জামদানি শাড়ির যত্নআত্তি

জামদানিকে বলা হয় মসলিনের উত্তরসূরি। এটি আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। জামদানির কারিগর ও নারীরা এ ঐতিহ্যকে বয়ে বেড়াতে ভীষণ ভালোবাসে। সেই সাথে যেকোনো উৎসবে জামদানি শাড়িকেই প্রধান প্রাধান্য দেন অনেকে। এমন নারী  খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার একটিও জামদানি শাড়ি নেই। 



বাজারে এখন অনেক ধরনের জামদানি শাড়ি পাওয়া যায়। এর ভিড়ে রয়েছে অনেক নকল শাড়ি। এগুলো খুব নিম্নমানের। তাই শাড়ি কেনার আগে ভালো করে যাচাই করে নিন। আসল জামদানি চেনার জন্য শাড়ির দাম, সূতার মান ও  কাজের সূক্ষ্মতার দিকে খেয়াল করতে হবে। 

একটি আসল জামদানি শাড়ির বুনন হয় নিখুঁত। একজন কারিগর যদি দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা শ্রম দেন, তাহলে শাড়ি তৈরি করতে এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই আসল জামদানির দামও হয় একটু বেশি। সাধারণত এর দাম ৩০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। 


জামদানি শাড়িতে অনেক জ্যামিতিক নকশা থাকে। এ নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয় নানা ধরণের ফুল, লতাপাতা, কলকাসহ নানা ডিজাইন। তেরছা, পানসি, ময়ূরপঙ্খী, বটপাতা, করলা, জাল, বুটিদার, জলপাড়, দুবলি, ডুরিয়া, বলিহার, কটিহার, কলকাপাড়, পান্না হাজার ডিজাইনগুলো বেশি প্রচলিত। 


জামদানি শাড়ি যেমন ঐতিহ্যের অংশ, তেমনি  এ শাড়ির চাই বেশ যত্ন। জামদানি শাড়ি ধোওয়া যায় না। এতে শাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সাবধানে রাখতে হয়। 

যেভাবে জামদানি শাড়ির যত্ন নেবেন

১. জামদানি শাড়ি কিনে প্রথমেই শাড়ির পাড়ে ফলস লাগিয়ে ফেলুন। তাহলে শাড়ি পরে হাঁটার সময় পাড় ভাঁজ হয়ে যাবে না। আবার কুচিও সুন্দর হবে। শাড়ি নষ্ট হবে না। 

২. অনেকে জামদানি শাড়ি খুব কম পরেন। বেশিরভাগ সময় তুলে রাখেন। এতে শাড়ি নষ্ট হয় দ্রুত। জামদানি শাড়ি ভালো রাখতে হলে একে গুরুত্ব দিতে হবে। মাঝে মাঝে পরতে হবে। 

৩. জামদানি পরার পর রোদে শুকাতে দিন। আর আলমিরাতে তুলে রাখলেও কিছু দিন পর পর বের করে রোদে মেলে দিন। কড়া রোদে শুকালে শাড়ি ভালো থাকে। ভাঁজ পড়ে না। 

৪. অন্য শাড়ির মতো জামদানি ভাঁজ করা উচিত না। এমন কি মাঝখানে ভেঙে  হ্যাংগারেও ঝুলিয়ে রাখা উচিত না। যেহেতু এটি হাতের বুননের শাড়ি, তাই সুতা এদিক ওদিক হলেই শাড়ি ফেসে যেতে পারে। তাই জামদানির জন্য স্পেশাল ভাঁজ আছে।  

প্রথমে নরমাল শাড়ির মতোই দুই ভাজ দিবেন। এরপর একটা পাতালি করে ভাঁজ দিবেন। তারপর আবার মাঝখানে ভেঙে একটা ভাঁজ দিয়ে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন অথবা দুইপাশ থেকে ছোট ছোট ভাজ দিয়ে দোকানের মতো একটা আরেকটির ভিতর দিয়ে দিতে পারেন। 

৫. ছোট ভাঁজে আলমিরাতে তুলে রাখলে সাদা কাগজের প্যাকেটের ভিতর রেখে দিন। এতে শাড়িতে ফাঙ্গাসের দাগ পড়ে না। আবার কিছুদিন পর পর ভাঁজ পরিবর্তন করতে পারেন। 

৬. জামদানি শাড়ি কখনোই পানি দিয়ে ধোয়া যাবে না। সাবান পানি কিংবা পানিতে ধুলে এর সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে শাড়ি ময়লা হলে ভালো কোনো ড্রাইওয়াশে দিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে। 

৭. জামদানি শাড়ি অনেকদিন ব্যবহারের পর যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কাঁটা করতে দিন। কাঁটা করতে ১৫ দিনের মতো সময় লাগে। ভালো কারিগর বা তাঁতীর কাছে শাড়িটি নিয়ে গেলে ৪০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে তারা আপনার শাড়িটি কাঁটা করে দেবেন। এতে আপনার প্রিয় শাড়িটি আরো কিছুদিন ভালো থাকবে। 

৮. শাড়ির রঙ নষ্ট হয়ে গেলে আবার একটু ডিপ কালার করে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে শাড়িতে একই রঙের কাপড়, সুতা ও বুনন আছে কিনা। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //