বিলুপ্তির পথে শতবর্ষী মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি

১৮৮০ সালে প্রায় দুই একর জমির ওপর মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ করেন রংপুরের তাজহাটের রাজা গোপাল লাল রায়। একতলা উচ্চতা বিশিষ্ট ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির এ লাইব্রেরি বর্তমানে ধ্বংসের চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। একসময় এ লাইব্রেরিতে ১০ হাজারেরও বেশি মূল্যবান ও দুর্লভ বই ছিল বলে জানা যায়। রাজা গোপাল লাল রায় ছিলেন লাইব্রেরির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। পরবর্তী সময়ে রংপুরের অন্যান্য জমিদারও বিভিন্নভাবে লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত হন।

লাইব্রেরির সামনে বেশ বড় একটি মাঠ রয়েছে। এ মাঠে সে সময় মাসজুড়ে চলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক কিংবা যাত্রাপালা। অনুষ্ঠানে জমিদার গোপাল লাল রায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। পরে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এ  লাইব্রেরি পরিদর্শন এবং মাঠে রাজনৈতিক সভা করেছেন বিখ্যাত সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরেবাংলা এ. কে ফজলুল হক, বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী প্রমুখ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে সারা ভারতবর্ষের মতো স্থানীয় জমিদারিগুলোও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দেশজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতির দরুন জমিদাররাও দেশ ছাড়তে শুরু করেন। এর পর থেকে মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি তার জৌলুস হারাতে থাকে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় রাজাকাররা এই লাইব্রেরিকে তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে এবং সমস্ত দুর্লভ ও মূল্যবান বইপত্র নষ্ট করে ফেলে। এ ক্ষতি আর কখনোই এই লাইব্রেরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। স্বাধীনতার পর লাইব্রেরির কার্যক্রম আবার শুরু করা হয়, কিন্তু ১৯৮২ সালের দিকে তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর কখনোই লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। পরিচর্যার অভাবে ক্রমশ ধসে পড়তে থাকে ভবনটি। বর্তমানে এটির মূল কাঠামোর বড় অংশই ধসে পড়েছে। এখন প্রথম দেখায় মনেই হবে না যে, একদা লেখক-পাঠক এবং বিখ্যাত সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল এই  লাইব্রেরি অঙ্গন। ১৪৪ বছরের প্রাচীন এই  লাইব্রেরির শেষ চিহ্নও আজ বিলুপ্তির পথে।

রংপুরের আইডিয়া প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শাকিল মাসুদ জানালেন, এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা গোপাল লাল রায়। যার নামে রংপুর শহরে জি.এল রায় রোড নামে একটি সড়ক পরিচিত। স্থানীয় লাইব্রেরি হিসেবে এটা এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রংপুর পাবলিক নাকি মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি, কোনটি বেশি সমৃদ্ধ ছিল-এ প্রসঙ্গে শাকিল মাসুদ বললেন, একটা সময় রংপুর শহর ছিল মাহিগঞ্জ। কোনটি বেশি সমৃদ্ধ ছিল এটা বলা কঠিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

বলা হয়ে থাকে রংপুর ইতিহাস-ঐতিহ্যের শহর, যুদ্ধ-সংগ্রামের শহর। কিন্তু বাস্তবতায় এগুলো মুখে মুখেই আছে। কিন্তু এর যে শেকড় সন্ধানী গবেষণা, সেগুলোর যথেষ্ট অভাব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //