বিশ্বকাপে বড় অঘটনের শিকার ব্রাজিল

আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ‘দ্য গ্রেট শো অন দ্য আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের কাতার অধ্যায়। কিন্তু সেই ফাইনালে নেই ফুটবলের দেশ, সর্বাধিক পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন, অন্যতম ফেভারিট দল ব্রাজিল।

কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে জাদুকর পেলের দেশ, বিশ্বের দামি ফুটবলার নেইমারের দেশ ব্রাজিলকে। শেষ আটে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তাদের হার সব বিবেচনায় এবারের বিশ্বকাপের বড় অঘটন। বিশ্বকাপ থেকে থেমে গেছে সাম্বা নৃত্য।

বাংলাদেশে ব্রাজিলের অগনিত ভক্ত রয়েছে। পেলের কারণে বাংলাদেশে আগে থেকেই বিশাল সংখ্যক সমর্থক ছিল। পরবর্তীকালে সক্রেটিস, জিকো, রোমারিও, রবার্তো কার্লোস, রোনাল্ডো নাজারিও, কাকা, রিভালদো, রোনালদিনহোদের অসাধারণ নৈপুণ্য এদেশে ব্রাজিলের সমর্থন আরও বাড়িয়ে দেয়।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিল ব্রাজিলের চেয়ে অনেক বেশি। অন্য দলগুলোর মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও স্পেনের প্রচুর সমর্থক  ছিল বাংলাদেশে। তবে এখন বাংলাদেশে ব্রাজিল ভক্তদের সংখ্যা আর্জেন্টিনা ভক্তদের প্রায় কাছাকাছি। এর কারণ, নেইমার।

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় নেইমারের দৃষ্টিনন্দন খেলা মন ভুলিয়ে দেওয়ার মতো। নেইমার যে কী ধরনের খেলোয়াড়, তা কোয়ার্টার ফাইনালে তার অসাধারণ ক্যারিশমা এবং চোখ ধাঁধানো গোলই প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। গোলরক্ষকসহ কয়েকজনকে কাটিয়ে বল জালে পাঠিয়ে নেইমার প্রমাণ করেন কেন তার বাজারমূল্য এত বেশি।

সারা বাংলাদেশে নেইমারের ১০ নম্বর জার্সি বিক্রি হয়েছে লাখ লাখ সংখ্যক। কিন্তু ব্রাজিল শেষ আট থেকে বাদ পড়ায় অনেকটা নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আনাচেকানাচে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেইমার ও ব্রাজিলের ভক্তরা হতাশায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বে কোটি কোটি ব্রাজিল ভক্ত রয়েছে। তারাও আজ গভীরভাবে শোকাভূত।

ফুটবল হচ্ছে ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় পেশা। বিভিন্ন দেশে শিশুরা একটু বুঝতে শিখলে কেউ চিকিৎসক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আইনজীবী, কেউ শিক্ষক, কেউ বিজ্ঞানী, কেউ আর্মি অফিসার, কেউ চিত্রশিল্পী, কেউ ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। অথচ, ব্রাজিলের শিশুরা বড় হতে হতে ফুটবলে চরমভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে তারা পেশা হিসেবে বেছে নেয় ফুটবলকে। ফলে এক ব্রাজিলে যত ফুটবল তারকা উঠে আসে সারা পৃথিবীতেও তত তারকা খেলোয়াড় পাওয়া মুশকিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবে রয়েছে ব্রাজিলের খেলোয়াড়। আর সেটা হঠাৎ করেই হয়ে ওঠেনি। বহু বছর আগে থেকেই ঢাকার মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স দলে ছিল ব্রাজিলীয় খেলোয়াড়।

সাম্প্রতিককালে বসুন্ধরা কিংস, সাইফ স্পোর্টিং, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ জামাল দলেও কমবেশি খেলছে ব্রাজিলের খেলোয়াড়। আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ফুটবল লিগ তো ব্রাজিলের খেলোয়াড় ছাড়া একেবারেই অচল। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগালের কমপক্ষে দেড়-দুইশ ক্লাবে খেলছে অগণিত ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়।

ইউরোপ ছাড়াও এশিয়ার জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় লিগের ক্লাবগুলোতে আমরা অনেক ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় দেখতে পাই। আমরা দেখতে পাই দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্ক লিগেও বহু ব্রাজিলীয় খেলোয়াড়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগের ক্লাবগুলোতেও রয়েছে ব্রাজিলের অনেক খেলোয়াড়। অর্থাৎ সারা বিশ্বেই রয়েছে ফুটবলের সঙ্গে ব্রাজিলের সম্পৃক্ততা বিশ্বকাপের শেষ আট থেকে ব্রাজিলের বিদায়টা তাই বলতে গেলে সারা বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের জন্য খুবই কষ্টকর। বিশ্বকাপের এবারের আসর শেষ হয়ে যাবে অচিরেই। কিন্তু ব্রাজিলীয় সমর্থকদের মনবেদনা থেকে যাবে বহু দিন।

ব্রাজিল ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ সালের বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে। আর রানার্সআপ,  তৃতীয় ও চতুর্থ হয়েছে ২ বার করে। অর্থাৎ গত ২১টি আসরে ব্রাজিল ১১টিতে হয় ফাইনালে উঠেছে কিংবা সেমিফাইনালে খেলেছে। বাকি আসরগুলোতেও তারা ছিল অন্যতম ফেভারিট। সেই ব্রাজিল এবার শেষ আট থেকেই বিদায় নিয়েছে। ফলে ব্রাজিলের বিদায়টা বড় অঘটন। ব্রাজিলের বিদায়ে বিশ্বকাপের আকর্ষণটা অনেকাংশেই হারিয়ে গেছে।

আসলে বিশ্বকাপের মূলপর্বে যারা অংশ নিতে কাতারে যায়, তারা কেউ কারও চেয়ে শক্তির বিচারে খুব পিছিয়ে নেই। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের জয়, জার্মানির সঙ্গে জাপানের জয়, কাতারের কাছে পর্তুগালের পরাজয়ের বিষয়গুলো সেই কথাই প্রমাণ করে। সবকিছু সত্য, তবে ব্রাজিলের শেষ আটেই বিদায়টা খুই পীড়াদায়ক। এবারের বিশ্বকাপে তাই ব্রাজিলের বিদায়টাকে সবচেয়ে বড় অঘটন বললে ভুল বলা হবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //