সবসময়ই অভিনয় করতে চাই: সাবিলা

সাবিলা নূর। মডেল, অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, উপস্থাপিকা। বনলতা সেন খ্যাত নাটোরের মেয়ে সাবিলার জন্ম ১৯৯৫ সালের ১৭ মে। বুলবুল ললিতকলা থেকে নাচ শিখে পদ্মকুঁড়ি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। তখন তিনি ক্লাস ওয়ানে পড়েন। 

প্রথম ক্যামেরার সামনে একটি ফটোশুটে দাঁড়ান ২০১০ সালে। প্রথম নাটকে অভিনয় রেদওয়ান রনি পরিচালিত ইউটার্ন। 

দীর্ঘদিনের প্রেমিক নেহাল সুনন্দ তাহেরের সঙ্গে গত শুক্রবার সাবিলার বিয়ে হয়েছে। নেহাল বেসরকারি টিভি চ্যানেল এসএ টিভির ব্রডকাস্ট প্রকৌশলী। বিয়ের পর অভিনয়ের সাময়িক বিরতি কাটিয়ে নভেম্বরের শেষের দিকে পুরোদমে অভিনয়ে ফেরার কথা জানান তিনি।

অভিনয়, মডেলিং, নাচ, পড়াশোনা সবকিছু নিয়ে কথা বলেছেন এ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাবিলা নূর।

প্রথম শুরু হয়েছিল নাচ দিয়ে। সেটা খুব ছোটবেলায়। এখন আর নাচ করা হয় না কেন?

নিয়মিত নাচ করতে হলে অনেক সময় দিতে হয়। এখন সেভাবে সময় দিতে পারি না। তবে খুব বিশেষ দিনে কিছুটা নাচ করার চেষ্টা করি। এ ছাড়া অভিনয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। মাঝে মাঝে উপস্থাপনা করি ও বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েও কাজ করি। সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাস থাকে। এতকিছু সামাল দিয়ে নিয়মিত নাচ করার সময় হয়ে ওঠে না। আর তাছাড়া আমার পরিবার থেকে বেশ কড়া করে বলা আছে, আমি সবকিছুই করতে পারব; কিন্তু তার আগে পড়াশোনা। আমাকে অবশ্যই অনেক ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করতে হবে।


তার মানে আপনি পড়াশোনায় খুব সিরিয়াস?

একদম। বাধ্য হয়েই অনেক সিরিয়াস থাকতে হয়। আমার নিজেরও ভালো লাগে পড়াশোনা করতে। ছোটবেলা থেকেই আমি পড়াশোনা করতে অনেক ভালোবাসি। আমার প্রথম স্কুল ছিল ঢাকার পল্টনে লিটল জুয়েলস স্কুল। আর আমার প্রথম শিক্ষক হলেন আমার মা ও বাবা। তাদের কাছেই আমার প্রথম পড়াশোনা শেখা। স্কুলজীবনে আমার প্রিয় শিক্ষক অনেকেই ছিলেন। ও লেভেল অবশ্য সম্পন্ন করেছি স্কলাসটিকা থেকে। পড়াশোনায় অনেক ব্যস্ত থাকতে হয় বলেই অনেকের সঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠে না। আমাকে এখনো সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাস করতে হয়। এছাড়া পরীক্ষা তো একটার ওপরে একটা থাকেই।

আপনি বড় হয়ে অনেক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন, এটার রহস্য শুনতে চাই?

হা হা হা। হ্যাঁ, অনেক ভার্সিটিতে। প্রথমে আব্বু আমাকে নর্থ সাউথে ভর্তি করিয়ে দেন বিবিএতে। কিছুদিন পড়াশোনা করার পর আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। আমার আগ্রহ বেশি ছিল ইংরেজি সাহিত্যের ওপর। পরে আগ্রহ দেখে আব্বু ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেন ইংরেজি সাহিত্যে। পড়াশোনা ভালোই করছিলাম। হঠাৎ করে বিশেষ একটা কারণে আমি ইউএসএ চলে যাই আমার বোনের কাছে। ওখানে গিয়ে আমি ফিল্মের ওপর একটা কোর্স করি, পরে অবশ্য সেটা শেষ করতে পারিনি। ইউএসএ আমি সাত মাস থাকি। দেশের মানুষের টানে ও অনেকের অনুরোধে আবার আমি বাংলাদেশে চলে আসি। যেহেতু বেশ গ্যাপ পড়ে গেল তখন আমি আবার এআইইউবিতে ভর্তি হই। এখন সেখানেই পড়াশোনা চলছে। আরো বছর খানেক লাগবে শেষ করতে।


আপনি খুব সম্ভব প্রথমে বিলবোর্ডের মডেল হয়েছিলেন?

হ্যাঁ, হাঁসমার্কা নারিকেল তেলের বিলবোর্ডের মডেল হয়েছিলাম ২০১০ সালে। বিলবোর্ডে কিন্তু আমার চেহারা ভালোভাবে বোঝা যায়নি। কিন্তু তারপরও আমার বন্ধুরা দেখে আমার কাছে এসে গল্প করত। তারা বলতো খুব ভালো হয়েছে। এসব শুনে শুনে অবশ্য আমারও খুব ভালো লাগতো। আবার মনও কিছুটা খারাপ হতো যে, বিলবোর্ডে আমার ছবি ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। আর ছবিটাও খুব বেশি ভালো ছিল না। আমার বন্ধুরা মিথ্যা বলত কি-না বুঝতে পারতাম না। তারপরও ভালো লাগত। প্রথম কাজ। প্রথম প্রেম।

 এবার আসি নাটক প্রসঙ্গে। অনেকেই বলেন, সাবিলা নূরের বেশিরভাগ চরিত্র একই রকমের হয়ে থাকে। আপনি কি মনে করেন? এটা থেকে কী বের হওয়া দরকার?

অবশ্যই এটা থেকে বের হওয়া দরকার। আমাদের যেটা হয় একজন যদি কোনো কিছু শুরু করে এবং সেটা যদি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারে তাহলে সেটাই অনেক সময় ধরে চলতে থাকে। প্রথমে কিছু নাটকে টম বয় টাইপের চরিত্রে অভিনয় করেছি বা শহুরে ক্ষ্যাপাটে মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই যে শুরু করলাম, এখন সবাই একই ধরনের গল্প নিয়েই আমার কাছে আসে। এখন কিন্তু কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আপনি গত দুই ঈদের কাজ দেখে সেটা বিচার করতে পারবেন। আমি একজন অভিনেত্রী। সব চরিত্রেই কাজ করতে চাই। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত চরিত্রে অভিনয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ আছে।

ধারাবাহিক নাকি সিঙ্গেল নাটকের প্রতি আপনার আগ্রহ বেশি?

আমার অবশ্যই সিঙ্গেল নাটকের প্রতি আগ্রহ বেশি। সিঙ্গেল নাটক বা একটা টেলিফিল্মে গল্প যতটা ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়, আমার মতে ধারাবাহিকে অনেক ক্ষেত্রেই এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এটা অবশ্যই আমার ধারণা। ধারণা ভুলও হতে পারে। এখন সবাই এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, একটা নাটক ধারাবাহিকভাবে কেউ দেখতে চায় না বা পারে না। আমার শুরু হয়েছিল টেলিফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে। পছন্দের সেটাও একটা কারণ হতে পারে।


নাটকে আপনার শুরুর গল্পটা একটু শুনি?

২০১৪ সাল। মেধাবী পরিচালক রেদওয়ান রনি নিজে একদিন আমাকে ফোন করলেন এবং বললেন, তিনি একটা টেলিফিল্ম বানাবেন। নাম ইউটার্ন। আমাকে অভিনয় করতে বললেন। আমি রনি ভাইকে আগে থেকেই নামে চিনি। তিনি অনেক ভালো নির্মাতা। অনেক ভালো কাজ করেন; কিন্তু তার সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। তিনি যখন আমাকে নিজে থেকে ফোন করলেন, আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। আমি অভিনয়ে রাজি হয়ে গেলাম। তারপর সেটে তিনি আমাকে অনেকভাবে সাহায্য করলেন। আমাকে সুন্দর করে প্রতিটি দৃশ্য বুঝিয়ে দিলেন। আমাকে আমার মতো করে অভিনয় করতে বললেন। কাজটা ভাল হয়েছিল। অনেকেই প্রশংসা করেছিলেন। শুরু হয়ে গেল নাটকে অভিনয়। তারপর রনি ভাইয়ের সঙ্গে আরো অনেক কাজ করেছি।

আপনার একটি কাজ অনেক প্রশংসিত হয়েছিল। নাটকের নাম ছিল উবার। অনেকেই দেখেছিলেন। এই নাটকটি সম্পর্কে একটু বলুন? 

হ্যাঁ, আরটিভিতে প্রচার হয়েছিল। নাটকের গল্পটা দারুণ ছিল। একজন বাবা সন্তানের জন্য সবকিছুই করতে পারেন; কিন্তু অনেক সন্তানই সেটা বোঝেন না। এটাই ছিল গল্পের প্রধান ম্যাসেজ। একজন বাবার বাইরের চরিত্রটা কঠিন হলেও ভেতরে যে কতটা নরম সেটা শুধু সেই বাবাই জানেন। আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তারিক আনাম খান। তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। আমার নায়ক ছিল তৌসিফ মাহবুব। নির্মাতা ছিলেন সাজিন আহমেদ বাবু। তিনিও অসাধারণ একজন নির্মাতা। একটু চুপচাপ থাকেন কিন্তু ভালো কাজ কীভাবে আদায় করতে হয়, তিনি সেটা খুব ভালো করে বোঝেন।


টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি ইউটিউব বা ওয়েব সিরিজেও আপনি অভিনয় করছেন। কোন মাধ্যমে কাজ করতে পছন্দ করেন বা বেশি সাড়া পান?

কাজ আসলে কাজই। এখানেও অভিনয় করতে হয় আবার ওখানেও অভিনয় করতে হয়। তবে ইউটিউবে সাড়াটা বেশি পাই। একটু বুঝিয়ে বলি, টেলিভিশনে একটা নাটক প্রচার হওয়ার পর তাৎক্ষণিক একটা দর্শক তার মতামত দিতে পারে না। কিন্তু ইউটিউবে পারে। দর্শকের মতামত কমেন্টস বক্সে লিখতে পারে। ভালো লাগলে ভালো। খারাপ লাগলে খারাপ। কি খারাপ হয়েছে, কতটা খারাপ হয়েছে, আরো কি করার দরকার ছিল, এরকম আরো অনেক বিষয় নিয়ে দর্শক লেখেন। এতে আমাদেরও অনেক উপকার হয় পরবর্তী কাজের জন্য। এজন্য আমি কিন্তু ইউটিউবে বেশ ভালো খেয়াল রাখি।

আপনার অভিনীত কোন চরিত্রের সঙ্গে নিজের আসল চরিত্র মিলে যায়?

না এখনো সেরকম কোনো চরিত্র আসেনি। আমার বেশিরভাগ নাটকেই দেখা যায় বাড়ির আদুরে ছোট বা খুব ত্যাড়া টাইপের আবার কখনো প্রচণ্ড ঝগড়াটে টাইপের মেয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক হৈ হুল্লোড় করছি। টম বয় টাইপের।

তাহলে আসলে সাবিলা নূর কেমন?

আমি খুব শান্ত টাইপের একটা মেয়ে। খুব লাজুক। অসামাজিক বলা যাবে না কিন্তু সবার সঙ্গে মিশতে আমার বেশ সময় লাগে। এক কথায় বলতে হলে আমি খুবই লাজুক। অবশ্য সেটা বোঝা যায় না। আমি এখনো নিজে শাড়ি পরতে পারি না। তবে কিন্তু প্রথম শাড়ি পরেছিলাম সাড়ে তিন বছর বয়সে। একটা অনুষ্ঠানে নাচ করার জন্য। নাচের জন্য আমাকে মাঝে মাঝেই শাড়ি পরতে হতো।

সাবিলাকে চলচ্চিত্রে কবে দেখতে পাবে তার ভক্তরা?

চলচ্চিত্র অনেক বড় মাধ্যম। আমি অবশ্যই এখানে কাজ করতে চাই। এখানে অনেক প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হয়। কারণ অবশ্যই আমি চাইব না দু-একটা সিনেমায় অভিনয় করেই আমি হারিয়ে যাই। আর এ জন্যই আমি টেলিভিশনে কাজ করে করে নিজেকে তৈরি করছি। আমার লেখাপড়া তো আছেই। নিজেকে তৈরি করে ও পড়াশোনা শেষ করে তারপর চলচ্চিত্রে আসতে চাই। যেহেতু অভিনয় ভালোবাসি, অনেকদিন টিকে থাকতে চাই।

অনেকের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন। সরাসরি একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছি। সহ-শিল্পীদের কত মার্কস দেবেন? তিনজনের নাম বলতে হবে। সেই সঙ্গে তিনজন প্রিয় নির্মাতার নাম।

খুব ঝামেলাপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আমি সবার সঙ্গেই কাজ করতে পছন্দ করি। ওইভাবে কারও নাম এগিয়ে রাখাটা ঠিক হবে না। তারপরও যদি বলতে হয় তাহলে আরফান নিশো ভাইকে ফুল মার্কস দিব। তাকে এগিয়ে রাখব। তার পরপরই থাকবে অপূর্ব ভাই ও মোশাররফ ভাইয়ের নাম। পছন্দের তিনজন নির্মাতার নাম বলা আরো বেশি কষ্টকর। তারপরও বলতে হলে প্রথমেই রেদওয়ান রনি ভাইয়ে নামটাই আগে আসবে এবং তারপর সবাই বিশেষ করে যাদের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে।

ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এটি আপনার পছন্দের বিষয়। ভবিষ্যতে কী করতে চান ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে?

আমি সবসময়ই অভিনয় করতে চাই। ইংরেজি সাহিত্য আমার অনেক পছন্দের বিষয়। যদি কখনো সুযোগ হয়, তাহলে অভিনয়ের পাশাপাশি আমি ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হতে চাই। আমার দ্বিতীয় পছন্দ শিক্ষকতা। আমি আবারো বলছি চাকরি বলেন বা ব্যবসা বলেন, যাই করি না কেন, আমি অবশ্যই অভিনয়টা চালিয়ে যাব। সেটা হোক মডেলিং বা উপস্থাপনা বা নাটক বা চলচ্চিত্রে। অভিনয় আমার প্রথম পেশা ও নেশা।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //