‘আমি আসলে মন দিয়ে অভিনয়টাই করতে চাই’

সোহানুর রহমান সোহানের ‘এক মন এক প্রাণ’ সিনেমাতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মূলত আলোচনায় আসেন তমা মির্জা। শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নদীজন’ সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য ২০১৫ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এরপর বাড়তে থাকে তার সিনেমাতে অভিনয়ের ব্যস্ততা। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের নিজস্ব প্রতিবেদকের সঙ্গে। 

আপনার প্রতিদিনের সকাল শুরু হয় কীভাবে?

আমার বাসায় হানি হানি (কুকুর) আছে। সে যখন তাড়া দেয়, তখন আমার সকাল হয়। প্রতিদিন সকালে সে নিয়ম করেই এ কাজটি করে। বেশ ভালো লাগে। পোষা প্রাণী আমার ভীষণ প্রিয়। আসলে ঘুম থেকে উঠে গ্রিন টি পানের মাধ্যমে আমার সকালটা শুরু হয়। এটা আমার অনেক দিনের অভ্যাস।

ইদানীং কোন কারণে মন খারাপ হয়?

এখন বন্যার সংবাদ দেখে প্রতিদিন মন খারাপ হয়। ভীষণ কষ্ট লাগে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাক। মানুষের কষ্ট দূর হোক।

‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ ও ‘সাত নম্বর ফ্লোর’ ওয়েব ফিল্ম দুটি আপনাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্যটা জানতে চাচ্ছি।

এ কথা সত্যি যে, আমি এফডিসির মূল ঘরানার সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে এসেছি। পর পর বেশ কয়েকটি সিনেমা করেছি। ‘নদীজন’ করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। এখন ওটিটির জয়জয়কার তা স্বীকার করতেই হবে। আমিও ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করছি।

‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ আমার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আবার ‘সাত নম্বর ফ্লোর’ দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এর জন্য যে প্রশংসা ও সাড়া পেয়েছিলাম, তাতে আমি ভীষণ খুশি।

এফডিসি ঘরানার সিনেমা করা হচ্ছে না?

করছি তো। ফ্রম বাংলাদেশ সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এর পরিচালক শাহনেওয়াজ কাকলী। নতুন নতুন সিনেমা নিয়ে কথা চলছে। একাধিক ওয়েব ফিল্ম নিয়ে কথা চলছে। আমি আসলে মন দিয়ে অভিনয়টাই করতে চাই। হোক সিনেমা কিংবা ওয়েব ফিল্ম।

সিনেমাপাড়ায় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে নতুন করে প্রেম করছেন। সত্যি করে বলুন এক জীবনে কতবার প্রেমে পড়েছেন?

(হাসি)। এখনো প্রেমে পড়ছি। প্রেমের কোনো বয়স নেই। যদি বেঁচে থাকি ৮০ বছর বয়সেও প্রেম করব।

আপনার কোন কাজটি সবচেয়ে প্রিয়?

ভ্রমণ খুব প্রিয়। ঘুরতে পছন্দ করি। হোক তা দেশে বা বিদেশে। অবশ্য আমাদের দেশটাই অনেক সুন্দর। দেশের সমুদ্র আমাকে বারবার টানে। যতবার যাই প্রেমে পড়ি। 

সিনেমায় আসার আগে আর বর্তমান অবস্থার মধ্যে আপনার কোন পার্থক্যটা চোখে পড়ে?

এটা সত্যি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি আমি। আমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন। স্টাফ কোয়ার্টারে শৃঙ্খলিত জীবন কেটেছে আমার। গাড়ি ছিল না, থাকার তেমন জায়গা ছিল না। আমি অনায়াসে তা স্বীকার করছি; কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে বর্তমানে যে আমার গাড়ি, থাকার জায়গা হয়েছে এবং সুন্দর একটা জীবন হয়েছে, সবই কিন্তু ফিল্ম থেকে হয়েছে। এটা অস্বীকার করলে নিজের সঙ্গেই নিজের বেইমানি করা হবে। আমাকে শুরুতে ফিল্ম পলিটিক্সের মধ্যে পড়তে হয়েছিল; কিন্তু শ্রদ্ধেয় সোহানুর রহমান সোহান ভাই সেখান থেকে উদ্ধার করে অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই তার এক মন এক প্রাণ সিনেমায় আমাকে কাজ করার সুযোগ দেন। এতে আমি ঘুরে দাঁড়াই।

নিজের সাফল্যের পেছনে আর কার কার অবদান রয়েছে?

শাহনেওয়াজ কাকলী আপার সিনেমাতে অভিনয় করে নিজেকে ভেঙে গড়েছি। আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। রায়হান রাফির ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ আমার আলাদা এক অবস্থান সৃষ্টি করেছে। গান বাংলার তাপস ভাই-মুন্নী আপার কারণে স্টেজ শোতে আমার গ্লামারাস উপস্থিতি বেড়েছে। এই শ্রদ্ধেয় মানুষগুলোর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ সব পরিচালক-সাংবাদিকের কাছে।

ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো অপ্রাপ্তি আছে কি?

একদমই নেই। ছয় বছরের ক্যারিয়ারে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন এটি। এত কম সময় ও কম বয়সের ক্যারিয়ারে চলচ্চিত্র পুরস্কার অনেকের ভাগ্যেই জোটেনি। আমার আগে মিম আপু (বিদ্যা সিনহা মিম) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি আমার চেয়ে বয়সেও বড় আবার চলচ্চিত্রেও আগে এসেছেন। সব মিলিয়ে আমি বলব, অল্প সময়ে এতগুলো ছবিতে কাজ করা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া, দর্শকের এতটা কাছে পৌঁছাতে পেরে আমি দারুণ আনন্দিত। রিলিজের হিসেবে ‘গেম রিটার্নস’ আমার ক্যারিয়ারের ১৪তম ছবি। একই সময়ে আমরা অনেকেই কাজ শুরু করেছিলাম। তাদের মধ্যে এখন অনেককেই দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ কাজ কমিয়ে দিয়েছেন। এখন হলের সংখ্যা কম। এত কিছুর পরও কাজ করে যাচ্ছি। দর্শকরা আমাকে চেনেন, পছন্দ করেন- এটা ভীষণ ভালো লাগে।

অনেকেই বলেন, আপনি কাজে নিয়মিত হলে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারতেন?

আমি কারও নাম বলতে চাইছি না। একজন হিরোইন আছেন যিনি প্রচুর কাজ করেন। হাতের সামনে দিয়ে কোনো ছবির কাজ চলে যেতে দেন না, ছাড়েন না। সব ছবি করেন; কিন্তু তার নামে রিউমার অনেক বেশি। কম বেশি স্ক্যান্ডাল আছে। তাকে মানুষ ভালোও বলে এবং খারাপও বলে! আমার কথা হলো অনেক বেশি সিরিয়াসও হলাম। আবার বদনামও কামালাম। এমনটা আমার ক্ষেত্রেও হোক, তা আমি চাই না। আমার ফ্যামিলির প্রতি দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। আমি একটা ভালো ফ্যামিলি থেকে এসেছি। আমার একটা সার্কেল আছে। সবকিছু ঠিক রেখে যতটুকু পারি ততটুকু কাজই করি। আমার নামে কোনো স্ক্যান্ডাল এবং রিউমার নেই। সবাই সবাইকে নিয়ে সমালোচনা করে; কিন্তু আমার সমালোচনা করতে গিয়ে মানুষ একটু হলেও ভাবেন। 

ইদানীং আপনাকে অন্য ধরনের গল্পেও দেখা যাচ্ছে। আপনি কি নিজের কাজে বদল আনছেন?

শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নদীজন’ থেকেই মূলত আমি অভিনয়ের ধরন বদলেছি। এরপর বাণিজ্যিক ছবি করিনি, তা নয়। একটা-দুটো করেছি; কিন্তু চরিত্রনির্ভর ছবিতে কাজ করে যে মজা পেয়েছি, তা আমাকে বেশি টানছে।

আপনার ব্যক্তিগতভাবে কী মনে হয়? কোন ধরনের ছবি বেশি হওয়া উচিত?

দুটোই থাকতে হবে। কমার্শিয়াল বিষয়টাও থাকতে হবে, আবার বিকল্প ধারারও দরকার আছে। বিনোদনের পাশাপাশি মানুষকে শেখানোর জায়গাটাও রাখতে হবে। আমার মনে হয়, এখন তেমন কম্বিনেশন শুরু হয়েছে। ইদানীং শাকিব খান ‘গলুই’র মতো ছবি করছেন। একেবারেই নন-গ্ল্যামারাস চরিত্র। এর আগে বোধহয় তিনি চাষী নজরুল ইসলামের একটি ছবি করেছিলেন, যেখানে ডার্ক মেকআপ নিয়েছিলেন। আসলে সবাই কাজের ধরন চেঞ্জ করছেন। সারা বিশ্বে তো নানা রকম কাজ হচ্ছে।

আপনি নিজে কাদের ছবি পছন্দ করেন?

তাপসী পান্নুর ছবি আমার খুব ভালো লাগে। সালমান, কারিনা কাপুর এদের কাজও আমার ভালো লাগে। আলিয়া ভাটও আমার খুব পছন্দের। এভাবে বলতে পারব না যে আমি শুধু অফট্র্যাকের গল্প দেখি। আমি বাণিজ্যিক ছবি দেখি, আর্ট ফিল্ম দেখি, আবার ওয়েব প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টও দেখি।

দেখে কী মনে হয়? আমরা কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে আছি?

বিভিন্ন দেশের ছবি দেখলে মেকআপ-গেটআপ, সংলাপ বলার সময় কোথায় কতটুকু থামতে হবে এগুলো বোঝা যায়। তা ছাড়া আমরা খুব লাউড মেকআপ করি, লাউড ডায়ালগ বলি। আমরা মনে করি, খুব সাজগোজ করলেই গ্ল্যামারাস লাগবে; কিন্তু আমরা ভুলে যাই, একটা গ্রামের মেয়ের চরিত্র যখন করা হচ্ছে, তখন তার গেটআপ অন্য রকম হবে। এগুলো বোঝার জন্য বাইরের কাজ দেখা উচিত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //