দেশি ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম দিকপাল, গিটার জাদুকর ও এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু। গত ১৮ অক্টোবর ছিল তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের এইদিনে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ কিংবদন্তি। রুপালি গিটার ফেলে চলে গেছেন সবার প্রিয় এবি; কিন্তু আজও তিনি প্রাণবন্ত হয়ে আছেন ভক্তদের হৃদয়ে, আছেন রোজকার চর্চায়।
সত্যি বলতে, কীর্তিমানদের মৃত্যু নেই। তাদের চলে যাওয়া মানে শারীরিক প্রস্থান কেবল। কর্মই তাদের বাঁচিয়ে রাখে অনন্তকাল। তেমনই এক কীর্তিমানের নাম আইয়ুব বাচ্চু। প্রিয় যে কোনো একটি গিটার কাঁধে ঝুলিয়ে তিনি যখন মঞ্চে এসে দাঁড়াতেন তখন দর্শকসারিতে তুমুল আনন্দ, মুহুর্মুহু করতালি এবং তার নাম ধরে চিৎকার করে করে সীমাহীন উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো। তিনি যখন তার গিটারে সুর তুলতেন তখন দর্শকসারির সে উত্তেজনা রূপ নিতো চরম উন্মাদনায়।
আইয়ুব বাচ্চুকে ‘কমপ্লিট মিউজিক পারসোনালিটি’ও বলা হতো। কারণ তিনি একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, সব সংগীত যন্ত্র বাজানো ও গান রেকর্ডিং, মিক্সিং, মাস্টারিংয়ে সমান পারদর্শী ছিলেন। বলা যায়- একটি গান তৈরির পুরোটাই নিজ হাতে সারতে পারতেন তিনি। এ কারণে তার সৃষ্ট যে কোনো গানই পেত অসাধারণ রূপ, যা দেশের সংগীতভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তাও লাভ করত।
এ ব্যান্ড তারকার জন্ম চট্টগ্রামে। সেখানেই শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যে কাটে। ১৯৯১ সালে তিনি গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘এলআরবি’। এর আগে তিনি ১০ বছর ‘সোলস’ ব্যান্ডের সঙ্গে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সংগীতজগতে তার যাত্রা শুরু হয় ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে। এবির কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প বলি’। এটি সোলস ব্যান্ডে থাকাকালে গেয়েছিলেন তিনি।
তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবামের নাম ‘রক্তগোলাপ’; যেটি প্রকাশ পায় ১৯৮৬ সালে। তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ প্রকাশ পায় ১৯৮৮ সালে। বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পায় অ্যালবামটি। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের সবকটি গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
এ ছাড়া ব্যান্ড এলআরবিকে নিয়েও প্রকাশ করেছেন দুর্দান্ত কিছু অ্যালবাম। যে অ্যালবামগুলোর গান আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি দেশের সংগীতভাণ্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। আইয়ুব বাচ্চু বেশ কিছু বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। এসবের মধ্যে তার কণ্ঠ দেয়া প্রথম প্লেব্যাক ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি প্রয়াত নায়ক মান্নার ‘লুটতরাজ’ সিনেমার জন্য করা হয়।
আইয়ুব বাচ্চুর গান সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে ডিজিটাল আর্কাইভ। তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেল। মৃত্যুর আগে নিজের গানগুলোর কপিরাইট করেছিলেন তিনি। কপিরাইট অফিস জানায়, শিল্পীদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম ই-কপিরাইট আবেদনকারী আইয়ুব বাচ্চু। নিবন্ধনের দুই বছরের মাথায় হঠাৎ করেই তিনি চলে যান।
তবে জীবিত থাকা অবস্থায় তার ২৭টি অ্যালবাম কপিরাইট করে গেছেন তিনি, যার মধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ গানের গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী তিনি। গান সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণের খবর আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর দুই বছর পূর্তির ঠিক আগমুহূর্তে জানিয়েছে কপিরাইট অফিস। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সমভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গিটার লিজেন্ড। মৃত্যুর পর সেই চট্টগ্রামেই তাকে চিরশায়িত করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh