ম্যারাডোনাকে ছাড়াতে জিততেই হবে বিশ্বকাপ

১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক দিয়াগো ম্যারাডোনা। বলা যায়, প্রায় একক নৈপুণ্যে তিনি আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ট্রফি। উঠিয়েছিলেন ১৯৯০ সালের ফাইনালেও।

কিন্তু রেফারির এক বিতর্কিত পেনাল্টি সিদ্ধান্তে ম্যারাডোনার দল হেরে যায় জার্মানির কাছে। ফাইনালের পর রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যারাডোনার কান্না এখনো ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ে ভাস্বর। 

ম্যারাডোনা নেই। তিনি শুধু ফুটবল নয়, ছেড়েছেন এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া। কিন্তু তিনিই এখনো ‘আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর’। সাম্প্রতিককালে তার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে লিওনেল মেসির নাম। সর্বোচ্চ সাতটি ‘ব্যালন ডি’অর’ জয়ী মেসিকে ইতোমধ্যে অনেকেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে দাবি করছেন। তবে বিশ্বকাপ জয়ের প্রশ্নে মেসি পিছিয়ে থাকছেন স্বর্গীয় ম্যারাডোনার চেয়ে। 

২০১৪ সালের ফাইনালে উঠেও বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখা হয়নি মেসির। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত আসরের ফাইনালে আর্জেন্টিনার কপাল পুড়েছিল ‘পুরনো শত্রু’ জার্মানির কাছে হেরে। ‘গোল্ডেন বল’ জিতেও যে হারের স্বান্ত্বনা খুঁজে পাননি মেসি। ২০২২ সালে শেষবারের মতো তিনি লড়ছেন বিশ্বকাপ জয়ের অদম্য স্বপ্ন নিয়ে। মেসি নিজেও জানেন, একটি বিশ্বকাপ তাকে এনে দিতে পারে ফুটবলে অমরত্বের সন্ধান।

৩৫ বছরের মেসি কাতারে খেলছেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম আর শেষ বিশ্বকাপ। ইতোমধ্যে তার দেশ কেটেছে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। কাতারে দুর্দান্ত সময় কাটানো মেসি গড়ছেন একের পর এক রেকর্ড। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পেয়েছেন চলতি আসরে দ্বিতীয় ম্যাচসেরার পুরস্কার। আর নিজের ক্যারিয়ারের অষ্টম এবং ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

সাতটি বিশ্বকাপ ম্যাচে সেরা হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৩টি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন। পেছনে ফেলেছেন ২১ ম্যাচ খেলা ম্যারাডোনাকে। মেসি এখন ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার গোলের সংখ্যা ৯টি আর ম্যারাডোনার ৮টি। ১০ গোল নিয়ে শীর্ষে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা ।

বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতাও এখন মেসি। ২০০৬ আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৩৩ বছর বয়সে গোল করেছিলেন রবের্তো আয়ালা। এছাড়া চলতি বিশ্বকাপেই মেসি গড়েছেন সবচেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড় হিসেবে একই ম্যাচে গোল আর অ্যাসিস্টের রেকর্ড। মজার ব্যাপার, ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে গোল আর অ্যাসিস্টের রেকর্ডটিও মেসির নামের পাশে ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি মেসির জন্য ছিল মাইলফলক। এটি তার পুরো ক্যারিয়ারের হাজারতম ম্যাচ। ক্যারিয়ারে তার গোলের সংখ্যা ৭৮৯টি। আর আন্তর্জাতিক গোল ৯৪টি। সকারুজরা হচ্ছে মেসির ৩৪তম প্রতিপক্ষ যাদের বিপক্ষে গোলের দেখা পেয়েছেন ।

ক্যারিয়ার জুড়ে মেসির রেকর্ডের অভাব নেই। বরং ফুটবলের বেশিরভাগ রেকর্ড এখন হয় মেসি নয়তো রোনালদোর দখলে। শুধু ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়ে মেসি সর্বকালের অন্যতম সেরা হয়েই থেকে যাবেন, যদি না অন্তত একটি বিশ্বকাপ দেশকে এনে দিতে পারেন।

পেলে আর ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যেতে কিংবা তাদের পাশে বসতে মেসিকে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ জিততেই হবে। নয়তো এক সময় তিনি ইউহান ক্রুয়েফ আর ফেরেংক পুসকাসদের মতো ইতিহাসের ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবে থাকবেন। যারা সর্বকালের অন্যতম সেরা হয়েও কখনো ছুঁয়ে দেখতে পারেননি বিশ্বকাপ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //