পোশাকে স্বদেশ

দেশপ্রেম বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে। একজন বাঙালি হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করা দেশপ্রেমের চেতনার কিছুটা হলেও, তুলে ধরা যায় পোশাকে, মননে তথা গোটা সংস্কৃতিতে। সে ভাবনা থেকেই বিশেষ দিবসগুলোর থিম নিয়ে তৈরি হয় পোশাক, গহনা, গৃহসজ্জার উপকরণ।

আমাদের ফ্যাশন হাউসগুলো বিভিন্ন জাতীয় দিবসকে ঘিরে প্রতি বছর নিয়ে হাজির হয় লাল-সবুজের নানা ডিজাইনের পোশাক, যা এ প্রজন্মকে পোশাকের দিক থেকে করছে স্বদেশমুখী। ফলে তাদের ডিজাইনের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে দেশাত্ববোধের চেতনা। ফ্যাশনে কিভাবে দেশপ্রেম তুলে ধরা হয় তাই জানাচ্ছেন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের কর্ণধাররা 

বাহার রহমান (নিত্য উপহার)

পোশাকে লাল, সবুজ রঙের মিশ্রনের ট্রেন্ড বেশ কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। এখনও তার ক্ষীণ চেষ্টা চলছে। দেশীয় বুটিক হাউসগুলো স্বদেশি পোশাককে জনপ্রিয় করার জন্য সরকারিভাবে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পায় না। তাই তারা নিজেরাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই জন্য তারা বিভিন্ন উৎসবে পোশাকে দেশীয় ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলে, দেশের মানুষের বুকে দেশপ্রেম আরো প্রখরভাবে গেঁথে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও মানুষের বুকে দেশপ্রেম সব সময়েই ছিল, আছে ও থাকবে। তবে ফ্যাশনে দেশপ্রেম প্রকাশের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস, প্রশংসার দাবিদার বটে।

সম্প্রতি খাদি উৎসব হলো এটাও দেশের ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলারই প্রচেষ্টা। তবে শুধু লাল-সবুজ রঙ মানেই যে দেশপ্রেম এমনটাও নয়।

নাদিরা ইসলাম বৃষ্টি (কে ক্রাফট)

দেশের প্রতি ভালোবাসার অনুভবকে ফুটিয়ে তুলতেই বিজয় দিবসে আমরা কাপড়ে লাল সবুজ রং ব্যবহার করি। লাল-সবুজ রং দেখলেই আমাদের পতাকার কথা, দেশের কথা মনে পড়ে। এসব পোশাকে আমরা খাদি, জামদানিসহ দেশীয় কাপড় ব্যবহার করি।

আমাদের প্রকৃতি অনেক উজ্জ্বল। হলুদ, গেরুয়া রং আমাদের গ্রাম বাংলার রংকে রিপ্রেজেন্ট করে। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব অনুয়ায়ী আমরা বাংলা কবিতা, অক্ষর, শহীদ মিনার, পতাকা এরকম সিম্বল ব্যবহার করে মানুষকে দেশের প্রতি ভালোবাসার জন্য সম্পর্কিত করি।

অনেকে এসব সিম্বল সম্পর্কে জানে, তারা গর্ব অনুভব করে দেশকে ভালোবাসে বলে। আমরা পোশাকের সঙ্গে দেশপ্রেমকে এভাবে সংযোগ ঘটিয়ে থাকি। ১৯৭১ একটি নাম্বার। কিন্তু এটি শুধু একটি নাম্বার নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস।

তাই এই নাম্বারও আমরা দেশপ্রেমের সিম্বল হিসেবে পোশাকে ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারি। এসব সিম্বল নিয়ে আমরা অনেক রিসার্চ করে একেকটা কাজ করি। এগুলো মূলত আমাদের অনুভূতিগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা।

লিপি খন্দকার (বিবিয়ানা)

বিদেশি কাপড়ের আগ্রাসনে দেশীয় কাপড় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এতে দেশের যে তাঁতি শ্রমিক রয়েছে, তাদের জীবিকাও হুমকির মুখে। অনেক নারী এই দেশীয় কাপড় তৈরিতে সম্পৃক্ত। আমরা মূলত সবার স্বার্থের কথা চিন্তা করেই দেশীয় পোশাককে মানুষের মাঝে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সরকার এই দেশের এই ঐতিহ্যের দিকে নজর দিলে দেশীয় পোশাক খাত হারিয়ে যাবে না। বিদেশের কাপড় আমাদানিতেও সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ। ভারত কি করে। তারা দেশীয় পোশাক শিল্পে ভর্তুকি পর্যন্ত দেয়।

দেশীয় এই পোশাককে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছি। এর মধ্যে দেশীয় কাপড়ে দেশীয় সিম্বল, রং ব্যবহার করে দেশের প্রতি ভালোবাসার অনুভবকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।

শাহীন আহমেদ (অঞ্জনস)

বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব করার মতো যে বিষয়গুলো রয়েছে তা নিয়েই অঞ্জনস সব সময় কাজ করে। আমরা এবারের বিজয় দিবসে পোশাকের ডিজাইনের জন্য আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা থেকে মোটিভ নিয়েছি। এর আগে জাহানারা ইমামের বই থেকে একাত্তরের চিঠি থেকে লেখাগুলো নিয়ে তা আমাদের পোশাকে ফুটিয়ে তুলেছি।

নতুন প্রজন্মকে দেশের প্রতি আরো বেশি এক করার স্বার্থেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। এ ছাড়া পুরাতন রাজবাড়ির বিভিন্ন নকশা, বর্ণমালা আমরা ব্যবহার করেছি। এটা মূলত দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ থেকেই করা। এছাড়া আমরা কাপড় হিসেবে বেছে নেই দেশীয় কাপড় জামদানি তাঁতসহ দেশীয় কাপড়কে।

এমদাদ হক (স্টুডিও এমদাদ)

দেশপ্রেম থেকেই আমরা দেশীয় বুটিক হাউসগুলো চালিয়ে থাকি। দেশি কাপড় জামদানি, খাদি, কুষ্টিয়ার কাপড়সহ দেশীয় কাপড়ে দেশীয় ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলি। আমাদের যেহেতু বিনোদিত হওয়ার মতো খুব বেশি সুযোগ নেই। তাই স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারির মতো দিবসগুলোতে মানুষ পালন করে।

মানুষের মাঝে দেশপ্রেমের অনুভবকে আরও বেশি জাগিয়ে তুলতে ও দেশপ্রেমের প্রতি আরও বেশি একাত্ম করতেই আমাদের এইসব প্রচেষ্টা থাকে। এসব কারণেই দেশীয় বুটিক হাউসগুলো দেশীয় রং ও সিম্বল ব্যবহার করে। এসবের মাধ্যমে মূলত সময়টাকে উপস্থাপন করাটাই প্রধান বিষয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //