ডায়েটের অন্তরালে

ইন্টারনেটের সুবাদে ‘ডায়েট’ শব্দটার সঙ্গে সবাই বেশ পরিচিত। ওজন কমাতে সকলেই ডায়েট করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা আছে। আমরা বেশিরভাগই মনে করি, ডায়েট অর্থ- না খেয়ে থাকা বা ফাস্টিং। কিন্তু ডায়েট অর্থ না খেয়ে থাকা নয়, খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন। পৃথিবীর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে। কাজের চাপে মানুষ খাদ্য গ্রহণের নিয়ম পরিবর্তন করছে। এ কারণে মুটিয়ে যাচ্ছেন অনেকে, আবার অনেকের স্বাস্থ্যগত অবনতি ঘটছে। 

আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের যে পদ্ধতি তাতে বেশিরভাগ মানুষেরই পেট, কোমর, আর নিতম্ব অঞ্চলে মেদ জমে যায়। আমাদের দেশে সাধারণত সকালের খাবার খাওয়া হয় খুবই হালকা ধরনের, দুপুরে আর রাতে ভারী খাবার খাওয়া হয়। এতে বয়স পঁচিশের কোটা ছাড়ানোর আগেই অনেকে মুটিয়ে যায়। এই স্থূলতায় ভোগাদের আবার বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিহীনতা দেখা যায়। তাই ওজন কমাতে পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন বা ডায়েট করার পরও অনেক সময় সেটি কাক্সিক্ষত ফলাফল দেয় না। এর কারণ কী? সেগুলো হলো:

প্রথমেই নিজে নিজে খাবার কমানো: মনে রাখবেন, এটি ডায়েট কাজ না করার অন্যতম একটি কারণ। নিজে নিজে ডায়েট শুরু করে কম খাবার খেয়ে বেশি দিন থাকা যায় না। কিছু ওজন কমার পরও ওজন আবার আগের জায়গায় চলে যায়। 

একই ডায়েট দিনের পর দিন অনুসরণ করা: নিজের অথবা ডায়েটেশিয়ানের করে দেওয়া একটা ডায়েট যদি দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়। এতে ত্বক ও চুলের বড় ক্ষতি হতে পারে। এই ক্ষতি মানতে না পেরে অনেকেই ডায়েট ছেড়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে যান। 

শারীরিক দুর্বলতা: ডায়েটের আগে শারীরিক পরীক্ষা, বিশেষ করে পুষ্টি পরিমাপকগুলো পরীক্ষা না করিয়ে নিলে অথবা অতিরিক্ত কম পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার কারণে অল্প কিছু ওজন কমার পরই অনেকে দুর্বল হয়ে যায়। তখন শরীর আর সায় দেয় না ডায়েট করার। 

ডায়েটের ফলোআপ না করা: ডায়েটের পরামর্শ নিয়ে একটি ডায়েট এক মাস মানার পর ফলোআপের জন্য অনেকেই আর ডায়েটেশিয়ানের কাছে যান না। এতে ওজন কিছুটা কমে থেমে যায়। আর এতে নিরাশ হয়ে অনেকে ডায়েট ছেড়ে দেন। 

অন্যের সঙ্গে ডায়েট নিয়ে আলোচনা: অনেক সময় দেখা যায়, ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট শুরু করার পর ব্যক্তিকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। এতে যে ডায়েট করে সে লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়তে পারে এবং ডায়েট করা বাদ দিয়ে আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারে।

মানসিক চাপ: এমন অনেকেই আছেন যাদের মন খারাপ হলে বেশি বেশি মুখরোচক খাবার খেয়ে ফেলেন। কিন্তু এর ফলে বেশি ক্যালরিযুক্ত হয় শরীরে। যদি সন্দেহ হয় যে আবেগে পড়ে বেশি খাওয়া ডায়েটকে লাইনচ্যুত করছে, তাহলে স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবার বিবেচনা করুন, অন্যথায় মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন।

নিয়মিত শরীরচর্চা না করা: যখন কেউ ডায়েট করেন, এমন অনেকেই আছেন মনে করেন যে তাকে আর হয়তো শরীরচর্চা করা লাগবে না। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ডায়েটের সঙ্গে শরীরচর্চা যদি নিয়মিত না করা হয় তাহলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরচর্চার মধ্যে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে নিয়মিত হাঁটা। এতে ওজন কমে। নিয়ন্ত্রিত খাবারের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত হাঁটলে ওজন কমানোর পর আবার ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //