এপারে পেলে ওপারে ম্যারাডোনা

বিশ্ব ফুটবলের দুই কিংবদন্তীর নাম পেলে ও ম্যারাডোনা। বয়সে বড় হলেও ব্রাজিলের পেলে বেঁচে থাকলেও আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বিশ্বকাপ প্রথমবার ম্যারাডোনাকে ছাড়া। আর পেলে থাকবেন আলোর পাশে। এপারে পেলে আর ওপারে ম্যরাডোনা। 

খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার কারণে পেলের ধারেকাছেও নেই ম্যারাডোনা। কিন্তু জনপ্রিয়তায় দুজনেই যেন খুব কাছাকাছি থাকেন। বিশ্বকাপ এলেই দুজনকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কোচ হিসেবে ২০০৬ সালে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে কোচিং করালেও সর্বোচ্চ সাফল্য পাননি। সব মিলিয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো পেলে-ম্যারাডোনাকে নিয়েও ফুটবল দুনিয়া বিভক্ত।   

পেলে এক ফুটবল সম্রাটের সাফল্যের ইতিকথা

বাস্কেটবল তারকা মাইকেল জর্ডানকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় মনে করেন অনেকেই। বক্সিংয়ে মোহাম্মদ আলীর কথা বললে চোখের সামনে ভেসে আসে নানা সাফল্যের ইতিকথা। ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল বিশ্বকাপের সময় জরিপ করে জানা গিয়েছিল, সেখানকার মাত্র ৩৬% মানুষ জানতো যে ফুটবল বলে একটা খেলা আছে, এর মাঝে ১০% মানুষ জানতো যে বিশ্বকাপ ফুটবল বলে একটা টুর্নামেন্টও হয়! অথচ ফুটবল সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষও পেলের নাম অন্তত শুনেছেন। ফুটবলে শুধু নাম নিতে হলে পেলের নামই আসবে সবার আগে। পরিসংখ্যানগতভাবে হয়তো পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু পেলের জায়গায় আরেকজনকে বসানো অনেকটাই অসম্ভব। যেমন করে তার রেকর্ডও ভাঙ্গা সম্ভব নয়। খুব অল্প লেখা আর পরিসরে পেলের সম্পর্কে বলাটা খুব কঠিন কাজ। পেলে পরবর্তী যুগে তাকে ছাড়ানো সম্ভব এমন খেলোয়াড় এসেছিলেন মাত্র ৪ জন, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রোনালদো লিমা, রোনালদিনহো আর লিওনেল মেসি। অনেকে জিনেদিন জিদান, ইয়োহান ক্রুয়েফ আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নাম আনবেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের কোনো পর্যায়েই এই তিনজন সম্পর্কে বলা হয়নি যে, তারা পেলেকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন কিংবা ছাড়াতে পারবেন।

পেলে সর্বশেষ বিশ্বকাপ খেলেছেন ১৯৭০ সালে, এতদিন পরেও বিশেষজ্ঞদের যেকোনো তালিকায় প্রথম নামটা তারই থাকে। যার মধ্যে ২০০০ সালে IFFHS (International Federation of Football History & Statistics) এর তত্ত্বাবধানে সাবেক খেলোয়াড় আর সাংবাদিকদের ভোটে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়। তাতে ১৭০৫ ভোট পেয়ে পেলে প্রথম আর ১৩০৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকেন ইয়োহান ক্রুয়েফ।

‘কালো মানিক’ খ্যাত ব্রাজিলের পেলেকে ফুটবলের সম্রাট হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে জয়ী এক যোদ্ধার নামও তিনি। ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েস শহরের এক বস্তিতে ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর তার জন্ম। দরিদ্র পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে অভাব অনটন মেটানোর জন্য ছেলেবেলাতেই পেলেকে চায়ের দোকানে কাজ নিতে হয়। রেলস্টেশনে ঝাড়ু দেবার পাশাপাশি কিছুদিন জুতা পরিষ্কার করার কাজও করেছিলেন। ‘এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্তো’ নামে তার পরিচিতি। নামটা রাখা হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের নামের সাথে মিল রেখে। ফুটবলে সহজাত প্রতিভা থাকলেও ফুটবল কেনার টাকা ছিল না বিধায় মোজার ভেতরে কাগজ ঠেসে বানানো ফুটবলে চালাতেন অনুশীলন। অনেকটা উপরওয়ালার দয়াতেই হয়তো মাত্র ১৫ বছরের পেলের উপর নজর পড়ে সান্তোসের গ্রেট ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর। সান্তোস ক্লাবে শুরু করে সান্তোসের ‘বি’ টিমে খেলার সুযোগ পান। এখানেও প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে এক বছরের মাঝে সান্তোসের মূল দলে নিজের জায়গা করে নেন তিনি।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবল লিগে সান্তোসের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন। সেবারের দেশটির লিগে তার পারফরম্যান্স এতটাই নজরকাড়া ছিলো যে, ব্রাজিল সরকার আইন করে পেলেকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল! রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মতো জায়ান্টরা তাকে দলে নিতে চাইলেও সরকারের অনুরোধে ইউরোপিয়ান লিগে পেলের আর কোনো দিন খেলা হয়নি। পেলের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানোর জন্য ‘পেলে ল’ নামে একটি আইন ২০০১ সালে ব্রাজিল ফুটবলে দুর্নীতির বিচারের জন্য কার্যকর করা হয়! অসাধারণ ব্যক্তি হিসেবে খেলা ছাড়ার পর কখনো ইউনিসেফের বিশেষ দূত, কখনো জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত, কখনো বা ব্রাজিলের ‘বিশেষ’ ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন তাদের সাহায্য করতে। একবার পেলে নাইজেরিয়ায় গিয়ে চলমান গৃহযুদ্ধ ৪৮ ঘণ্টার জন্য বিরতি পড়েছিল। রুপালী পর্দাতেও পেলেকে ১৯৬৯ সালে টেলিভিশনের ধারাবাহিক ওস এস্ত্রানহোতে প্রথম দেখা গিয়েছিল। হলিউডের ছবি এসকেপ টু ভিক্টোরিতে মাইকেল কেইন, সিলভেস্টার স্ট্যালোনদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক যুদ্ধবন্দীর চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা করিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বিংশ শতাব্দীর ১০০ জন মানুষের তালিকায় জায়গা পান পেলে।

পেলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

ব্রাজিলের জার্সি গায়ে পেলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে ব্রাজিল ২-১ গোলে হারলেও মাত্র ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে গোল করে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গোলদাতার রেকর্ড গড়েন। পুরো ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৯২টি হ্যাট্রিক, ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭৭ গোল), ক্যারিয়ারে ১৩৬৩ ম্যাচে ১২৮৩ গোল, এই পরিসংখ্যানগুলো তার অর্জনের খুব সামান্যটুকুই বোঝাতে পেরেছে। পেলের যুগে ইউরোপিয়ান নন এমন খেলোয়াড়দেরকে ‘ব্যালন ডি অর’ সম্মাননা দেয়ার কোন নিয়ম ছিল না। ২০১৬ সালে ব্যালন ডি অর এর ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৯৫ সালের আগ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান নন এমন খেলোয়াড়দেরকেও বিবেচনায় এনে নতুন করে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এখানে পূর্ববর্তী ৩৯টি ব্যালন ডি অর এ ১২টিতে পরিবর্তন হয়। ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬১, ১৯৬৩, ১৯৬৪ আর ১৯৭০ এর ব্যালন ডি অর জয়ী ঘোষণা করা হয় পেলের নাম! তিনটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র খেলোয়াড় পেলে, এই একটি কথাই তার অর্জনকে অনেক উপরে তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই যেমন ফেভারিট হিসেবে যাত্রা করে ব্রাজিল, ঠিক তেমনি সবগুলো বিশ্বকাপ খেলা একমাত্র দলও তারা। কিন্তু পেলে আসার আগে ২৮ বছর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল। পেলে যাওয়ার পরেও পরবর্তী বিশ্বকাপ জেতে দীর্ঘ ২৪ বছর পরে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, চারটি বিশ্বকাপে ১৪টি ম্যাচ খেলে ১২টি গোল আর ১০টি অ্যাসিস্ট, দুটি ফাইনালে গোল করার রেকর্ড, চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বকাপে গোল করার রেকড, এসব কীর্তি অন্য কোন ফুটবলারেরই নেই।

বিশ্বকাপে পেলে

১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্রাজিলের মতো দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলাটা হেলাফেলা করার মতো বিষয় নয়। সেই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ে একটি অ্যাসিস্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের বিরুদ্ধে পেলের একমাত্র গোলে তার দেশ সেমিফাইনালে উঠে। আর এই গোল করে বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ (১৭ বছর ২৩৯ দিন) গোলদাতা হিসেবে রেকর্ডবুকে নাম লেখান। এরপর সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ (১৭ বছর ২৪৪ দিন) হ্যাটট্রিকদাতার রেকর্ডও করেন পেলে! ফাইনালেও দুই গোল করে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পাশাপাশি সিলভার বল ও সিলভার বুট দুটোই জেতেন পেলে। এছাড়া সেই বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান তারকার পুরষ্কারও জেতেন তিনি। ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ  জেতেনি কোন ফুটবল গ্রেট। ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে পেলে তৎকালীন সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি নিয়ে খেলা শুরু করার পর আশা করা হচ্ছিল এটা পেলের টুর্নামেন্ট হবে। কিন্তু চেকোস্লোভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ে বাকি টুর্নামেন্টই মিস করেন। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলকে ধরা হয় তৎকালীন সময়ের সেরা দল। গ্যারিঞ্চা, গিলমার, সান্তোস, জোয়ারজিনহো, টোস্টাও, গারসেন সাথে পেলে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে পেলে গোল করে জয় পেলেও বুলগেরিয়ান ডিফেন্ডারদের বর্বরোচিত ফাউলে ইনজুরিতে পড়ে পরের ম্যাচ মিস করেন। হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে হেরে যায়। কোচ ভিসেন্তে ফিওলা পর্তুগালের বিপক্ষে পেলেকে নামালেও তিনি পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। সেই ম্যাচটাকে পেলেকে এত বেশি পরিমাণ ফাউল করা হয় যে, মাঠ থেকে তো ইনজুরড হয়ে বের হনই, সেই সাথে ম্যাচের পর তিনি অবসরের ঘোষণাও দেন। পরবর্তীতে ইউসেবিও এবং পর্তুগালের পুরো টিম মেম্বার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিলের কাছে ক্ষমা চায়। অভিমান ভুলে ১৯৬৯ এর শুরুতে পেলেকে আবার দলে নেয়া হয়। বাছাইপর্বে তিনি ৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৬টি গোল করেন। এই টুর্নামেন্টে পেলে মূলত প্লে-মেকার হিসেবে খেলার ফল হিসেবে ফাইনাল ম্যাচে ইতালির বিরুদ্ধে প্রথম গোলটিসহ পুরো টুর্নামেন্টে ৪টি গোল আর ৭টি অ্যাসিস্ট করে সেই বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে নেন তিনি। সাথে বিশ্বকাপ জিতে জুলেরিমে কাপটাকে চিরতরে নিজেদের করে নেন ব্রাজিল। ক্যারিয়ারের শুরু শেষের বিশ্বকাপের শিরোপা জেতেন পেলে।

অন্যান্য ক্লাব দল ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট

কোপা আমেরিকা কাপ খেলেন ১৯৫৯ সালে। ৭টি দেশের টুর্নামেন্টে শেষ ম্যাচে সমীকরণটা ছিল অনেকটা এরকম, টুর্নামেন্ট জিততে হলে ব্রাজিলকে ম্যাচ জিততে হবে, আর আর্জেন্টিনার কেবল ড্র করলেই চলবে। ১-১ গোলে ড্র হওয়া সেই ম্যাচে ব্রাজিলের পক্ষে গোল করা পেলে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও পুরো টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৮ গোল করেন এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জয় করেন। ক্লাব ফুটবলেও পেলে অসাধারণ খেলেছেন। দলগতভাবে ক্লাবের হয়ে শিরোপা জিতেছেন ২৬টি, যার মধ্যে ঘরোয়া লিগে ১১ বার সর্বোচ্চ স্কোরার হওয়ার কৃতিত্ব তার অর্জনের সামান্যটুকুই বোঝাতে সক্ষম। পেলের ক্লাব সান্তোসের হয়ে কোপা লিবার্তোদোরেস জেতেন ১৯৬২ ও ১৯৬৩ সালে।

জনগণের হৃদয়ের সর্বকালের সেরা ডিয়াগো ম্যারাডোনা

দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা নামটি ফুটবলপ্রিয় জনগণের হৃদয়ে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবেই থাকবে। একজন সুপারস্টার ফুটবলার হিসেবে মানুষের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। ফুটবলের ইতিহাসে অল্প কিছু খেলোয়াড় আছেন যারা কিনা দক্ষ বিচারক আর সাধারণ জনগণ দুই দিকের ভোটেই প্রথম দিকেই নিজেকে রাখতে সমর্থ হন। এরকম একজন খেলোয়াড় হচ্ছেন ম্যারাডোনা। গত শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করার সময় ফিফা শুরুতে সিদ্ধান্ত নেয়, ইন্টারনেটে ভোটিংয়ের মাধ্যমে সেরা নির্বাচন করা হবে। সেভাবে ভোটিংও নেয়া হয়। তবে ফলাফল দেখে ফিফা কমিটি চোখে একরকম সর্ষে ফুল দেখে। ম্যারাডোনা ভোট পান ৫৩.৬%, পক্ষান্তরে পেলে পান মাত্র ১৮.৫৩%! এরপরই ফিফা আরেকটি কমিটি গঠন করে, যেখানে ভোট গ্রহণ করা হয় তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও ম্যাগাজিনের পাঠক আর জুরি বোর্ডের সদস্যদের কাছ থেকে। এই নির্বাচনে অবশ্য পেলে প্রথম হন। শেষ পর্যন্ত গত শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের দুটো পুরষ্কার আলাদাভাবে দেওয়া হয়; একটি জনগনের সেরা, আরেকটি বিশেষজ্ঞদের সেরা। অনলাইনের ভোটিং আসলে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায় তখনই, যখন দেখা যায় ম্যারাডোনা-পেলের পরের ক্রমগুলো হচ্ছে ইউসেবিও, ব্যাজিও, রোমারিও, ভ্যান বাস্তেন, রোনালদো লিমা। এছাড়া ক্রুয়েফ আছেন ১৩ নম্বরে, ডি স্টেফানো ১৪ নম্বরে, প্লাতিনি ১৫ নম্বরে।

যে জায়গার ফলাফল আপনাকে দেখাবে ক্রুয়েফ, ডি স্টেফানো কিংবা প্লাতিনির চেয়ে ব্যাজিও কিংবা রোমারিও ভালো, সেই ভোট গ্রহণ অনেকের কাছেই সন্তোষজনক কিছু হবেনা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শতাব্দীর সেরা নির্বাচন করার মতো এত বড় বিষয়ে এই দিকগুলো ফিফা কমিটি আগে খেয়াল করল না কেন, কেন নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হলো। ম্যারাডোনাই বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড়, যিনি কিনা দুই বার ট্রান্সফার ফি’র রেকর্ড গড়েছেন, তখন কিছুটা ধারণা করা হয়তো সম্ভব। ম্যারাডোনার পরে এই রেকর্ড আছে শুধুমাত্র আর একজনের, তিনি রোনালদো লিমার। ম্যারাডোনাকে জানতে ‘ম্যারাডোনা কে ছিলেন?’ আজকের যুগের সেরা খেলোয়াড় মেসি অথবা রোনালদোকে যদি মালাগায় (স্প্যানিশ লিগের একটা দল) খেলতে দিয়ে বলা হয়, দলকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করাতে হবে, তাহলে কি সেটা তাদের জন্য সম্ভব হবে? রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বার্সেলোনাকে টপকিয়ে কাজটা করা মোটামুটি অসম্ভবই বলা যায়। পেলের মতোই ম্যারাডোনার জন্ম বুয়েন্স আয়ার্স প্রদেশের লানুস শহরের পলি ক্লিনিকো এভিতা হাসপাতালে। ১৯৬০ সালে ৩০ অক্টোবর জন্ম তার। দরিদ্র পরিবারে তিন কন্যা সন্তানের পর তিনিই প্রথম পুত্র সন্তান হিসেবে পৃথিবীতে আসেন। ১০ বছর বয়সে তার খেলা নজরে পড়ে যায় এক স্কাউটের। তারপর তিনি সুযোগ পান আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দলে। ১২ বছর বয়সে বলবয় হিসেবে ম্যারাডোনা ম্যাচের অর্ধবিরতির সময় দর্শকদের বল নিয়ে কারিকুরি দেখিয়ে মুগ্ধ করতেন। মিডফিল্ডে খেলেও তিনি পাঁচবার আর্জেন্টিনার প্রিমিয়ার ডিভিশনের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।

এরপর ১৯৭৯ সালে যুব বিশ্বকাপ জেতেন আর্জেন্টিনার হয়ে। যুব বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও হন। এই সফলতা তাকে ১৯৭৯ সালের সেরা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতিয়ে দেয়। এছাড়া ফিফা থেকেও সেই বছরের দক্ষিণ আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও অর্জন করেন। পরের বছরেও দক্ষিণ আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয় করেন। তবে এসব পুরস্কার জেতার কারণে কিন্তু ম্যারাডোনা পুরোপুরি ‘গ্রেট’ নন। বর্তমান যুগের অনেক ফুটবলপ্রেমির ধারণা, ম্যারাডোনা গ্রেট কারণ তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। আসলেই কি তাই? ম্যারাডোনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সেই ১৯৮৬ সালে। এরপর বিশ্ব আরো ৭টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল দেখেছে, এদের মাঝে ৭ জন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও দেখা হয়ে গেছে। তারপরেও কেন তাদেরকে ম্যারাডোনার সমতুল্য বলা হয় না, সেই প্রশ্নও রয়েছে? বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া অবশ্যই অনেক বড় বিষয়, কিন্তু এটাই সবকিছু মূল্যায়ন করার মানদণ্ড নয়। মুলারের জার্মানির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর বেলের ওয়েলসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গুরুত্ব নিশ্চয়ই একরকম না।

বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা

বয়স কম খাতায় ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ খেলা হয়নি দিয়াগো ম্যারাডোনার। বিশ্বসেরার আসরে খেলতে তাই ৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে এই ফুটবল গ্রেটকে। সদ্যই বার্সেলোনায় যোগ দেয়া ম্যারাডোনার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটাও খেলে নু ক্যাম্পে। কিন্তু বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকলেও ম্যারাডোনা প্রত্যাশিত পডারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। পরের দুই খেলায় হাঙ্গেরি আর স্যালভাদরকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা পরের রাউন্ডে ওঠে। যার মধ্যে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচে ম্যারাডোনা দুটো গোলও করেন। কিন্তু পরের পর্বে ইতালি আর ব্রাজিলের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের বিপক্ষে আবার ম্যারাডোনা লাল কার্ড দেখেন। দ্বিতীয় বিশ্বকাপে খেলেনে ১৯৮৬ সালে। ইতিহাস বলছে, বিশ্বকাপেই খুব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি তারকার আবির্ভাব হয়েছিল। ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার; ব্রাজিলের জিকো, সক্রেটিস; ফ্রান্সের প্লাতিনি; জার্মানির রুডি ভয়েলার, লোথার ম্যাথিউস, এদের প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দেশের সর্বকালের সেরা একাদশে অনায়াসে সুযোগ পেয়ে যাবেন। কিন্তু এদের সবাইকে ছাপিয়ে ম্যারাডোনা দুর্দান্ত খেলতে থাকেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার ফকল্যান্ডের যুদ্ধ খেলার আবহটাকে ভিন্নরকম আবহ তৈরি করে। সেই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যায় যখন ম্যারাডোনা হাত দিয়ে বল স্পর্শ করার পর সেটি গোল হয়। এই গোলটিই ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে পরিচিতি পায়।

তবে এই বিতর্ক তিনি দূর করে ফেলেন মিনিট চারেক পরেই আরেকটি অনন্য সাধারণ গোল করে। মাঝমাঠে বল দখলে নিয়ে ম্যারাডোনা ইংল্যান্ডের গোলপোস্টের দিকে ঘুরে গিয়ে দৌড়ান মাঠের অর্ধেকেরও বেশি অংশ, এভাবে পাঁচ জন ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষককে কাটিয়ে গোল করেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। আর এই গোলটি গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গোল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এরপর সেমিফাইনালে আরো দুটি গোল করে একক কৃতিত্বে ম্যারাডোনা ফাইনালে তুলে নেন আর্জেন্টিনাকে। ফাইনালে তাকে ডাবল মার্কিংয়ে রাখায় গোল করতে না পারলেও তারই বাড়িয়ে দেওয়া পাসে আর্জেন্টিনার পক্ষে জয়সূচক গোল করেন বুরুচাগা। পুরো টুর্নামেন্টে পাঁচ গোলের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ৫টি অ্যাসিস্ট করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে নেন ম্যারাডোনা। প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার ১৪টি গোলের ১০টিতেই তার অবদান ছিল। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ১৯৯০ এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ছিল ভাঙাচোরা দল। প্রথম পর্বে গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থেকেও কোনোরকমে দ্বিতীয় পর্বের টিকেট পায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় পর্বে গিয়ে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে।

সবাই জানতো, ম্যারাডোনাকে আটকাতে পারলেই আর্জেন্টিনা শেষ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৮০ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে দুজনকে কাটিয়ে তিন জন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ম্যারাডোনা যখন ক্যানিজিয়াকে পাস দেন, তখন ক্যানিজিয়ার সামনে গোলকিপার বাদে আর কেউ ছিলেন না। মূলত বাম পায়ের খেলোয়াড় হলেও, ম্যারাডোনা ক্যানিজিয়ার যে গোলে সহায়তা করেন, তা ডান পায়ে করেছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোস্লাভিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়েই সেমিতে উঠার পর একমাত্র দল হিসেবে সবকটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠা ইতালিকে হারিয়ে জিতে যায় টাইব্রেকারে! সেই ম্যাচের পর ফাইনালে জার্মানি ছিল দলগত বিচারে আর্জেন্টিনা থেকে যোজন যোজন এগিয়েছিল। অথচ সেই জার্মানিকেও কিনা জিততে হলো বিতর্কিত পেনাল্টির মাধ্যমে। আর সেই ম্যাচ সরাসরি দেখা অনেকই বিশ্বাস করেন, ট্রাইবেকারে গেলে হয়তো আর্জেন্টিনাই জিতে যেতেন। সে ম্যাচে হেরে গিয়েও পুরো পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমী মানুষের চোখে হিরো বা নায়ক হয়ে যান ম্যারাডোনা। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা খেলেন ১৯৯৪ সালে। কিন্তু শেষটা আর মনের মতো হয়নি। ১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলায় কলম্বিয়ার কাছে ৫-০ গোলে হারার পর অবসর ভেঙে ৯৪ এর বিশ্বকাপে ফিরে এসে ম্যারাডোনা চমক দেখান। প্রথম দুই ম্যাচে আর্জেন্টিনা অনায়াসে জয় পায়। কিন্তু ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে বিদায়টা বেশ বিবর্ণ হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেন ম্যারাডোনা।

ক্লাব ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা

ম্যারাডোনা ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু হয় আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে। সেখানে ১৬৭টি খেলায় ১১৫টি গোল করেন নিজেকে প্রমাণ করেন। এরপর তিনি চলে যান দেশসেরা বোকা জুনিয়র্সে। এখানে তিনি লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। এখান থেকে ১৯৮২ সালে ম্যারাডোনা স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনায় যোগ দেন। তবে এই ক্লাবে তিনি সর্বোচ্চ সফলতা পাননি। এখানে তিনি গোড়ালির ইনজুরিতে পড়ার পাশাপাশি হেপাটাইটিসের সাথেও তাকে লড়াই করতে হয়। এত প্রতিকূলতার মাঝেও ম্যারাডোনা বার্সেলোনার হয়ে ৫৮ ম্যাচে ৩৮ গোল করেন। বার্সার হয়ে শেষ মৌসুমে মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য লিগ শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। তবে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে জেতার পাশাপাশি একটা স্প্যানিশ সুপার কোপাও জেতেন তিনি। কিন্তু বার্সার হয়ে ম্যারাডোনার কৃতিত্ব আসলে অন্য একটি জায়গায়। ১৯৮৩ সালের ২৬ জুন বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদের খেলায় বিশ্ব নতুন আর ভিন্ন এক জিনিস দেখতে পায়। বার্সা রিয়ালের মাঠে গিয়ে তাদেরকে হারায়, তবে এটি ম্যাচের হাইলাইটিং পয়েন্ট না। ম্যাচে ম্যারাডোনা একটি গোল করেন। সেটিও বিশেষ কিছু নয়। বিশেষ কিছু হচ্ছে, গোলটা তিনি কীভাবে করলেন? মাঝ মাঠ থেকে বল পাওয়ার পর তার সামনে ছিল কেবল গোলকিপার। গোলকিপারকে কাটিয়ে নেওয়ার পরে ফাঁকা পোষ্ট পেয়েও তিনি গোল করেননি! গোলটা করেন রিয়ালের আরেকজন এসে তাকে আটকানোর চেষ্টা করার পর! শেষ পর্যন্ত ১৯৮৪ সালে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন ম্যারাডোনা।

ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলি কখনোই ইতালির শীর্ষ ক্লাবগুলোর একটি ছিল না। ম্যারাডোনা আসার আগে কখনো লিগ শিরোপাও জিততে পারেনি তারা। ১৯৬৮ এবং ১৯৭৫ সালে রানার্সআপ হওয়াই তখন পর্যন্ত তাদের সেরা সাফল্য ছিল। তবে ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে তারা চলে যায় পয়েন্ট তালিকার ১২ নম্বর পজিশনে। মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য রেলিগেশন থেকে বেঁচে যায় ক্লাবটি। এরকম এক ক্লাবে ম্যারাডোনার মতো খেলোয়াড়ের আগমন কিছুটা বিস্ময়েরই। প্রথম মৌসুমে ম্যারাডোনা ১৪ গোল করলেও দুর্বল ডিফেন্সের কারণে নাপোলি লিগে ৮ম হয়। এর পরের মৌসুমে ম্যারাডোনা দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১টি গোল করেন, সাথে নাপোলি উঠে আসে লিগ টেবিলের ৩ নম্বরে। পরের মৌসুমে নাপোলি জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসে। বিশ্বকাপজয়ী ম্যারাডোনাও দলকে নিয়ে নতুন ভাবে নামেন মাঠে। আর এই মৌসুমেই নাপোলি লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়, যা তাদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথম। এছাড়া ম্যারাডোনা থাকাকালীন তারা আরো একবার লিগ জেতে। একটি কোপা ইতালিয়া, উয়েফা কাপ আর একটি ইতালিয়ান সুপারকোপাও জেতে তারা। নাপোলিতে ৭ মৌসুম খেলে মাত্র ৫টি ট্রফি জয়কে আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ অর্জন মনে হতে পারে। বিস্ময়কর পরিসংখ্যান হচ্ছে যে, ম্যারাডোনা থাকাকালীন যে দু’বার নাপোলি লিগ শিরোপা জিতেছে, সেটাই তাদের একমাত্র অর্জন হয়ে রয়েছে। নাপোলি তাদের ইতিহাসে সর্বমোট ১০টি মেজর শিরোপা জিতেছে, যার ৫টিই ম্যারাডোনার আমলে। আর নাপোলির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ম্যারাডোনাই! 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //