রোনালদোর প্রতিপক্ষ এবার করোনা

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে এখন গনগনে রোমাঞ্চ। ঠাসা সূচির চাপে ক্লাবগুলোর চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা। খেলতে হচ্ছে একের পর এক ম্যাচ। ফুটবলাররাও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে যাচ্ছে; কিন্তু সেই রোমাঞ্চ গায়ে মাখতে পারছেন না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। 

ফুটবল অন্তঃপ্রাণ রোনালদোকে ফুটবলের রোমাঞ্চের কথা বাদ দিয়ে থাকতে হচ্ছে গৃহবন্দি। ফুটবলের ভাবনা মাথা থেকে উড়িয়ে দিয়ে তাকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে করোনাভাইরাসের সাথে। সর্বদা চেষ্টা করতে হচ্ছে কীভাবে শরীরে বাসা বাঁধা করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

গত সপ্তাহে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন জুভেন্টাসের পর্তুগিজ সুপারস্টার। পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছেন তিনি। পজেটিভ হওয়ার পর থেকেই আইসোলেশনে রয়েছেন রোনালদো। করোনা থেকে বাঁচার যুদ্ধটা তিনি করে যাচ্ছেন ইতালির তুরিনোতে নিজের বাসায়।

বর্তমানে তুরিনোতে নিজ বাসাতেই গৃহবন্দি তিনি। তুরিন পাহাড়ের পাদদেশে গাছ-গাছালি ও সুনসান নীরবতা বেষ্টিত আলিশান বাড়িটির পুরো একটি ফ্ল্যাটে একা থাকছেন তিনি। তার ৪ সন্তানকে নিয়ে বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ থাকছেন অন্য আরেকটি ফ্ল্যাটে। একই বিল্ডিংয়ে থাকলেও বান্ধবী ও সন্তানদের সঙ্গে সশরীরে যোগাযোগ বন্ধ। কথা-বার্তা যা বলার বলছেন ফোনে, ইন্টারনেটে, ভিডিওর মাধ্যমে।

করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই দুনিয়াজুড়ে ভক্ত সমর্থকদের কাছ থেকে ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা, সান্তনার বার্তা পেয়ে আসছেন রোনালদো। কঠিন এই সময়ে তিনি নিজেও ভক্ত-সমর্থকদের কথা ভোলেননি। বরং করোনা-যুদ্ধে জিততে হলে কী কী করতে হবে, কী কী খেতে হবে, কী খাওয়া যাবে, ফ্ল্যাটবন্দি থেকে তার পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ দিয়েছেন ভক্তদের। 

প্রাণপ্রিয় ভক্তদের পরামর্শ তিনি দিয়েছেন নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই। করোনা থেকে বাঁচতে তিনি যা যা করছেন, খাচ্ছেন-ভক্তদের উদ্দেশে তার একটা পূর্ণাঙ্গ ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টের মাধ্যমে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ভক্তদের মূল্যবান উপদেশটা দিয়েছেন। সাথে সুইমিংপুলের শান্ত পরিবেশে নিজের একটা হাসিখুশি ছবিও পোস্ট করেছেন পর্তুগিজ এ তারকা।

করোনা-যুদ্ধে জিততে হলে সবার আগে দরকার মানসিকভাবে শক্ত থাকা। ভয় পেলে চলবে না। মনে সাহস রাখতে হবে, আমি করোনাকে জয় করবই। পাশাপাশি শারীরিকভাবে শক্তিশালী থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি। কারণ শরীরে শক্তি না থাকলে কোনো কিছুই করা যায় না। তা শারীরিক এবং মানসিকভাবে রোনালদো কতটা শক্ত সেটা দুনিয়া জানে। বাধা যত বড়ই হোক, ভেঙে পড়েননি করোনার ভয়েও। বরং ‘করোনাকে জয় করব’ প্রতিজ্ঞা নিয়েই যুদ্ধটা করে যাচ্ছেন তিনি।

শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর পরিমাণে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাচ্ছেন। বিশেষ করে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ডি’ যুক্ত খাবার বেশি খাচ্ছেন। মানে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল এবং সবুজ শাক-সবজিই তার খাদ্য তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে। শরীর সুস্থ-সতেজ রাখতে মূল খাবারের পাশাপাশি দিনে অন্তত ৬ বার হালকা খাবার খাচ্ছেন। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার স্পর্শও করছেন না। পান করছেন প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি। আলো নিভিয়ে রুমটাকে পুরো অন্ধকার ও স্তব্ধ-নীরব বানিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা করে ঘুমাচ্ছেন।

করোনাকে জয় করতে যা যা করণীয়, পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী সবই করছেন একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। লক্ষ্য একটাই, যে করেই হোক করোনাকে জয় করে দ্রুতই ফিরতে হবে মাঠে।

ভক্তদেরও উপদেশ দিয়েছেন এসব করার। উপদেশ বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমি প্রচুর পরিমাণে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাচ্ছি। প্রচুর পরিমাণে কার্বনসহ, ফলমুল এবং শাক-সবজি খাচ্ছি। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলছি।’ পরের প্যারায় লিখেছেন, ‘আমি জানি, করোনার সর্বোচ্চ ধাপ পর্যন্ত আমাকে যুদ্ধ করতে হবে। সেই ধাপগুলো পেরোতে হলে আমাকে অবশ্যই শারীরিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী থাকতে হবে। শরীরের শক্তি বৃদ্ধির জন্য তাই মূল খাবারের পাশাপাশি দিনে ৬ বার হালকা খাবার খাচ্ছি।’

করোনা হলে কোনোভাবেই পেট খালি রাখা যাবে না। পেট খালি পেলেই আপনাকে পেয়ে বসবে করোনা। এটা জানা আছে বলেই রোনালদো ঘনঘন খাচ্ছেন। ভক্তদেরও সেই পরামর্শ দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //