গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানাতে এবারে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারী যুক্তরাজ্য জুড়ে মিছিল শুরু করেন। বোমা হামলা বন্ধের দাবিতে পতাকা ও ব্যানার হাতে রাজধানীর রাস্তায় জড়ো হতে শুরু করেন হয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় নয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাজধানী ছাড়াও ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো, বেলফাস্ট এবং অন্যান্য শহরেও এসময় বিক্ষোভ দেখা যায়।
৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলার পর থেকেই তিন সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজা উপতক্যায় হামলা পরিচালনা করে আসছে। এতে ইসরায়েলের ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং ২২৯ জন হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় আছেন।
বিক্ষোভ দমনে ১ হাজার পুলিশ মোতায়েন লন্ডনে
অন্যদিকে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে গত তিন সপ্তাহান্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের প্রধান শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
গ্রেটার ম্যানচেস্টারের সামনে বিক্ষোভ
শনিবার (২৮অক্টোবর) বিকেলে গোল্ডেন জুবিলি ব্রিজের কাছে "গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন" এবং "ফিলিস্তিন মুক্ত করুন’’ শিরনামে ব্যানার ও প্লেকার্ড হাতে জনতা জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় "ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ কর’’, ‘’গাজা বোমাবর্ষণ বন্ধ কর" এবং "আমরা সবাই ফিলিস্তিনি" স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে লন্ডনের জনপদ।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা জর্ডান ও ভূমধ্যসাগরের কথা উল্লেখ করে ‘’ নদী থেকে সমুদ্র’’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন। যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারি সুয়েলা ব্রেভারম্যান এর আগে অবশ্য পুলিশ প্রধানের প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন, ইসরায়েলেকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত চলছে, তাই এমন বিক্ষোভের সময় সতর্ক থাকা উচিত। আর এ বিষয়ে ইসরায়েল ও বেশিরভাগ ইহুদি গোষ্ঠী একমত প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন এবং এর অন্যান্য কর্মীরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় স্লোগানে তারা "সমস্ত ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায়বিচারের অধিকার"’র বিষয়টি উচ্চারণ করতে থাকেন।
মিছিল চলাকালীন ক্রিফ এল আমরাউই নামের একজন আবেগতারিত হয়ে বিবিসিকে বলেন: "এইমাত্র মিছিল করে এসেছি, আমি কাঁদছি কারণ শিশুদের প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে। কেন? কেন তারা আরও হত্যা করতে চায়?"
আবদুল মাহফুদি তার সন্তানদের নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন: "আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিশুদের হত্যা বন্ধ করা। তাদের থামাতে হবে।"
এদিকে বিক্ষোভ দমনে লন্ডন জুড়ে এক হাজারেরও বেশি মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে হোয়াইট হলে এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার প্রতিবাদে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে আহত ওই পুলিশ কর্মকর্তা হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষোভকারীদের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা
জানা যায়, ডাউনিং স্ট্রিটের কাছে বিক্ষোভকারীদের সাথে ধাক্কাধাক্কি শুরু হওয়ার আগে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকের পাশপাশি ঘুষি এবং লাথি মারতে শুরু করে।
এদিকে স্কটল্যান্ডের ইয়ার্ড ট্রাফালগার স্কোয়ারে অপরাধের তকমা লাগিয়ে দুই মহিলাকে চিহ্নিত করার জন্য একটি আবেদন জারি করেছে স্কটল্যান্ড পুলিশ। এ সময় দেখা যায়, শনিবার পুলিশ ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভকারীদের জড়ো হতে বাধা দেয়। এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় এক্সে দেয়া এক পোস্টে পুলিশ বিভাগ জানায়, অফিসাররা পিকাডিলিতে জড়ো হওয়া একটি গোষ্ঠীর ওপর নজর রাখছিলেন যাতে কেউ বিশৃংখলা করতে না পারেন।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে ম্যানচেস্টারের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির বাইরেও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিপন্থী সমাবেশে অংশ নেন। এর আগে শুক্রবার মেয়র অ্যান্ডি বার্নহ্যাম "সব পক্ষের দ্বারা একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দেওয়ার জন্য" আন্তর্জাতিক এক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।
বিবিসি জানায়, প্রায় ৩ হাজার বিক্ষোভকারী বেলফাস্ট সিটি সেন্টারে একটি সমাবেশের জন্য জড়ো হয়েছিলেন, পরে যা রয়্যাল এভিনিউ ধরে সিটি হল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এ সময় গ্লাসগোতে ফিলিস্তিনি পতাকার একটি সমুদ্র চোখে পড়ে। যেখানে হাজার হাজার লোক জর্জ স্কোয়ারে সমবেত হয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।
সূত্র বিবিসি
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh