গানগল্পে ঢাকা মাতালেন কবীর সুমন

দীর্ঘ ১৩ বছর পর গতকাল শনিবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকায় গান গাইলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও সুরকার কবীর সুমন। এদিন ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের ৩০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকার শ্রোতাদের গান-গল্পে মাতালেন বর্ষীয়ান এই গায়ক। গানের ফাঁকে ফাঁকে তার গল্পকথন সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন শ্রোতারা।

গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে শো শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কবীর সুমন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে আসেন ৫টা ১৫ মিনিটে। মঞ্চে এসেই করজোড়ে নমস্কার জানিয়ে সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এদিন ‘এক একটা দিন’ গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন কবীর সুমন। প্রথম গানেই সারগামের প্রদর্শনী দেখান তিনি। এমনকি তবলাবাদকের সাথে কণ্ঠ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন এই কিংবদন্তি। প্রথম গানের রেশ না কাটতেই ‘সূর্যোদয়ের আগে গান ধরি রিমঝিম’, ‘জাগে জাগে রাত’ গেয়ে শোনান। গানের ফাঁকে ফাঁকে তিনি স্মরণ করেন তার ওস্তাদদের। তৃতীয় গানটি শেষ করার পর একটু অস্বস্তি বোধ করেন সুমন। 

মঞ্চে কবীর সুমন। ছবি: সংগৃহীত

এসময় শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার রোগের কারণে বসে থাকতে কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় শুয়ে শুয়ে গাই।’ একে একে গাইলেন ‘পুরানো সেই দিনের কথা’, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘যদি ভাবো কিনছো আমায়’। এর পর বিরতির সময় এলো। এ সময় হাতের পাশে রাখা ইনহেলার দেখিয়ে সুমন বললেন, ‘ভয় পাবেন না, মরব না। আমি এমন ভাগ্য করে জন্মাইনি যে বাংলাদেশের মাটিতে মরব।’

এরপরই অনুষ্ঠানস্থল থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বের হয়ে যেতে বলেন আয়োজক কমিটির সদস্য আরিফ বিল্লাহ। পিপহোলের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বরাদ্দ ৩০ মিনিট শেষ হয়ে গেছে। আপনারা এখন বের হয়ে যান। আপনারা বের না হলে কবীর সুমন আর গাইবেন না।’ সাংবাদিকদের আধা ঘণ্টা সুযোগ দেওয়া হলো সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও ফুটেজের জন্য। আয়োজকদের এমন আচরণে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা কষ্ট পেয়েছেন।

টিকেট, অডিটোরিয়াম জটিলতার কারণে আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা লক্ষ করা গেছে। হলের গেট দেরিতে খোলায় সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি অনেক শোবিজ তারকাকেও লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ছিলেন রুনা খান, সুমন আনোয়ার, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলসহ আরো অনেকে।

মঞ্চে গান গাইছেন কবীর সুমন। ছবি: সংগৃহীত

এছাড়া কবীর সুমনের গান শুনতে এসেছিলেন বরেণ্য অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। কবীর সুমনকে নিয়ে নিজের ভালোলাগা ও অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কবীর সুমন সবসময়ই বাংলাদেশের প্রিয় মানুষ। তিনি প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যাত্রা শুরু করি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আমন্ত্রণে ছুটে এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশকে ভালোবেসে সেবার বিনা পারিশ্রমিকে গান করেছিলেন তিনি। সে সময় তার সে কী জনপ্রিয়তা! যারা বাংলা গান শুনতেন তাদের হৃদয়ে অন্য রকম এক বিপ্লব এনেছিলেন সুমন। তার গান, সুর ও গায়কী মানুষকে মুগ্ধ করে। দেখুন, আজ এই কনসার্টে কত কত তরুণ এসেছে। সুমন কিন্তু এ প্রজন্মের মানুষ বা গায়ক নন। কিন্তু তার গান এ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করছে।’

এদিন গানের ফাঁকে কবীর সুমন বলেন, ‘আমি যখন প্রথম বাংলাদেশে গাইতে এসেছিলাম তখন আমার বয়স ছিল ৪৭ বছর। আমার প্রথম স্বরচিত অ্যালবাম যখন বের হয় তখন আমার বয়স ছিল ৪৩ বছর। আমার প্রথম গ্রামোফোন অ্যালবাম বের হয়েছিল ৩০ বছর বয়সে। ১৭ বছর বয়সে আমি রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে একটু উঁচু শ্রেণিতে যোগ দিই। নজরুলসংগীত পছন্দ হলেও সেটাতে আমি ভালো ছিলাম না। এই হলো আমার গানের ক্যারিয়ার।’

উল্লেখ্য, কবীর সুমনের বহুল প্রতীক্ষিত এ কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে। সেখানে অনুমতি অনুষ্ঠানের দেয়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানটি। 

আগামী ১৮ অক্টোবর একই স্থানে বাংলা খেয়াল পরিবেশন করবেন তিনি।

এর আগে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ঢাকায় এসেছিলেন কবীর সুমন। সে সময় গানের প্রোগ্রাম ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। কিন্তু সেখানে গান গাইতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠান না করেই ফিরে যান কলকাতায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //