ঈদের দিনের খাবারের পুষ্টিগুণ

ঈদ মানে আনন্দ, উৎসব, প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে সময় কাটানো। নতুন পোশাকে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ঈদের দিনের অন্যতম আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন মুখরোচক খাবারদাবার। মিষ্টি-ঝাল স্বাদের খাবার দিয়ে আমরা ঈদের দিন আমাদের ডাইনিং টেবিল সাজাতে ভালোবাসি।

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার সময় আমাদের খাবারের ধরন এবং খাবারের সময় পরিবর্তন হওয়ার কারণে আমাদের দেহের মেটাবলিক সিস্টেমে পরিবর্তন আসে। সেজন্য ঈদের দিনের খাবার নির্বাচনের সময় একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এ সময় অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে, আর শরীর খারাপ হয়ে গেলে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যেতে পারে। তাই খাবার নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। মুসলিম দেশগুলোতে ঈদের খাবার নির্বাচনের সময় ঐ দেশের ঐতিহ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। আবার শহর অঞ্চলের ঈদের খাবার আর গ্রাম অঞ্চলের ঈদের খাবারের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।

আজকাল অনেকেই খাবারে ফিউশন এনে খাবারকে বৈচিত্র্যময় করে তুলছে। বিশেষ দিনের বিশেষ খাবার নির্বাচনের সময় পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ব্যক্তি এবং শিশুদের দিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। ঈদের দিন সকালবেলা আমরা সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে আমাদের দিন শুরু করি। মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে সেমাই অন্যতম, এ ছাড়াও রয়েছে পায়েস, ফিরনি। ঈদের দিন সকালের খাবার হিসেবে আমরা চালের রুটির সঙ্গে মুরগির মাংস/চিকেন স্যুপের সঙ্গে কিছুটা সবজি রাখতে পারি। এতে আমরা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এবং ভিটামিন মিনারেলের সমন্বয়ে একটি ব্যালান্সড ডায়েট পেতে পারি। ডায়াবেটিস পেশেন্ট এবং কিডনি রোগীরাও এই খাবার খেতে পারবেন।

দুপুরের মেন্যুতে আমরা সাধারণত ভাত মাছের ঝোল/মুরগির মাংস একটু ঘন ডাল রাখতে পারি; কিন্তু বিশেষ দিনে বিশেষ খাবার আমরা সবাই পছন্দ করি। তাই কম তেল দিয়ে পোলাওয়ের সঙ্গে রোস্ট, রেজালা এবং বিভিন্ন ধরনের মাংসের কাবাব রাখা যেতেই পারে। এ ছাড়া মাছের কোরমা রাখতে পারেন আপনার খাবারের টেবিলে। ইদানীং সবাই খাবারে একটু ফিউশন পছন্দ করে। তাই ফিশ গ্রিল, চিকেন গ্রিল, ফিশ কাটলেট, মাছের কোফতা রাখা যেতে পারে। এসব মাছের বিভিন্ন পদ আমরা ভাত, পোলাও, রুটি দিয়ে খেতে পারি। দুপুরের খাবারে টক দই, লাবাং, বোরহানি, লাচ্ছি এবং সালাদ অবশ্যই রাখা উচিত। কারণ দই জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে।

বিকালে আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় কিছু ফল রাখতে পারি কিংবা ফলের রসও রাখা যেতে পারে। অনেকেই দেখা যায় বিকালে চিকেন শর্মা, চটপটি, পাস্তা রাখে; কিন্তু এসব খাবার কম করে খেতে হবে, নইলে বদহজম হতে পারে। রাতে একটু হালকা খাবার রাখা উচিত। যেমন-ভাত। সেই সঙ্গে মাছের ঝোল অথবা মুরগির ঝোল রাখতে পারেন। অনেকেই খাবারে বৈচিত্র্য চায়। তাই চাইনিজ আইটেম রাখতে পারেন। কারণ চাইনিজ খাবারে তেল মসলা কম থাকে। তাই চাইনিজ আইটেম অত্যন্ত চমৎকার হতে পারে। এ ছাড়াও চিকেন গ্রিলের সঙ্গে পাতলা রুটি পছন্দের তালিকাতে রাখতে পারেন।

রাতের বেলায় বিরিয়ানি, পোলাও খাদ্য তালিকাতে না রাখাই ভালো। ঈদের দিন যেহেতু বারে বারে খেতে হয় তাই অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত। নইলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন-বদহজম, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে; যা ঈদের আনন্দকে মলিন করে দিতে পারে। ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দময়। 

লেখক : সিনিয়র পুষ্টিবিদ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //