মিলান কুন্ডেরা যেদিন মারা গেলেন

মিলান কুন্ডেরা যেদিন মারা গেলেন, সেদিন দুম করে কয়েকটি স্মৃতি মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে আরম্ভ করল; মনে পড়ল, গবেষক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেবেশ রায় খুব তেতে উঠেছিলেন এই বলে যে, এত কুন্ডেরা, কুন্ডেরা করছেন কেন, কুন্ডেরা কি খুব বড় মাপের ঔপন্যাসিক! স্মৃতি যদি বিভ্রান্ত না করে থাকে, তা হলে বলতেই হবে, মস্ত বড় এক বাঙালি ঔপন্যাসিকের এই সমূল প্রত্যাখ্যান আমাকে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলেছিল; গভীর আগ্রহ নিয়ে ধাবিত হলাম কুন্ডেরার প্রতি। উল্টেপাল্টে দেখলাম তার বই। দেবেশ রায়ের বলা কথার বিপরীত কথাই মনে হলো আমার কাছে। দুই যুগেরও বেশি সময় আগে পড়েছিলাম কুন্ডেরার ‘দ্য জোক’। বাংলা অনুবাদে সেটি হয়েছিল ‘ঠাট্টা’। এটিই ছিল আমার প্রথম কুন্ডেরা পাঠ। 

আরও কয়েক বছর পরের ঘটনা। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পাঠ্যতালিকায় যুক্ত হলো কুন্ডেরার ‘দ্য আর্ট অব দি নভেল’ বইটির বাংলা অনুবাদ। ভাবতে অবাক লাগে, নিতান্ত অপ্রস্তুতভাবে ক্লাসরুমে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আমিই পড়িয়েছিলাম সেই বইয়ের কয়েক টুকরো। ই এম ফরস্টারের তরিকামতো কাহিনি, চরিত্র, প্রতিবেশ মিলিয়ে উপন্যাসের ময়নাতদন্ত করতে করতে আমরা তখন খুব ক্লান্ত। বিবশতার ঠিক মাঝখানে উপন্যাসের তত্ত্ব নিয়ে নতুন হাওয়ার ঝাপটা দিয়েছিলেন মিলান কুন্ডেরা আর দেবেশ রায়। 

বহু বছর ধরে মনে মনে অপেক্ষা করেছি- কুন্ডেরা বোধ হয় নোবেল পাবেন; কিন্তু নোবেল কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই কুন্ডেরাপ্রেমীদের বিরাগ করে দিয়ে পুরস্কার তুলে দিয়েছে অন্য কোনো ভাগ্যবানের হাতে। কুন্ডেরা বারবার তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছেন। কারও কারও স্বেচ্ছাচারী মত এই বলে তালে তাল ঠুকেছে, কমিউনিস্ট বিরোধিতার কারণে কুন্ডেরার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতেও পারে; কেননা পুঁজিবাদী বিশ্বে পুরস্কারও একটি পুঁজি। তাই কমিউনিজমবিরোধী লেখককে পুঁজিবাদীরা পুষ্পমাল্য দিয়ে বরণ করে নেবেই নেবে। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পত্ব লঙ্ঘনের; কুন্ডেরা সমাজতন্ত্রবিরোধী মত প্রচার করেছেন। প্রচারধর্মিতার কারণে শিল্পের অঙ্গহানি ঘটেছে। রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব কুন্ডেরাকে বহুমাত্রিক হতে দেয়নি। এসব তর্কের পাহাড় ডিঙিয়ে কুন্ডেরা উঠে গেছেন অনেক উঁচুতে, অগণিত পাঠকের মনের তালিকায় খোদাই করা আছে তার নাম। 

কুন্ডেরা যেদিন অনন্ত প্রস্থানের পথে চলে গেলেন সেদিন স্মৃতিগুলো হাতড়ে খানিকটা হাহাকার বোধ করলাম। যেন চলে গেলেন নিকট একজন; যার বই, চরিত্র, গল্প ব্যক্তি-জীবনের কোথায় যেন একটা রেশ রেখে গেছে। আমি এখনো মনে মনে এই প্রশ্নের জবাব খুঁজি, কুন্ডেরা আমার কেন ভালো লেগেছিল? কেন মনে হয় খুব কাছের কেউ? যাকে আমি দেখতে পাই, ভাবতে ভাবতে অনুভব করতে পারি; যেমন করে অনুভবের সীমানায় পেয়ে যাই ফ্রানস কাফকা কিংবা আলবেয়ার কামুকে। ‘ঠাট্টা’ পড়ার সময় ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারিনি- কেন ভালো লাগে? কিন্তু আজ এখন ভাবতে পারি, সম্ভবত স্মৃতির প্রতি চোরাটানই কুন্ডেরার উপন্যাসের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রধান কারণ। 

কুন্ডেরা স্মৃতি নিয়ে খেলেন, কথা বলেন, স্মৃতিকে উসকে দেন; স্মৃতির ভেতর দিয়ে জুড়ে দেন ইতিহাস। আমি সেই লুডভিককে খুঁজে ফিরি অনেক দিন পর যে ফিরে গিয়েছিল ফেলে আসা বাস্তুশহরে। ভালোবাসায় নয়, প্রবল ঘৃণায় লুডভিক ফিরে গিয়েছিল তার স্মৃতিলুপ্ত শহরে। ‘কেন এসেছি আমি?’- এই প্রশ্নের জবাবে লুডভিক যখন বলে, ‘হঠাৎ বুঝতে পারলাম এই শহরটাকে আমি তীব্রভাবে ঘৃণা করি। আমার মনে হলো এই তীব্র ঘৃণাবোধই আমাকে এখানে টেনে এনেছে’- তখন পাঠক হিসেবে আমার খুঁজতে ইচ্ছে করেছিল কী তার ঘৃণার উৎস। আমিও ছেড়ে এসেছি একটি শহর; ঘৃণা-আনন্দ-ভালোবাসা অথবা মায়া- কোনো কিছু দিয়েই যাকে স্পর্শ করতে পারি না। আবার প্রাণপণ ঘষে ঘষে স্মৃতিকে মুছে ফেলতেও পারি না। লুডভিকের স্মৃতি-বয়ানের সঙ্গে পথ চলতে চলতে আমাদের চলে যেতে হয়েছে দূরতম সেই সময়ে- চেক প্রজাতন্ত্রে যখন চলছিল কট্টর কমিউনিজমের প্রবল হাওয়া। সেই হাওয়ায় ডালপালা আর শেকড়সমেত উপড়ে পড়েছে লুডভিকের জীবন। 

প্রেমিকার সঙ্গে করা নির্দোষ একটি ঠাট্টার পরিণতি হিসেবে বদলে গিয়েছিল লুডভিকের স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ। রাজনৈতিক কট্টরবাদ ও চূড়ান্ত ক্ষমতা কখনোই মানুষের স্বাধীন সত্তাকে বিকশিত হতে দেয় না। তার একটি বড় প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়েছিল লুডভিক। চেকোস্লোভাকিয়ায় তখন প্রবেশ করেছে রুশ কমিউনিজম। ক্ষমতায় কমিউনিস্ট পার্টি; কিন্তু আধিপত্য বিস্তার করে আছে রুশ রাজনীতি। লুডভিক ঠাট্টা করে মার্কেটাকে লিখেছিল- ‘আশাবাদ হচ্ছে জনগণের আফিম। সুস্থ আবহাওয়া দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ট্রটস্কি জিন্দাবাদ।’ আর যায় কোথায়! লুডভিকের ডাক পড়ল পার্টি দপ্তরে, জেরার মুখোমুখি হতে হলো, বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে স্থান নিতে হলো ডিটেনশন সেন্টারে। পার্টি ঢুকে পড়েছে ব্যক্তিগত জীবনে, প্রেমিকার সঙ্গে করা খুনসুটিও হয়ে উঠেছে গভীরতর রাজনৈতিক ব্যাপার। যথার্থ ঠাট্টাই বটে। পুরো উপন্যাসে কুন্ডেরা তুলে ধরেছেন কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লুডভিকের ব্যক্তিক লড়াইকে। এক সময় নিজের জীবনকেই লুডভিকের কাছে মনে হয়েছে কেবলই ‘ঠাট্টা’। 

এই ঠাট্টার উৎসে আছে চেকোস্লোভাকিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ইতিহাস। এটি সেই দেশ- অস্ট্রীয়-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য থেকে যেটি স্বাধীন হয়েছিল ১৯১৮ সালে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে যার আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র ২০ বছর। ১৯৩৯ এর দিকে দেশটির ভেতর ঢুকে পড়েছে নাৎসি বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পুরোটা সময় কর্তৃত্ব চালিয়েছে জার্মানি। জার্মানির সহায়তায় অনুপ্রবেশ করেছে রাশিয়া। এ সময় সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সম্প্রসারণ ঘটেছে; কিন্তু সাধের সমাজতন্ত্র বয়ে আনতে পারেনি কোনো মিষ্টি ফল। যদিও রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন কমিউনিস্ট মন্ত্রীরা। স্ট্যালিনের যুগে তরুণ কুন্ডেরা নিজেও ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ১৯৪৮ সালে তিনি পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। বুকের ভেতর বাজনা বাজিয়েছে ভবিষ্যৎ শুভ পৃথিবীর স্বপ্ন; কিন্তু মাথা নুয়ে নতজানু ভঙ্গিতে মেনে নিতে পারেননি পার্টির সর্বময় ক্ষমতাকে। বরাবরই যুক্তি দিয়ে দলের সিদ্ধান্ত ও আদর্শকে বুঝতে চেয়েছেন; যার উপহার হিসেবে পার্টি থেকে পেয়েছেন বহিষ্কারাদেশ। যৌনতা ও আয়রনির কারণে পার্টি প্রশ্ন তুলেছে তার কবিতার বই নিয়েও। হয়তো এই কুন্ডেরাই লুডভিক আর জেরোমিলের বেশে ফিরে এসেছেন ‘ঠাট্টা’ ও ‘লাইফ ইজ এলজহয়ার’ উপন্যাসে। রাষ্ট্র ও রাজনীতি হাতে তুলে নিয়েছিল কুন্ডেরার জীবনের কর্তৃত্বও। তাই তাকে দেশান্তরী হতে হয়েছিল। 

দুই.
বিশ শতকের ইতিহাস যেন কর্তৃত্ববাদেরই ইতিহাস। বিপ্লব, মারণাস্ত্র, বিশ^যুদ্ধ, ফ্যাসিবাদ, ঠান্ডা লড়াই- একটির লেজুড় হয়ে জন্ম নিচ্ছিল অন্যটি। ইতিহাসের দিগন্তে তাকালে দেখা যায়, একই জিনিসেরই তিন রকম উৎসারণ হিসেবে জন্ম নিয়েছিল ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ, পুঁজিবাদী কর্তৃত্ববাদ আর সমাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ। 

রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষমতার বিকার ছড়িয়ে পড়েছিল ভুবনব্যাপী। কুন্ডেরা বেড়ে উঠেছেন বিশ শতকের এই উত্তুঙ্গ কোলাহলের ভেতর। তাই তিনি নিবিড়ভাবে পাঠ করেছেন এই পর্বটি। চেক অভিজ্ঞতা আর স্মৃতিগুলোকে তিনি ছুড়ে ফেলেননি অতীতের ঝুড়িতে। বরং সাফ-সুতরো করে দেখতে চেয়েছেন, কোথায় ছিলেন, কেমন ছিলেন। দ্য জোক, লাইফ ইজ এলজহয়ার, বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং- প্রতিটি উপন্যাসে কুন্ডেরা খুঁজে ফিরেছেন অতীত। মূলত খুঁজে ফিরেছেন নিজেকে। চেক, বোহেমিয়ার ইতিহাসের গর্ভে ঢুকে নিজেকেই হাতড়ে ফিরেছেন। পার্টি ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব তার মতো অনেককেই উৎখাত করেছিল, করেছিল নির্বাসিত। ‘লাইফ ইজ এলজহয়ার’-এর জেরোমিলকে মনে হয় কবি কুন্ডেরার দ্বিতীয় সত্তা। ‘দ্য জোক’-এর লুডভিকের সত্তাগত রূপান্তর যেন ‘বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’-এর মিরেক। 

‘বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ উপন্যাসে কুন্ডেরা রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি তৎপর, আরও বেশি উদ্দীপক ও সংবেদী। সন-তারিখের নথি খুলে উপন্যাসেই তিনি জানান, ‘১৯৩৯ সালে জার্মান সেনাবাহিনী বোহেমিয়ায় প্রবেশ করেছিল এবং চেক রাষ্ট্রটির জীবনযাত্রা থেমে গিয়েছিল। ১৯৪৫ সালে রুশ সেনাবাহিনী বোহেমিয়ায় প্রবেশ করেছিল এবং আরও একবার দেশটিকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র বলা হয়েছিল।’ রাশিয়া জার্মান বাহিনীকে উৎখাত করেছিল বলে জনগণ চেক কমিউনিস্ট পার্টিকে মনে করেছিল রাশিয়ার ‘বিশ্বস্ত শাখা’। আর সে কারণেই ‘১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনো রক্তপাত বা সহিংসতা ছাড়াই পাঁচ লাখ লোকের হাস্যধ্বনি ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা গ্রহণ করে।’ কিন্তু ফল কী হলো? রুশ আগ্রাসন বাড়তে থাকল। পার্টির ভেতর মুখ তুলল আদর্শিক দ্বন্দ্ব। দুই দশক পর ১৯৬৮ সালে নতুন স্বপ্ন সহযোগে দেখা দিল ‘প্রাগ বসন্ত’। কিন্তু ওই বছরই আগস্ট মাসের ২১ তারিখে বোহেমিয়ায় রাশিয়া পাঠিয়ে দিল ‘পাঁচ লাখ সৈন্যের এক বাহিনী’। আর তার পর, ‘প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এক লাখ কুড়ি হাজার চেক নাগরিক দেশ ত্যাগ করেছিল, যারা থেকে গিয়েছিল, তাদের প্রায় পাঁচ লাখ লোককে জোর করে চাকরি থেকে সরিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল দূর প্রান্তের জনবিচ্ছিন্ন ওয়ার্কশপগুলোতে, কারখানায়, ট্রাক চালাতে...।’ ধুলায় লুটিয়ে পড়েছে প্রাগ বসন্ত। ‘বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ উপন্যাসে কুন্ডেরা পাঠককে নিয়ে যান স্মৃতি ও স্মৃতিলুপ্তির গল্পে।

কুন্ডেরার উপন্যাস আমাদের শোনাতে থাকে সেই সময়ের গল্প, যে গল্প ব্যক্তির নিজস্ব, যে গল্প সমষ্টির, যে গল্প একটি অঞ্চলের আর সেই গল্পই হয়ে উঠেছে অঞ্চল-অতিক্রমী। ‘বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ পড়তে প্রিয় বাংলাদেশকে পেয়ে উচ্চকিত হয়ে উঠি আমরা; কুন্ডেরার ভাষায় ‘বাংলাদেশের রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞ’, ‘বাংলাদেশের আর্তনাদ’। শুধু তা-ই নয়, একটি অনুচ্ছেদের ভেতর প্রবেশ করেছে আলেন্দে হত্যাকাণ্ড, ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রাম, কম্বোডিয়ার গণহত্যা। ইতিহাসের একটি ঢেউ মুছে দিতে চেয়েছে আরেকটি ঢেউকে। আমরা কি ভুলে যাব এইসব ইতিহাস? স্মৃতি থেকে মুছে ফেলব? কুন্ডেরা স্মৃতির সন্তাপ দিয়ে ইতিহাসকে জাগিয়ে তোলেন।

প্রশ্ন জাগতে পারে- কুন্ডেরার রাজনীতি কী? কেন তিনি উল্টো পথে হাঁটলেন? কমিউনিস্ট শিবির থেকে তিনি কি স্থান নিয়েছেন রাজনৈতিক মতাদর্শের অন্য শিবিরে? প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নগুলোর জবাব রাজনৈতিক; কিন্তু একই সঙ্গে দার্শনিকও। কাফকা সম্পর্কিত লেখায় পরিস্ফুট হয়েছে কুন্ডেরার ভাবনা। তিনি কর্তৃত্ববাদী সমাজের নজির পেয়েছেন কাফকার লেখায়। কুন্ডেরা যেটিকে বলেছেন ‘কাফকান’। তার মতে কর্তৃত্ববাদী সমাজ ‘পাবলিক’ ও ‘প্রাইভেট’-এর সীমানা ভেঙে ফেলে; কর্তৃত্ববাদ চায় ‘গোপনতাবিহীন জীবন’-এর আদর্শ; যেখানে পার্টি অথবা রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের গোপন করার কিছু থাকবে না। কর্তৃত্ববাদের প্রচারে থাকে ‘এক বৃহৎ পরিবার’-এর ধারণা। এসব ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করতে জর্জ অরওয়েলকে লিখতে হয়েছিল ‘অ্যানিমেল ফার্ম (১৯৮৪)’-এর মতো উপন্যাস। কাফকা খোঁজ করেছিলেন আরও গভীর মর্মদেশের। আমলাতন্ত্র, বিচারব্যবস্থা আর কর্তৃত্ব যেখানে ব্যক্তিকে জানতে দেয় না শাস্তিপ্রাপ্তির কারণ। কুন্ডেরা বলছেন, কাফকার এই জগতের মতো করে আর কেউ আঁকতে পারেননি। রাষ্ট্র, পার্টি কিংবা জনতার উপস্থিতি কাফকার উপন্যাসে নেই। মানবসত্তাকে তিনি খুঁজেছেন দার্শনিকভাবে। 

কুন্ডেরার পরের উপন্যাসগুলো সত্তা সম্পর্কিত জিজ্ঞাসার জবাব। এই পর্বের বিষয় মানুষ, মানুষের অস্তিত্ব, সত্তার হয়ে ওঠা। তবে ব্যাপারটি এমন নয় যে, রাজনীতি পরিত্যক্ত হলো, উদ্ভব ঘটল দার্শনিকতার। দুটি মিলেমিশেই ছিল। তবু ‘আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’, ‘ইমমরটালিটি’ উপন্যাসে দর্শন পেয়ে গেল খানিকটা অগ্রবর্তী পথ। ‘আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’-এ পারমেনেদিস ও নিটশের জীবনবোধকে প্রশ্ন আকারে হাজির করেছেন; কোন জীবন কাম্য? ঘটনা বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার হালকা ভার, নাকি ভারী বোঝা? এই যদি হয় প্রশ্ন, জবাব তবে কী? পুরো উপন্যাসে কুন্ডেরা ছুটে বেড়িয়েছেন জবাবের পিছুপিছু।

তিন.
রাজনীতি বিষয়ে তৎপর কবি-লেখকদের সম্পর্কে একটি চলতি ধারণা হলো- তারা শিল্পের শিল্পত্বকে উপেক্ষা করে শিল্পবস্তুকে করে তোলেন রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মতাদর্শের প্রচারযন্ত্র। রাজনীতির সঙ্গে যদি দর্শন মেশে, তা হলে উপন্যাসকে অনেকে ভেবে বসেন দর্শনের কচকচি; কিন্তু কুন্ডেরার ক্ষেত্রে এই অভিযোগ খাটে না। কুন্ডেরা শিল্পত্বকে কড়ায়-গ-ায় বুঝে নিতে চেয়েছেন। ‘আর্ট অব দি নভেল’ তার শিল্প সচেতনার গভীর নিদর্শন। বিভিন্ন সময়ে উপন্যাস সম্পর্কিত বলা কথাগুলো একসঙ্গে জোড়া দিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘আর্ট অব দি নভেল’। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত এই বইয়ে সংকলিত কুন্ডেরার প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকার। বইটির চমকপ্রদ একটি অংশ হলো ৬৩টি শব্দের একটি অভিধান; কুন্ডেরা যে শব্দগুলোকে উপন্যাসে বারবার মুখ্যশব্দ হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যে শব্দগুলো তার উপন্যাসের নন্দনতাত্ত্বিক পরিসরকে ব্যাখ্যা করে ‘অভিধান’টি সেই শব্দসমূহের ভাষ্য।

উপন্যাস নামক আঙ্গিকটিকেই কুন্ডেরা পাঠ করেছেন ইতিহাস ও দর্শনের আলোয়। ইউরোপীয় উপন্যাসের উদ্ভব ও বিস্তারের ইতিহাস তিনি ছুঁয়ে গেছেন মগ্ন দৃষ্টিতে; ভেবেছেন উপন্যাসের মৃত্যু বিষয়েও। দার্শনিক প্রেক্ষাপটে উপন্যাসকে বুঝতে গিয়ে কুন্ডেরা বলেন, ‘বিয়িং অ্যান্ড টাইম’ বইয়ে হেইডেগার অস্তিত্ববাদী যেসব বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করেছেন- পশ্চিমা দর্শন এতকাল যা ছুঁয়ে দেখেনি, চার শতকের ইউরোপীয় উপন্যাস তা-ই প্রদর্শন করেছে। সারভেন্তেস ও তার সমকালীনরা দেখিয়েছেন অভিযানের প্রবণতা, রিচার্ডসন পরীক্ষা করতে শুরু করেছেন অনুভূতির ভেতর মহল, বালজাক আবিষ্কার করেছেন মানুষের ইতিহাসে নিহিত অস্তিত্ব, ফ্লবেয়ার উন্মোচন করেছেন দৈনন্দিন জীবনের অনালোকিত অঞ্চল, তলস্তয় জোর দিয়েছেন মানবীয় আচরণ ও সিদ্ধান্তের ওপর অযুক্তির অনধিকার প্রবেশের ওপর। সময়ের রহস্যভেদ করেছে ইউরোপীয় উপন্যাস; প্রুস্ত কাজ করেছেন পলায়নপর অতীত নিয়ে, অন্য দিকে জয়েস কাজ করেছেন বিস্তৃতিপ্রবণ বর্তমান নিয়ে। টমাস মানরে পরীক্ষা করে দেখেছেন মিথের ভূমিকা- দূরায়ত অতীত কী করে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের বর্তমানের কাজকে। কুন্ডেরা মনে করেন আধুনিক যুগের শুরু থেকেই নিরবচ্ছিন্ন ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপন্যাস মানুষকে সঙ্গী করেছে। এই রূপরেখা ধরেই তিনি ইউরোপীয় উপন্যাসের ইতিহাসকে পাঠ করেছেন। এ ধরনের পাঠকে তিনি বলেছেন তার ‘ব্যক্তিগত উপন্যাসের ইতিহাস’।

কুন্ডেরার ভাষ্যে মনে হয়, উপন্যাস হলো সত্তা সন্ধানের এক আঙ্গিক। ‘আত্ম’ কী? কীভাবে একে ধারণ করা যায়?- কুন্ডেরার দৃষ্টিতে এটি উপন্যাসের মৌলিক জিজ্ঞাসাসমূহের একটি। তবে তিনি নিজের উপন্যাসকে মনস্তাত্ত্বিক কিংবা দার্শনিক অভিধা দিতে নারাজ। স্পষ্টতই তিনি বলেছেন, তার উপন্যাস মনস্তাত্ত্বিক নয়। সাধারণত যে ধরনের নন্দনতাত্ত্বিক গুণের কারণে উপন্যাসকে মনস্তাত্ত্বিক বলে অভিধা দেওয়া হয় তার উপন্যাস রয়ে গেছে সেসব গুণের বাইরে। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক- মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে ‘ইন্টেরিয়র মনোলোগ’ থাকে; বাংলায় যেটিকে করা হয়েছে ‘অন্তর্লীন কথন’। কুন্ডেরার উপন্যাসে সেটি একদম অনুপস্থিত। পরিহাসের ছলে জয়েসের ‘ইউলিসিস’ উপন্যাসে ব্যবহৃত ইন্টেরিয়র মনোলোগ প্রসঙ্গে বলেছেন, ব্লুমের মাথায় জয়েস একটা মাইক্রোফোন লাগিয়েছিলেন; আর তা যেন ইন্টেরিয়র মনোলোগের ‘গোয়েন্দাগিরি’। সে কারণে আমরা জানতে পেরেছি ‘আমরা কী’; কিন্তু কুন্ডেরা মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে চান না। কৌতূহলী মন উদগ্রীব হয়ে জানতে চায়, নিজের উপন্যাসে কুন্ডেরা কী করেন? জবাবে বলেছেন, তিনি তুলে আনতে চান ‘অস্তিত্বকেন্দ্রিক সংকটের মর্মশাঁস’; ধারণ করতে চান ‘অস্তিত্বকেন্দ্রিক সংকটের সংকেত’। তার আগ্রহ আত্মর সূচনা ও পরিসমাপ্তির প্রতি। আত্ম এবং তার পরিচিতির অনিশ্চয়তা তাকে কৌতূহলী করে তোলে। ‘আনবিয়ারেবল অব লাইটনেস অব বিয়িং’ উপন্যাসের তেরেজা চরিত্রটি প্রসঙ্গে এভাবেই নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। 

উপন্যাসের চরিত্র প্রসঙ্গেও কুন্ডেরার ভিন্ন মত প্রবল। ক্রিস্টিনা স্যামন প্রশ্ন তুলেছিলেন কুন্ডেরা তার তৈরি করা চরিত্রগুলোর দৈহিক অবয়বের কোনো বর্ণনা দেন না বললেই চলে। চরিত্রের অতীত বর্ণনার প্রতি খানিকটা কৃপণ বলেও অভিহিত করেছিলেন ক্রিস্টিনা এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বয়ানের এই বিমূর্ত বৈশিষ্ট্য আপনার চরিত্রগুলোকে কম জীবন্ত করে তোলার ঝুঁকিতে ফেলে দেয় না?’ এই প্রশ্নের জবাবেও কুন্ডেরা ফিরে গিয়েছেন ইউরোপীয় উপন্যাসের অতীতে। প্রবেশ করেছেন কাফকা ও মুসিলের উপন্যাসে। ‘মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতা’র তিন ধরনের ‘অলঙ্ঘ্য আদর্শ’ তিনি দেখতে পেয়েছেন : এক. একজন লেখককে চরিত্র সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য প্রদান করতে হবে- চরিত্রের চেহারা, বলার ভঙ্গি কিংবা আচরণ প্রসঙ্গে; দুই. চরিত্রের অতীত বিষয়ে জানান দিতে হবে, কারণ অতীতেই নিহিত বর্তমান আচরণের মোটিফগুলো; তিন. চরিত্রের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে; লেখকের নিজস্ব বিবেচনা অদৃশ্য করে ফেলতে হবে, পাঠককে বিরক্ত করা যাবে না। কুন্ডেরা বলেন, মুসিল পাঠক ও লেখকের পুরনো চুক্তি ভেঙে ফেলেছেন। কাফকার ‘দ্য ক্যাসেল’ পড়ার অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, পাঠকের কল্পনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেখকের কল্পনাকে সম্পূর্ণ করে। চরিত্র তবে কী? কুন্ডেরা বলেছেন, ‘একটি চরিত্র জীবন্ত কোনো সত্তার অনুকরণ নয়। এটি হলো কল্পিত সত্তা। একটি নিরীক্ষামূলক আত্ম।’

চার.
নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগে- কুন্ডেরা কি তাহলে উপন্যাস বিষয়ক কোনো তত্ত্ব-কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন? ‘আর্ট অব দি নভেলে’ বক্তব্যগুলো কি কোনো ‘তাত্ত্বিক বয়ান’? কিংবা কথাসাহিত্য চর্চাকারীর সরল স্বীকারোক্তি? কুন্ডেরা জানিয়েছেন, মোটেও তা নয়। তিনি মনে করেন, প্রত্যেক ঔপন্যাসিকেরই উপন্যাসের ইতিহাস বিষয়ে একটি অন্তর্নিহিত বীক্ষা থাকে, উপন্যাস কী- এ বিষয়ক একটি ধারণা থাকে। কুন্ডেরা সেই ধারণাকেই ব্যক্ত করতে চেয়েছেন, যা তার নিজের উপন্যাসের অঙ্গীভূত। তা হলে উপন্যাসকে কুন্ডেরা কী চোখে দেখেন? আর যা-ই হোক, সরলরৈখিকভাবে তিনি দেখেন না; এই আঙ্গিকটিকে তিনি বুঝতে চেয়েছেন ইউরোপীয় দর্শন ও ইতিহাসের পটভূমিকায়। 

কুন্ডেরার কাছে উপন্যাস কোনো সরল আখ্যান নয়; কেননা তিনি মনে করেন উপন্যাসের ‘স্পিরিট’ হলো ‘জটিলতার স্পিরিট’; কুন্ডেরার ভাষায় প্রতিটি উপন্যাস তার পাঠককে জানান দেয়- ‘ব্যাপারটা অত সরল নয়, যেমন সরল করে আপনি ভাবেন।’ কুন্ডেরার ভাষ্যে উপন্যাস একই সঙ্গে বহন করে চলে অবিরল ‘চলমানতার স্পিরিট’; প্রতিটি সৃষ্টি তার পূর্ববর্তী সৃষ্টির জবাব, প্রতিটি উপন্যাস ধারণ করে পূর্ববর্তী উপন্যাসের অভিজ্ঞতা। নিজের সময়ের দিকে তাকিয়ে কুন্ডেরার মনে হয়েছে উপন্যাসের স্পিরিট এখন অনেক দৃঢ়ভাবে নিবদ্ধ থাকে বর্তমানের ওপর, সময়ের পরিসীমাকে ছোট করতে করতে নিয়ে এসেছে বর্তমান মুহূর্ত পর্যন্ত। তাই কুন্ডেরার মতে, এই পদ্ধতির উপন্যাস কোনো ‘সৃষ্টি’তে পরিণত হয় না; তার মনে হয়, কোনো ‘সৃষ্টি’ অতীতকে যুক্ত করে ভবিষ্যতের সঙ্গে। অন্যদিকে তার সময়ের উপন্যাসে কোনো ‘আগামীকাল’ নেই, চলমান ঘটনামালার একটি স্রোতমাত্র।

উপন্যাসের শিল্পকলা ও পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন থেকে মিলান কুন্ডেরা বুনে গেছেন গল্প। ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে ধারাবাহিক গল্প বলার ঝোঁক তার নেই। তিনি গল্প বলেন জীবনের চত্বরজুড়ে হাঁটতে হাঁটতে, কৌতুকী চোখ মেলে হাসতে হাসতে, গহন-গভীর দার্শনিকতায় ভর করে। চোখে দেখা ব্যক্তিকে চরিত্র বানিয়ে নিজেই ঢুকে যান উপন্যাসের কল্পিত গল্পে; আবার আচমকা বেরিয়েও যান। যেমন ঘটেছে ‘ইমমরটালিটি’ উপন্যাসে। সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে দেখেছিলেন এক ষাট বা ষাটোর্ধ্ব নারীকে; কুন্ডেরার কল্পনায় নারীটি হয়ে গেলেন অ্যাগনেস; এমনকি কুন্ডেরা কল্পনা করে নিলেন তার নগ্ন দেহ; ধীরে ধীরে তৈরি করে নিলেন অ্যাগনেসের পরিবারিক পরিধি ও মনোভূমি। প্রথম অধ্যায় পেরোতে না পেরোতেই পাঠকদের নিয়ে গেছেন গ্যেটে ও তার প্রেমিকা বেটিনার জীবনে; গ্যেটে ও নেপোলিয়নের সাক্ষাৎকারে; তার একটু পরই পাঠককে এনেছেন গ্যেটে ও হেমিংওয়ের সংলাপে। ‘লাইফ ইজ এলজহয়ার’ উপন্যাসে জেরোমিলের স্বপ্নের ভেতর ঢুকে গেছে জেভিয়ার, যার জন্য কুন্ডেরা বরাদ্দ রেখেছেন একটি পরিচ্ছেদ। দার্শনিক তর্ক দিয়ে শুরু হওয়া গল্প পরিণতি পেয়েছে ‘আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং’ হিসেবে। 

বিশ্ব-উপন্যাসে মিলান কুন্ডেরা এক বিস্ময় জাগানিয়া অধ্যায়। রোমান্টিকতা, বাস্তবতাবাদ, প্রকৃতিবাদ, মনস্তাত্ত্বিকতার জোয়ার অতিক্রম করে তিনি আভাগার্দ, আধুনিক, এমনকি উত্তর-আধুনিক। প্রথাশাসিত আখ্যান বয়ানের ধারা ও চিন্তাকে ভেঙেচুরে তিনি পাঠককে নিয়ে গেছেন নতুন জিজ্ঞাসার দরজায়। প্রশ্নদীর্ণ চোখ মেলে তিনি নিজেই তাকিয়েছেন জীবনের দিকে। জীবনকে মনে হয়েছে একটি ‘ফাঁদ’। তার উপন্যাসের গল্প ও চরিত্ররা সেই ফাঁদকে উন্মোচন করতে চায়, পাঠককে জড়িয়ে ফাঁদের ভেতর। মূলত পাঠককে উত্তেজিত ও উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন তিনি, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে ভাবাতে চেয়েছেন। চিন্তাহীন গল্পস্রোতে ভাসমান পাঠক তার কাম্য নয়; কুন্ডেরার কাম্য হলো- সেই পাঠক, যিনি উপলব্ধির দরজায় কান পেতে কড়া নাড়বেন; জানতে চাইবেন কাকে বলে জীবন? কিংবা জিজ্ঞেস করবেন, জীবন কি অন্য কোথাও?  

লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //