ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেলেন ছটকু আহমেদ ও ইমরুল শাহেদ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক এবং বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালক ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ পেয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় ছটকু আহমেদ এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় ইমরুল শাহেদ।

আজ বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনাম্বড়র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার দেয়া হয়। ফজলুল হকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’ ২০০৪ সাল থেকে এই দিনে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ দিয়ে আসছে। ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী সুজাতা, সুচন্দা, চলচ্চিত্র প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান, চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ এবং ফজলুল হকের জ্যেষ্ঠ জামাতা মুকিত মজুমদার বাবু।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফজলুল হকের জ্যেষ্ঠ কন্যা কেকা ফেরদৌসী। অতিথিরা পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, ২৫ হাজার টাকা করে অর্থমূল্য এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, চলচ্চিত্র সাংবাদিক আবদুর রহমান, আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান, অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু এবং ফজলুল হক স্মৃতি কমিটির আহবায়ক আমীরুল ইসলাম। বক্তারা ফজলুল হকের কর্মময় জীবনের উপরে আলোকপাত করেন এবং আগামী প্রজন্মকে ফজলুল হকের সম্পর্কে জানতে প্রবীনরা আহবান জানান। এ পুরস্কার প্রর্বতন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি ফজলুল হককে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘সম্মুখপথের যাত্রী’ (দ্যা ফ্রন্টিয়ারম্যান ফজলুল হক) প্রদর্শিত হয়। তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন শহিদুল আলম সাচ্চু।

ষাটের দশকের শুরুতে ফজলুল হক ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি শিশুতোষ সিনেমা তৈরি করেছিলেন যা পাকিস্তান আমলে পুরস্কৃতও হয়েছিল। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশুনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিটি যখন নির্মিত হয় তখন ঢাকায় প্রযোজিত সিনেমার সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। পরে তিনি ‘উত্তরণ’ নামে আরও একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। পত্রিকা সম্পাদনা বা চলচ্চিত্র পরিচালনা কোনোটাতেই তিনি থেমে থাকেননি। পরে অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণের একেবারে সূচনা পর্বে ফজলুল হকের অবদান স্মরণীয়। তার অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’ প্রতি বছর একজন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সেরা চলচ্চিত্রের পরিচালককে পুরস্কৃত করে আসছে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন চলচ্চিত্রের এই গুণী মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের একটি মূল মিলনায়তনের নামকরণ করেছে ‘ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তন’। চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফজলুল হক ইন্সটিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

ফজলুল হক : ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের ২৬ মে বগুড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ১৯৯০ সালের ২৬ অক্টোবর ফজলুল হক মৃত্যুবরণ করেন। ফজলুল হক ছিলেন এ দেশের প্রথম সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক ও প্রকাশক। পঞ্চাশের দশকে এদেশে সিনেমা শিল্পের যাত্রা শুরুর আগের সিনে সাংবাদিকতা বা চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজ ছিল। এখনকার চলচ্চিত্রশিল্প বা অসংখ্য পত্র-পত্রিকার যুগে সেই সময়ের এই উদ্যোগ সম্পর্কে কল্পনাও করা কষ্টকর ছিল। ফজলুল হক সেই অসাধ্য কাজটি করেছিলেন। সেই দিন থেকে ফজলুল হককে এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হয়। ১৯৫০ সালে বগুড়া থেকে সিনেমা পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশনা ঢাকায় স্থানান্তর হয়। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো ২, এসি রায় রোড ঢাকা থেকে। পত্রিকাটির সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ১৯৫৯ সালে। তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল ‘সিনেমা’ পত্রিকা।

ইতিমধ্যে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছেন : সাইদুল আনাম টুটুল এবং ফজল শাহাবুদ্দিন (২০০৪), চাষী নজরুল ইসলাম ও আহমদ জামান চৌধুরী (২০০৫), হুমায়ূন আহমেদ ও রফিকুজ্জামান (২০০৬), সুভাষ দত্ত ও হীরেন দে (২০০৭), গোলাম রাব্বানী বিপ্লব ও আবদুর রহমান (২০০৮), আমজাদ হোসেন ও সৈয়দ শামসুল হক (২০০৯), মোরশেদুল ইসলাম ও চিন্ময় মুৎসুদ্দী (২০১০), ই আর খান ও অনুপম হায়াৎ (২০১১), নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও গোলাম সারোয়ার (২০১২), রাজ্জাক ও রেজানুর রহমান (২০১৩), সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী ও আরেফিন বাদল (২০১৪), মাসুদ পারভেজ ও শহীদুল হক খান (২০১৫), আজিজুর রহমান ও মোস্তফা জব্বার (২০১৬), আবদুল লতিফ বাচ্চু ও নরেশ ভুঁইয়া (২০১৭), মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শফিউজ্জামান খান লোদী (২০১৮), কোহিনূর আখতার সুচন্দা ও রাফি হোসেন (২০১৯), আলমগীর ও শামীম আলম দীপেন (২০২০) এবং কাজী হায়াত ও মাজহারুল ইসলাম (২০২১) এবং দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও আবদুল্লাহ জেয়াদ (২০২২)।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //