ ঠিকানা। বার্সেলোনায় ফেরা বা সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল নয়, মেসির নতুন ঠিকানা- ইন্টার মিয়ামি সিএফ। ক্লাবটি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল। যে মেজর লিগ সকার এক সময় ইউরোপীয় তারকা ফুটবলারদের ‘বৃদ্ধাশ্রম’ হিসেবেই খ্যাত ছিল! ইউরোপ ছেড়ে মেসিও নাম লেখালেন সেই ‘বৃদ্ধাশ্রমে’।

ঘোষণাটা দিয়েছেন স্বয়ং মেসিই। তার বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন যখন চরমে, ঠিক তখনই স্পেনের দুই গণমাধ্যম ‘দিয়ারিও স্পোর্টস’ এবং ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি ঘোষণা দেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’ ছোট্ট এই ঘোষণাতেই নিভে যায় বার্সেলোনা ও আল হিলালের আশার প্রদীপ। থেমে যায় গুঞ্জন-ঝড়। অথচ তার আগে বার্সেলোনায় ফেরা বা আল হিলালে যাওয়া নিয়ে কি শোরগোলটাই না পড়েছিল। 

গুঞ্জনের শুরু-শেষ : পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছিল। তবে মেসির পিএসজি ছাড়ার গুঞ্জনের শুরুটা গত জানুয়ারি থেকে। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ববাসীকে অবাক করে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে নাম লেখান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। চুক্তির এক সপ্তাহ পরই তিনি সপরিবারে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। এর কিছুদিন পরই গণমাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, মেসিকে ৪০০ মিলিয়ন ইউরোয় কিনতে চাইছে সৌদি আরবের আরেক ক্লাব আল হিলাল। 

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আল হিলালকে জড়িয়ে গুঞ্জন আরও জোরালো হয়। সামনে চলে আসে সাবেক ক্লাব বার্সেলোনায় ফেরার বিষয়টিও। বার্সার বর্তমান কোচ জাভি হার্নান্দেজ মেসির সাবেক সতীর্থ এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু। সেই জাভি কদিন পরপরই গণমাধ্যমে মেসিকে ফিরে পাওয়ার আশার বাণী শুনিয়ে গুঞ্জনটাকে চাঙা রাখেন। ওদিকে ইন্টার মিয়ামি অনেক আগে থেকেই মেসির পেছনে পড়ে ছিল। তবে শেষ দিকে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটি খানিকটা পেছনেই পড়ে যায়। বিশেষ করে গণমাধ্যমে ছড়ানো গুঞ্জনের দিক থেকে। 

ইন্টার মিয়ামি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ডেভিড বেকহামের ক্লাব। এক সময় পিএসজির হয়ে খেলা বেকহামের সঙ্গে মেসির সম্পর্কটা দারুণ। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে এবং আরও তিন পক্ষের যোগসাজশে ইন্টার মিয়ামি যে গোপনে গোপনে দেনদরবার ঠিকই চালিয়ে গেছে, গণমাধ্যম তা বুঝতেই পারেনি। বুঝেছে মেসির ঘোষণার পর! কিন্তু তার আগে চলে নাটকীয় সব গুঞ্জনের খেলা। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সেই গুঞ্জনের ডামাডোলে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা এএফপির সংবাদ দুই দুইবার ভুল বা গুজব বলে প্রমাণ হয়েছে!

দলবদল গুঞ্জন দানা বাঁধে গত ৮ মে মেসির বিতর্কিত সৌদি আরব ভ্রমণের পর। ৭ মে ত্রয়ার বিপক্ষে পিএসজির ১-৩ গোলে হারার পর দিনই ক্লাবের নিষেধ সত্ত্বেও মেসি সপরিবারে সৌদি আরব সফরে যান। মেসি সৌদি আরবের পর্যটন শিল্পের শুভেচ্ছা দূত। মৌখিকভাবে তাই সফরটিকে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সৌজন্য সফরের দাবিই করা হয়। তবে সেই সফরের আড়ালে আল হিলালের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আলোচনার ব্যাপারটিও ছিল বলেই ধারণা করা হয়। সফর শেষে মেসি প্যারিসে ফেরার পর অনেক তিক্তকর ঘটনা ঘটে। পিএসজি তাকে দুই সপ্তাহের জন্য ‘নিষিদ্ধ’ করে। পিএসজির উগ্রবাদী সমর্থক গোষ্ঠী মেসি এবং নেইমারের বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে। ‘মেসি-নেইমার চলে যাও’ স্লোগান দেয়। এই অবস্থাতেই আল হিলালের সূত্রের বরাত দিয়ে এএফপি তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, মেসি আল হিলালের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছেন! এএফপির সংবাদটি দ্রুতই বাংলাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরই মেসির বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসি খবরটিকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেন।

এরপর পিএসজির সঙ্গে মেসির সম্পর্ক কিছুটা শিথিল হয়। সৌদি সফর বিষয়ে মেসি প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। পিএসজিও মেসির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। কিন্তু চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় গুঞ্জন চলতেই থাকে। এরই মধ্যে ১ জুন মেসির বিদায়ের ঘোষণা দেন পিএসজির কোচ ক্রিস্টোফ গালতিয়ের। ৩ জুন ক্লেমন্তের বিপক্ষে মৌসুমের শেষ ম্যাচ ছিল পিএসজির। এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে পিএসজির কোচ জানিয়ে দেন, ‘শনিবারের ম্যাচটাই হবে পিএসজির হয়ে মেসির শেষ ম্যাচ।’ ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মেসির দলবদল নিয়ে গুঞ্জন আরও বেশি ডালপালা ছড়ায়। শেষ ম্যাচটি খেলে মেসি যখন পিএসজি-অধ্যায়ের সমাপ্তির ঘোষণা দেন, তখনই আরেকবার ‘ভুল’ প্রমাণিত হয় এএফপি। কারণ তারা এক প্রতিবেদনে দাবি করে, মেসির সঙ্গে চুক্তির আনুষ্ঠানিক আলোচনা সারতে আল হিলালের প্রতিনিধি দল প্যারিসে এসেছেন। ৬ জুনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে তার চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হবে। আল হিলালের প্রতিনিধি দল প্যারিসে মেসির বাবার সঙ্গে বৈঠক করে ঠিকই, তবে এএফপির দাবিমতো চুক্তি আর হয়নি। 

এর মাঝেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বার্সেলোনার সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার সঙ্গে গোপন বৈঠকে বসেছেন মেসির বাবা। টুইটের মাধ্যমে খবরটি দেন ফুটবলারদের দলবদলের খবর দেওয়ার জন্য বিখ্যাত ইতালিয়ান সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো। তিনি দাবি করেন, মেসিকে দলে নেওয়ার জন্য লা লিগা কর্তৃপক্ষ বার্সেলোনাকে সবুজ সংকেত দিয়েছে। বার্সা সভাপতিও তাই মেসির বাবাকে সবকিছু চূড়ান্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

কিন্তু বাস্তবে বার্সেলোনা নাকি মেসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাবই দেয়নি। ইন্টার মিয়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মেসি নিজেই বলেছেন, চুক্তির বিষয়ে বার্সা শুধু টালবাহানাই করেছে!। রোমানোর দাবিমতো বার্সা সভাপতি ও মেসির বাবার গোপন বৈঠকের বিষয় নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই স্পেনের দুই গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়ে দেন, ‘সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’ 

মেসির এই ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব ফুটবলপ্রেমীদের অবাক করে দেয়। অবাক হন মেসি-ভক্তরাও। প্রথমত শেষ দিকের গুঞ্জনে ইন্টার মিয়ামির নামই শোনা যাচ্ছিল না। দ্বিতীযত ইউরোপ ছেড়ে মেসির যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর বিষয়টি হজম করা একটু কঠিনই ছিল।

যে ৪ পক্ষের জোট রাজি করিয়েছে মেসিকে : ইন্টার মিয়ামির মালিক বেকহামের সঙ্গে মেসির সম্পর্কের কথা তো জানাই। কিন্তু শুধু বেকহামের সঙ্গে সেই সম্পর্কের খাতিরেই চিড়ে ভেজেনি। মেসিকে ‘হ্যাঁ’ বলাতে ইন্টার মিয়ামির সঙ্গে জোট বেঁধে যুদ্ধে নেমেছিল আরও তিনটি পক্ষ- এমএলএস কর্তৃপক্ষ, অ্যাডিডাস ও অ্যাপল। এমএলএস কর্তৃপক্ষও (লিগ কর্তৃপক্ষ) খুব করে চাইছিল মেসি তাদের লিগে আসুক। তাই ক্লাব ইন্টার মিয়ামির সঙ্গে তারাও দেনদরবারে নামে। তাদের সঙ্গে মিলে গোপনে চেষ্টা চালিয়ে যায় জার্মানিভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাডিডাস এবং অ্যাপল।

অ্যাডিডাস ফিফা ও এমএলএসের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। মেসির সঙ্গেও অ্যাডিডাসের বিজ্ঞাপনী চুক্তি সেই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। যুক্তরাষ্ট্রের এই লিগের পাশাপাশি লিগের ২৯টি ক্লাবেরও একক স্পন্সর অ্যাডিডাস এবং তাদের সব ক্রীড়া সরঞ্জাম সরবরাহ করে। নিজেদের স্বার্থেই অ্যাডিডাস চাইছিল, মেসি ইন্টার মিয়ামিতে যাক। তাই তারাও মেসিকে রাজি করানোর চেষ্টায় নামে। চেষ্টার সঙ্গে দাওয়াইয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। স্পন্সর হিসেবে এমএলএস থেকে বার্ষিক আয়ের একটা অংশ মেসিকে দিবে অ্যাডিডাস। চুক্তির অংশ হিসেবেই অ্যাডিডাসের আয়ের অংশ পাবেন মেসি।

একইভাবে অ্যাপলের আয়ের অংশও পাবেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। অ্যাপল এমএলএসের সম্প্রচারস্বত্ব কিনে নিয়েছে। এমএলএসের সবগুলো ম্যাচ অ্যাপলের টেলিভিশন চ্যানেল অ্যাপল প্লাসে দেখানো হয়। এই অ্যাপলও জোটবদ্ধভাবে দেন-দরবার করে মেসিকে রাজি করিয়েছে। ক্লাবের বেতন-ভাতার পাশাপাশি মেসির পকেটে উঠবে অ্যাডিডাস ও অ্যাপলের আয়ের অংশও।

ইন্টার মিয়ামিতে যত আয় হবে মেসির : গুঞ্জন ছিল আল হিলাল মেসিকে দুই বছরে দিতে চেয়েছিল ৪০০ মিলিয়ন ইউরো। শেষ দিকে অঙ্কটা বাড়িয়ে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো করা হয় বলেও গুঞ্জন রটে। মেসিও পরে স্বীকার করেছেন, আল হিলাল তাকে বড় অঙ্কের অর্থই দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফেলে মেসি ইন্টার মিয়ামিকে হ্যাঁ বলেছেন। তার দাবি, ‘অর্থের কথা ভাবলে আমি হয়তো সৌদি আরবেই যেতাম। কিন্তু আমার কাছে অর্থটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ মেসি মুখে যা-ই বলুক, তার ইন্টার মিয়ামিতে যাওয়ার পেছনে যে অর্থও বড় কারণ, সেটি স্পষ্টই। অর্থ ব্যাপার না হলে তিনি হয়তো আরও কয়েকটা বছর ইউরোপেই খেলতে পারতেন। আর্থিক দৈন্য দশায় পতিত বার্সেলোনা উচ্চ বেতনের কারণেই তাকে দলে ভেড়াতে পারেনি। মেসিই বলেছেন, ইউরোপের আরও একটি ক্লাব পেতে চেয়েছিল তাকে। কিন্তু তাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য ছিল না। 

আল হিলালের প্রস্তাবিত অঙ্কের সমান হয়তো হবে না, তবে সব মিলিয়ে ইন্টার মিয়ামিতেও মেসির আয় একেবারে কম হবে না। এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হওয়ায় ইন্টার মিয়ামিতে মেসির বার্ষিক পারিশ্রমিকের অঙ্কটা জানা যায়নি। তবে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটিতে মেসির বার্ষিক বেতন হবে ৫৪ মিলিয়ন ইউরো। সঙ্গে অ্যাডিডাস ও অ্যাপলের লাভের অংশ হিসেবেও বড় অঙ্কের অর্থই পাবেন। সবকিছু হিসাব করেই যে মেসি আটলান্টিকের পাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে রাজি হয়েছেন, সেটি সহজেই অনুমেয়।

চুক্তিতে থাকছে মালিক বনে যাওয়ার শর্তও : ক্লাবের নির্ধারিত বেতন, অ্যাডিডাস-অ্যাপলের লাভের অংশ তো থাকছেই। ইন্টার মিয়ামির সঙ্গে মেসির চুক্তিতে থাকছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত- মেসি চাইলে ভবিষ্যতে এমএলএসে কোনো ক্লাবের মালিকানা কিনতে পারবেন বা নতুন কোনো ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। ২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে লস অ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সিতে যোগ দেওয়ার সময় ডেভিড বেকহামের চুক্তিতেও এই শর্ত রাখা হয়েছিল। সেই সুবাদেই বেকহাম আজ ইন্টার মিয়ামির মালিক। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটির সভাপতিও ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক। 

যে কারণে ইন্টার মিয়ামিতে মেসি : অর্থের বিষয়টি তো আছেই। মেসি ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেওয়ার পেছনে আরও কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন, ‘বিশ্বকাপ জিতেছি আর বার্সেলোনাতেও যেতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে ফুটবলে ভিন্ন রূপে বাঁচতে এবং দৈনন্দিন জীবনটাকে ভিন্নভাবে উপভোগ করতে এমএলএসে যাওয়াটাই সঠিক মনে হয়েছে আমার। পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে চাই।’ কারণ আছে আরও দুটি। প্রথমত কম পরিশ্রমে বেশি আয়ের। ইউরোপে খেলা মানেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম, তুলনায় অর্থ কম। বিপরীতে এমএলএসের মতো বাইরের লিগগুলোতে অর্থ বেশি, পরিশ্রম কম। তাছাড়া মেসি ইন্টার মিয়ামিতে খেলতে পারবেন নিজের বাড়িতে থেকেই।

ইন্টার মিয়ামির অবস্থান : ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটির মূল মালিক বেকহাম। প্রতিষ্ঠার বছর থেকেই এমএলএসে খেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে এমএলএস (মেজর লিগ সকার) মূলত পূর্বাঞ্চলীয় সম্মেলন ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সম্মেলন, এই দুই অঞ্চলে বিভক্ত। ইন্টার মিয়ামি পূর্বাঞ্চলীয় ইউনিটে খেলে। এই অঞ্চলে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে দলটির অবস্থান পয়েন্ট তালিকার ৬ নম্বরে। পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে যৌথ সম্মেলনে ইন্টার মিয়ামির অবস্থান ১২ নম্বরে!

পেলে-বেকেনবাওয়ারসহ যেসব কিংবদন্তি খেলেছেন এমএলএসে : যুক্তরাষ্ট্রের এই লিগ ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার তারকা ফুটবলারদের ‘বৃদ্ধাশ্রম’ হিসেবে খ্যাত ছিল। বিশ্ব বরেণ্য ফুটবলারদের অনেকেই ক্যারিয়ারের পড়ন্তবেলায় আশ্রয় নিয়েছেন এই ‘বৃদ্ধাশ্রমে।’ নামি ফুটবলারদের মধ্যে প্রথম এখানে খেলতে আসেন ব্রাজিলের প্রয়াত কিংবদন্তি পেলে। ১৯৭৫ সালে ক্যারিয়ারের পড়ন্তবেলায় ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস ছেড়ে তিনি যোগ দেন নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবে। তখন অবশ্য এই লিগের নাম ছিল উত্তর আমেরিকান সকার লিগ। ১৯৯৩ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মেজর লিগ সকার। ফুটবলের রাজা পেলে দুই বছর নিউইয়র্ক কসমসে খেলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলের উন্নতি-প্রসারতা ও জনপ্রিয়তায় পেলের অবদান অনেক। পেলের পথ অনুসরণ করে পরে জার্মানির দুই কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্ড মুলার, ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ, ব্রিটিশ কিংবদন্তি জর্জ বেস্ট থেকে শুরু করে হাল শতাব্দীর ডেভিড বেকহাম, কাকা, জ্‌লাতান ইব্রাহিমোভিচ, গ্যারেথ বেল, ডেভিড ভিয়াদের মতো বিশ্ব তারকাও ক্যারিয়ারের সূর্য অস্তকালে নাম লিখিয়েছেন এমএলএসে। তাদের পথ অনুসরণ করলেন রেকর্ড ৭ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসিও।

সাগরের কোলে মেসির বিলাসী জীবনের নীড় : ভবিষ্যতে বিলাসী জীবন কাটানোর আশায় ২০২১ সালেই ফ্লোরিডার মিয়ামিতে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনে রেখেছেন মেসি। বাড়ি তো নয়, যেন মহাসাগরের কোলে নীল জলরাশির সঙ্গে সারাক্ষণ মিতালি-বন্ধনে আবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি! আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে, সানি দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্র উপকূলে সমুদ্রের নীল জলরাশিকে সম্মুখ করে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি বিলাসবহুল ভবনটির নাম ‘পোরশে ডিজাইন টাওয়ার।’ ২০১৭ সালে নির্মণ কাজ সম্পন্ন হওয়া ৬০ তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে মোট ১৩২টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, মেসি নিজের অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছেন নবম তলায়। ভবনের পুরোটাই কাচের দেয়াল। প্রতিটা অ্যাপার্টমেন্টরই তিন দিক থেকে সমুদ্রের মুগ্ধতায় মন ভেজাতে পারবেন বাসিন্দারা। প্রতিটা অ্যাপার্টমেন্টেরই কিচেন, ড্রয়িংরুম, ডাইনিং রুম, বেড রুম থেকেই সুমদ্রের মায়াবী লীলাখেলা উপভোগ করা যাবে। ভবনটির সবচেয়ে বড় বিস্ময়- অত্যাধুনিক গাড়ি পার্কিং লিফট। প্রত্যেক অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারাই তাদের গাড়ি লিফটের মাধ্যমে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যেতে পারবেন। ৬০ তলা ভবনের যে কোনো অ্যাপার্টমেন্টে যেতেই লিফটে সময় লাগবে মাত্র ৬০ সেকেন্ড!

মেসি অনেক আগেই ফ্লোরিডায় একটা বাড়ি কিনেছিলেন। বিলাসী জীবনের আশায় সেই বাড়িটি বিক্রি করে পোরশে ডিজাইন টাওয়ারে অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছেন। অ্যাপার্টমেন্টটি কিনতে তার খরচ হয়েছে ৭৫ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড বা ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। পাউন্ডের হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ১০৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ৬৩৩ টাকা এবং ডলারের হিসেবে ৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৩০০ টাকা মাত্র! মেসি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এই বাড়িতে থেকেই খেলবেন ইন্টার মিয়ামির হয়ে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //