ক্ষণজন্মা তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর

অকাল প্রয়াত তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর এ দুই বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রগ্রাহকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দেখতে দেখতে দশ বছর হয়ে গেল তাদের প্রস্থানের৷

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মাসে কাগজের ফুল লোকেশন দেখতে গিয়ে ফিরে আসার সময় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান তারা। তাদের সাথে আরো নিহত হন তারেক মাসুদের ড্রাইভার, প্রোডাকশন ম্যানেজার ও এক কর্মী৷

বাংলাদেশে স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার হিসেবে সমাদৃত তারেক মাসুদ। তার হাত ধরে এ দেশের সিনেমা দেশে বিদেশে পেয়েছে সম্মান ও মর্যাদা৷ তিনি ছিলেন সিনেমার ফেরিওয়ালা। সিনেমা দিয়ে মানুষের মধ্যে আলো ছড়ানোর দায়িত্ব পালন করেছেন আমৃত্যু।

আর ক্যামেরা ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করে যেসব বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আশফাক মিশুক মুনীর ছিলেন অন্যতম। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আশফাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিও গ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সবার কাছে মিশুক মুনীর নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি।

তারেক মাসুদের সিনেমা ‘রানওয়ে’র প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

তারেক মাসুদ ১৯৮২ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন করেন।

বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তারেক মাসুদ। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন।

১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আদম সুরত’ নামের এই প্রামাণ্যচিত্রটি এটি নির্মাণ করতে লেগেছিল ৭ বছর। এরপর থেকে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

২০০২ সালে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। ছবিটি তার শৈশবে মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত। এটি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং ‘একটি দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের হৃদয়স্পর্শী ও স্বচ্ছ উপস্থাপনা’র জন্য তারেক মাসুদ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট লাভ করেন।

এই ছবির জন্য তিনি ২৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কারও লাভ করেন। ছবিটি বাংলাদেশ থেকে অস্কারের বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র শাখায় নিবেদন করা দ্বিতীয় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র (প্রথমটি ‘জাগো হুয়া সাভেরা’)।

তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬) ‘রানওয়ে’ (২০১০) মুক্তি পায়।

তারেক মাসুদের শেষ অসম্পূর্ণ কাজ ‘কাগজের ফুল’। ছবিটি ভারত বিভাগের গল্প নিয়ে। এটি ‘মাটির ময়না’র পূর্ববর্তী পর্ব হিসেবে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন তারেক মাসুদ। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। সড়কের দানব কেড়ে নিলো তার প্রাণ৷ কিন্তু তারেক মাসুদ রয়ে গেছেন কালজয়ী সিনেমাওয়ালা হিসেবে৷

প্রসঙ্গত, নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে সরকার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //