ক্যানসার ঠেকাতে বিশেষ ফল-সবজি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসেবে, ২০১৮ সালে বিশ্বের ৯৬ লাখ মানুষ ক্যানসারে প্রাণ হারিয়েছেন। আর প্রত্যেক বছর নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছে তিন লাখ মানুষ।

কিন্তু প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছুটা রদবদল করতে পারলে দূরে সরিয়ে রাখা যায় ক্যানসারকে। কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, অন্যদিকে বেশ কিছু খাবার ক্যানসারের বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

প্রাচীন ধারণা, নিরামিষ খাবার শরীর সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। পুষ্টি বিজ্ঞানীরাও আজ সে কথা মানেন। 

এ বিষয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ বলেন, উদ্ভিজ্জ খাবারে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ফাইটোকেমিক্যালস। টাটকা ফল সবজিতে থাকা এই সব উপকারি উপাদান ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্যানসার রুখে দিতে পারে। 

তবে বোতলবন্দি ফলের রস বা  প্যাকেটজাত মিষ্টির রসে ভরা ফল না খেয়ে টাটকা তাজা ফল ও সবজি খাওয়া উচিত। পেয়ারা, আম, জাম, আপেল, কলাসহ যেকোনো টাটকা ফলমূল ও বিট, কুমড়া, টমেটো, ঢেঁড়সের মতো সবজি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে সাহায্য করে।

ক্যানসার প্রতিরোধসহ আমাদের সামগ্রিক ভাবে ভাল রাখতে সাহায্য করে এমন কিছু ফল ও সবজি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। অবশ্য তালিকা মিলিয়ে নিয়ম করে প্রত্যেক দিনই যে এসব সবজি ও ফল খেতে হবে তা নয়, চেষ্টা করবেন রোজের খাবারের তালিকায় মৌসুমি সবজি ও ফল রাখার।

কলা: বছরভর পাওয়া যায়। অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে রোজ কলা খাওয়া যেতে পারে। সেলেনিয়ামের সক্রিয় যৌগের এক শক্তিশালী উৎস এই ফল। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করার পাশাপাশি ক্যানসার কোষ বিনষ্ট করতে পারে।

আপেল: দাম বেশি হলেও সারা বছরই এই ফল বাজারে মিলবে। এতে আছে প্রোসায়ানিডিনস, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে কার্যকর।

ডালিম বা বেদানা: এতে রয়েছে ফলিফেনল নামে এক যৌগ, যা ক্যানসার সৃষ্টকারী কোষ ধ্বংস করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।  

কালো আঙুর: এই ফলে আছে রেসভেরাট্রল, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে সামগ্রিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

কমলা: একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্যানসার ফাইটার। কমলালেবুর কোয়ায় থাকা ২-হাইড্রক্সিফ্ল্যাভনয়েড (২-এইচএফ) স্তন ও ফুসফুস ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে কার্যকর ভূমিকা নেয়। তবে কমলার রস নয়, কোয়া চিবিয়ে খেলে তবেই ২-হাইড্রক্সিফ্ল্যাভনয়েড পাওয়া যাবে। সারা বছর কমলা পাওয়া যায় না। তাই যেকোনো লেবু, তা সে বাতাবি লেবু হোক বা পাতিলেবু, খেলে সামগ্রিক ইমিউনিটি জোরদার হয়।

টমেটো: লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের মহাশত্রু । তাই রোজকার ডায়েটে টমেটো রাখতে ভুলবেন না।  

ব্রকোলি: বিদেশি এই সবজি এখন দেশেও সুলভ। এই সবুজ রঙের সবজিটি ইনডোল-৩ কারবিনোল নামক ফাইটোকেমিক্যালসের এক অন্যতম ভাণ্ডার। এই উপাদানটি ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে।

বিট: এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা সায়ানিন। যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

নটে শাক: যার বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যামারান্থাস ভিরিডি‌ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যানসাররোধক। বিট বা ব্রকোলি না পেলেও সুলভে বাজারে লাল বা সবুজ নটে শাক পাবেন। সপ্তাহে তিন/চারদিন এই শাক খেলে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হবে।  

তবে শুধু ক্যানসাররোধক খাবার খেলেই চলবে না, সিগারেটসহ তামাককে জীবন থেকে বিদায় জানাতে হবে। ওজন ঠিক রাখতে নিয়ম করে শরীরচর্চা করা জরুরি, মন ভাল রাখতেই হবে। মানসিক চাপ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। 

মন ভাল রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যানসার ও নভেল করোনাভাইরাসসহ অসুখ-বিসুখ দূরে সরিয়ে রেখে সুস্থভাবে বাঁচুন। -আনন্দবাজার পত্রিকা

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //