মাস্ক পরেই চলচ্চিত্র উৎসব

অতিমারীতে স্তব্ধ হয়ে যায়নি কলকাতার স্পন্দন৷ তারকা সমাবেশে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন শাহরুখ খান৷ করোনার বিষাদেও এ যেন রাজকীয় কার্নিভাল!

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ২০২০ সাল বিষাদেই কেটেছে৷ সিনেমা হল বন্ধ ছিলো, বহু ছবি মুক্তিও পায়নি৷ ঋষি কাপুর, ইরফান খান, বাসু চ্যাটার্জি, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, তাপস পাল, কিম কি দুক প্রমুখ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব প্রয়াত হয়েছেন৷ তবে নতুন বছরে কলকাতা তাদের ছাড়েনি৷ ২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে(কিফ) এই সব প্রয়াত তারকাদের একটি করে চলচ্চিত্র দেখানো হবে৷  প্রত্যেক বছর নভেম্বরে এই উৎসবে দেশবিদেশের শিল্পী, কলাকুশলীরা এসে হাজির হন৷ তবে করোনায় এবারের পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ গুণগত মান একই রেখে আয়তনে সামান্য ছোট করে এবারের উৎসবের আয়োজন৷ উৎসব ঘুরে ‘থাপ্পড়’ খ্যাত পরিচালক অনুভব সিং টুইট করলেন, ‘‘কিছু শহরের মধ্যে একটা নাছোড় স্পিরিট দেখা যায়৷ কলকাতা তার মধ্যে একটা৷’’

এবার করোনা বিধি মেনে ৪৫টি দেশের ৮১টি সিনেমা, ৫০টি শর্টফিল্ম দেখানো হচ্ছে নন্দনের তিনটি প্রেক্ষাগৃহ, রবীন্দ্রসদন, রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, শিশির মঞ্চ, চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন এবং কলকাতা তথ্যকেন্দ্রে৷ বাংলা সিনেমা ২৯টি এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ছবি ‘নোনাজলের কাব্য’৷  কিংবদন্তী শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে তার অভিনীত নয়টি ছবি দেখানো হচ্ছে, থাকছে তার পরিহিত বিভিন্ন নাটকের পোশাক৷ ভানু ব্যানার্জি, হেমন্ত মুখার্জি, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, এরিক রোমের, ফেদেরিকো ফেলিনির জন্মশতবর্ষে থাকছে তাদের নিয়ে আলোচনা৷ নানা ইনস্টলেশন, মছলিবাবার মূর্তি, বক্স অফিস লেখা অস্থায়ী তোরণ, চায়ের কেটলিতে ভরপুর নন্দন চত্বরের সিনেমাময় পরিবেশে সেলফি তোলার হিড়িক, উৎসাহী মুখ ভুলিয়ে দিচ্ছে করোনা বিষাদ৷ নন্দন চত্বরে সিনেমাপ্রেমী দর্শক সোদপুরের অপর্ণা ঘটক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নন্দনের লাইন আগের মতই দেখছি৷ তুলনামূলকভাবে কলকাতা ইনফরমেশন সেন্টার ফাঁকা৷ তবে আমরা সিনেমার থেকে সিনে তারকাদের বেশি দেখছি৷ ভয় কাটিয়ে সাধারণ মানুষের মতো কত আর্টিস্টরা এসেছেন! সৌমিত্র বা ভানুর আর্কাইভ ২০২১-এর সেরা পাওনা!’’

করোনার জেরে দেশের মধ্যে হায়দ্রাবাদে ফিল্মোৎসব হচ্ছে না, গোয়াতে দর্শকের উপস্থিতি সীমিত পরিসরে এবং সেখানে কোনো হলে উৎসব দেখানো হবে না, কেরলে উৎসব পিছিয়ে ফ্রেব্রুয়ারিতে শুরু হবে৷ সারা দেশে কলকাতাই প্রথম এমন সাহসিকতার সঙ্গে ফিল্মোৎসব করছে৷ উপরন্তু বইমেলা অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়েছে৷ তাই নন্দনচত্বরে অন্যান্যবারের মতো ভিড় না হলেও ধীরে ধীরে মানুষ আসতে শুরু করেছে৷ উৎসবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে বিদেশি ছবি দেখানো হচ্ছে, যা পরে আর দেখার সুযোগ হবে না৷ তাই যতদিন উৎসব চলবে, ততদিন মানুষ আসবে৷’’

মাস্ক না পরা থাকলে আমরা হলে ঢুকতে দিচ্ছি না: প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের যুগে এই জমায়েত কি নিছক কার্নিভাল নাকি সিনেমার দর্শকের ভিড়? উৎসব কর্তৃপক্ষ জানালেন, ভালো ছবির জন্য ভিড় আছে৷ আন্তর্জাতিক ছবির পাশাপাশি বাংলা ছবিতেও ভালো দর্শক হয়েছে৷ ডেলিগেট কার্ডে বা টিকিট কেটে সিনেমা দেখার পাশাপাশি সাধারণ দর্শকদের জন্য মুক্তমঞ্চে ‘দাদার কীর্তি'র মতো ছবি দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

নন্দন চত্বরে  উৎসব প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেলো, অনেকেই হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মুখে মাস্ক নেই৷ অথচ উৎসব কর্তৃপক্ষ চারিদিকে যথেষ্ট সচেতনভাবে দূরত্ব বিধি বা মাস্কের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন৷ পোস্টারে উত্তমকুমার, সত্যজিৎ রায় থেকে ‘টাইটানিক’ ছবির নায়ক-নায়িকা বা ‘ব্যাটম্যান’–এর জোকার, হ্যারি পটার সকলেই মাস্ক পরে সেই সচেতনতার বার্তাই ছড়িয়েছেন৷ উৎসবকর্মী থেকে উপস্থিত তারকারাও সকলে নীল-সাদা কিফ২৬ মাস্ক পরে রয়েছেন৷ উৎসব কমিটির সদস্য, সিনেমাটোগ্রাফার প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সারা কলকাতা জুড়েই সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রদের মাস্ক পরিয়ে সচেতনার বার্তা দিয়েছি৷ মাস্ক না পরা থাকলে আমরা হলে ঢুকতে দিচ্ছি না৷ হলের ভিতর একটা সিট ছেড়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বাইরেও দূরত্ব বিধি মানার ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে সবসময় কি সরকার, প্রশাসন, কর্তৃপক্ষ শুধু দায়িত্ব পালন করবে? মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে৷’’

সূত্র- ডয়েচে ভেলে


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //