যে সকল আসনে ডুবলো নৌকা

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৫টি আসন। ২২৫টি আসনে জয়লাভ করলেও স্বতন্ত্রদের কাছে কয়েকটি আসন হারিয়েছে দলটি। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেক হেভিওয়েট একাদশের সংসদ সদস্যরা এবার নির্বাচনের স্বতন্ত্রদের কাছে হেরে গিয়েছেন

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. মাহবুব আলীর নাম আলোচিত ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

যে সকল আসনে হেরেছে আওয়ামী লীগ-
ঢাকা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদ মুন্না ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা সজলের কাছে হেরেছেন। মুন্না ৫০ হাজার ৩৩৪ ভোট পান। অন্যদিকে সজল পান ৫০ হাজার ৬৩১ ভোট।

ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে পরাজিত হলেন দুই বারের এ সংসদ সদস্য।

বরগুনা-১ আসনে (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে হেরে গেছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি নৌকা প্রতীকে ৫৪ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়। এ আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে ৬১ হাজার ৮৭৪ ভোটে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সরোয়ার টুকু।

 পিরোজপুর-২ আসনে নৌকার প্রতীক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে হারিয়ে ঈগল প্রতীকে মহিউদ্দিন মহারাজ চমক দেখিয়েছেন। মহিউদ্দিন মহারাজ একসময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এপিএস ছিলেন। মহিউদ্দিন মহারাজ ২৮ হাজার ৫৮৭ ভোট বেশি পেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ায় বেসরকারিভাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। মহারাজ ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট। 

জামালপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া মাহবুবুর রহমানকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র থেকে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশিদ। আব্দুর রশীদ ৫০ হাজার ৬৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। মাহবুবুর রহমান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৩৮ ভোট। অন্যদিকে ডা. মুরাদ হাসান ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৩৩ ভোট।

নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে নৌকার প্রার্থী অসীম কুমার উকিল ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর কাছে হেরে গেছেন। উকিল পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট। বিপরীতে পিন্টু পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৮০৩ ভোট।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র কলারছড়ি প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ একরামুজ্জামান। তিনি ৮৯ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ ৪৬ হাজার ৩৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মোশাররফ হোসেন ৩৩ হাজার ৮১০ ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা-৪ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার সানজিদা খানমকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন ট্রাকের আওলাদ হোসেন। আওলাদ হোসেন ২৪ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সানজিদা ২২ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়েছেন।

গাজীপুর-৫ আসনে বর্তমান সংসদ মেহের আফরোজ চুমকিকে হারিয়েছেন  প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান। ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান ৬২ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার মনোনীত প্রার্থী চুমকি ৫০ হাজার ৬৯৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের একাংশ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে হেরেছেন তিনবারের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৫২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৭৮ হাজার ২৬৯ ভোট।

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে হেরেছেন নৌকার মৃণাল কান্তি দাশ। তিনি ভোট পেয়েছেন ৮২ হাজার ৮৩৩টি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌরসভা মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল স্বতন্ত্র হিসেবে কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৭০৫টি।

নরসিংদী-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের ফজলে রাব্বি খান ৪৫ হাজার ১১৫ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করে ঈগল প্রতীকে জয় পেয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৭৭৯ ভোট।

ফরিদপুর-৩ সদর আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হক ৭৫ হাজার ৮৯ ভোট পেয়ে হেরে যান। এখানে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। তিনি ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট।

ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহ এবারও হেরে গেছেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক নেতা নিক্সন চৌধুরী ঈগল প্রতীকে তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট।

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মোসা. তাহমিনা বেগম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে ঈগল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সাবেক এমপি আব্দুর রউফ ট্রাক প্রতীকে ৯৮ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮০ হাজার ১১১ ভোট।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে শেষ বেলায় আচরণিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা হারালে নৌকার মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট বাতিল করা হয়। বাঁশখালীর এ আসনে জেলা আওয়ামী নেতা মুজিবুর রহমান ঈগল প্রতীকে ৫৭ হাজার ৪৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী হেরে গেছেন। তিনি পেয়েছেন মাহবুব আলী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট।

যশোর-৬ আসনে নৌকা নিয়ে হেরেছেন শাহীন চাকলাদার। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৬৯টি। জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকে আজিজুল ইসলাম। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭টি।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে প্রায় ৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তা বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে নৌকার প্রার্থী শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৬৭২ ভোট।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //