মাঠের বাইরে বাংলাদেশের পরাজয়

অবশেষে আফগানিস্তানের কাছে পরাজিত হতে হলো বাংলাদেশকে। তবে এটি মাঠে নয়, মাঠের বাইরে। 

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের খেলার হোম ভেন্যুতে এখনো তিনটি ম্যাচ বাকি রয়েছে জামাল ভূঁইয়ার দলের। অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশ যেখানে চাইছিল তিনটি ম্যাচের সবকটিই নিজেদের মাঠে খেলতে, সেখানে বেঁকে বসে আফগানরা। করোনাভাইরাসের অজুহাতে বাংলাদেশে এসে খেলার বিষয়ে শুরু থেকেই ‘না’ করে আসছিল। 

বাংলাদেশ এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) কাছে চিঠি দিলেও তারা কোন উত্তর দেয়নি। উল্টো আফগানিস্তানকে বুঝিয়ে বাংলাদেশে আনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যা বিশ্ব ফুটবলে বিরল ঘটনাই বলা যায়। 

অন্যদিকে, ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার চাইছিল নিজেদের মাটিতে বাছাইপর্বের বাকি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠানের। তাই সবশেষে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশটির কথাই ফলপ্রসূ হলো।

তবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বকাপ বাছাই নয়, ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলার প্রস্তুতি শুরু করেছে। নেপালের আমন্ত্রণে দেশটিতে একটিতে তিন জাতির ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে যাবে জেমি ডে’র শীষ্যরা। এখানে এএফসিও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি! নয়তো ৯ মার্চ রাতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে চিঠি দেয়া হলেও মেলেনি কোনো উত্তর। ২৫ মার্চ সিলেটে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজনের সবকিছু একরকম চূড়ান্তই ছিল। চিঠিতে ম্যাচটি আয়োজন নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়েছিল এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটির কাছে। হোটেলের পাশাপাশি বিমান, অনুশীলন মাঠসহ যা কিছু প্রয়োজন সবকিছু চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছিল; কিন্তু আফগানরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা বাংলাদেশে আসবে না। দেশটির কাছ থেকে এমন কথা শোনার পরও বাফুফে এএফসির অবস্থান জানতে চিঠি দিলেও তার কোনো জবাব পায়নি। বাফুফে মনে করেছিল তারা খুব দ্রুতই একটা জবাব পেয়ে যাবে; কিন্তু সেটা আর হয়নি।

তবে ফিফা আগের নিয়মে এখন আর চলছে না। নয়তো ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আসতে চাইছিল না। বাফুফে অস্ট্রেলিয়াকে আনিয়েছিল। গৌরব অর্জন করেছিল সাংগঠনিক লড়াইয়ে জেতার। আর এখন আফগানিস্তান মুখের ওপর বলে দিচ্ছে তারা আসবে না। তাদের পেছনে কাতার, ওমানের মতো দেশ শক্তি হিসেবে কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আফগান ফুটবলাররা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসবে। তাই নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে ম্যাচ খেলতে চায় না তারা। এমন খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে টালবাহানা করছে আফগানরা। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছেন, ‘আফগানিস্তানকে আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশে খেলতে আসতে রাজি নয়। বিষয়টিকে আমি দেখছি অন্যভাবে। এখানে হয়তো পেছন থেকে কোনো শক্তি কাজ করছে। এটি ফিফার নিয়মের মধ্যে পড়ে না, তবুও আফগানিস্তান সেটাই করছে’।

এদিকে, কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে আগামী ২৩, ২৫ ও ২৭ মার্চ ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ মার্চ ফাইনাল দিয়ে শেষ হবে নেপালের আমন্ত্রণে খেলা এই আসর। এরই মধ্যে গত ১৩ মার্চ জাতীয় দল ডাকা হয়েছে। ১৪ মার্চ থেকে ২৪ জন ফুটবলারের অনুশীলন শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। এখন বাংলাদেশের পুরো নজর নেপালের এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে। সেখানে জামাল ভূঁইয়াকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ দল যাবে। বাংলাদেশের প্রস্তুতি শুরুর পরদিনই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে ছাড়বে ক্লাব কলকাতা মোহামেডান। গত ডিসেম্বরে কাতারের বিপক্ষে খেলা কোচিং স্টাফরা দলের সাথে থাকবেন, এই নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। অস্ট্রেলিয়ান ফিটনেস কোচ ইভান ও গোলরক্ষক কোচ সরাসরি নেপালে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। 

এদিকে কাতারেই বাংলাদেশের শেষ তিন ম্যাচ খেলার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের শেষ তিনটি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলার কথা থাকলেও সেটি আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এখন বাংলাদেশকে ‘ই’ গ্রুপের বাকি তিনটি ম্যাচ খেলতে হবে কাতারে। সেন্ট্রালাইজড ভেন্যুতে ভারত ও ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলাটা আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজনের আশা করেছিল; কিন্তু এএফসির সিদ্ধান্তে এখন আর এই ম্যাচটিও হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। 

নতুন সূচি অনুযায়ী বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচটি ৩ জুন অনুষ্ঠিত হবে। ৭ জুন ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার পর ১৫ জুন শেষ ম্যাচ খেলবে ওমানের বিপক্ষে। ৫ ম্যাচ থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশের জন্য এটা বড় একটা দুঃসংবাদ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কোচ জেমি ডেও নিজের মধ্যে হতাশা লুকাতে পারেনি। 

তবে নেপালের এই টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের একটা প্রস্তুতি হয়ে যেতে পারে। যেহেতু এএফসি সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাই না খেলে কোনো উপায় নেই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //