২৪ ঘণ্টা খোলা যে লাইব্রেরি

কানাডার প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলো ফাইনাল পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য রাতদিন ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে রাখা হয়। কানাডার শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী এখানে বছরে দুবার এপ্রিল ও ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়। সেই সময় মার্চ-এপ্রিল ও নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে লাইব্রেরি রাতদিন খোলা থাকে। 

কেন খুলে রাখা হয়

খোলা থাকার কারণ শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষার আগে রাতভর লাইব্রেরি ব্যবহার করে লেখাপড়া করতে পারে। অনেক সময় ছাত্রদের নিজেদের বাসায় কিংবা মেসবাড়িতে নিরিবিলি পড়ার পরিবেশ থাকে না, তখন লাইব্রেরিতে এসে অখণ্ড সময় নিয়ে তারা পড়তে পারেন। লাইব্রেরিতে ছাত্ররা এককভাবে, গ্রুপ নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাতভর লেখাপড়া করতে পারে। শুধু তাই নয় অনেক শিক্ষার্থীকে দেখেছি তাদের বাসা-বাড়ি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক দূরে, তারা আগের রাতে লাইব্রেরিতে এসে সারারাত লেখাপড়া করে সকালে পরীক্ষার হলে চলে যায়। ভাবছেন এভাবে সারারাত পড়ে সরাসরি পরীক্ষা হলে কি ঝিমুনি আসবে না? লেখাপড়ার ফাঁকে তাদের অনেককে এখানে কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতে দেখেছি।   

লাইব্রেরির লেখাপড়ার পরিবেশ কেমন

১. লাইব্রেরিতে ছোট ছোট রুম আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা একাকী বা গ্রুপ নিয়ে লেখাপড়া করতে পারে। 

২. বিশাল নীরব পড়াশোনার জায়গা আছে, যেখানে সারি সারি চেয়ার টেবিল সাজানো আছে-সেখানেও একা বা গ্রুপ নিয়ে বসে ছাত্ররা পড়তে পারে। প্রত্যেক টেবিলে আলাদা ল্যাম্পের ব্যবস্থা আছে। 

৩. বিশাল কম্পিউটার ল্যাব আছে যেখানে বড় বড় কম্পিউটার রাখা আছে। কম্পিউটার ব্যবহার করেও তারা সারারাত পড়তে ও গবেষণা করতে পারে। 

৪. একটি অত্যাধুনিক কপি সেন্টার আছে, যেটি সারারাত খোলা থাকে। সেখান থেকে নামমাত্র মূল্যে শিক্ষার্থীরা যে কোনো ডকুমেন্ট প্রিন্ট, ফটোকপি ও স্ক্যান করতে পারে। 

৫. লাইব্রেরিতে আগে থেকে অনুরোধ জানানো বই-নোট-জার্নাল, ভিডিও-ডকুমেন্ট রাতের যে কোনো সময় তারা তুলে পড়তে পারে।

৬. লেখাপড়া করতে করতে যদি একঘেয়েমি চলে আসে, মাথা আর কাজ না করে তারও সমাধান আছে লাইব্রেরিতে। ফ্রন্ট ডেস্কে পাজল বোর্ড, ড্রইং পেপার-পেনসিল, অরিগামির জন্য পেপার-কাঁচি, সাপ-মই খেলার লুডু রাখা আছে।   

৭. শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই নয় বাইরের যে কোনো ব্যক্তিও লাইব্রেরির এই সুবিধা দিন-রাতের যে সময় ব্যবহার করতে পারে। একে বলে কমিউনিটি সার্ভিস। ‘জ্ঞান সবার জন্য উন্মুক্ত’ এই ভাবনায় এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  

৮. ভাবছেন সারারাত এভাবে লাইব্রেরি খোলা থাকে, সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া করে। এ সময় যদি কোনো অঘটন ঘটে? না বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা আছে বিধায় সেটা ঘটার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয় ছাত্রীরা যদি মনে করে তাদের রুমে বা বাসায় যেতে নিরাপত্তা কর্মী দরকার, ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই তারা এসে হাজির হবে এবং তাকে নিরাপদে পৌঁছে দেবে।  

৯. শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও সুযোগ সুবিধার সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটা মনিটর করার জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আছেন। লারনিং বুথ যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের টেক্সট, স্টাডি ম্যাটেরিয়াল, রিসার্চ পেপার সংশোধন করাতে পারে। 

১০. ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স-ইঞ্জিনিয়ারিং-বিজনেসসহ ৭টি প্রধান লাইব্রেরি আছে। তা ছাড়া প্রত্যেক বিভাগে আছে তাদের নিজস্ব লাইব্রেরি। ইয়র্কের সবচেয়ে বড় স্কট লাইব্রেরিতেই শুধু বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ।

আমাদের দেশের শিক্ষা প্রশাসকরা অনেক সময় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন-সেটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু তারা কি দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে লাইব্রেরি সারারাত খোলা রাখার ব্যবস্থা চালু করতে পারেন?

এমন ভাবনা বাহুল্য হতে পারে। কেননা যেখানে মেয়েদের হোস্টেলগুলোতে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরতে বাধ্য করতে আইন করা হয়। সমস্যা আছে অস্বীকার করার সুযোগ নেই তবে তাকে মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ তৈরিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের দেশে এই সুবিধা অধিক প্রয়োজন। কেননা সেখানে হল-হোস্টেল, মেস বাড়ির যে পরিবেশ তাতে লাইব্রেরি এমন সুযোগ তৈরি করা গেলে শিক্ষার্থীরা হয়তো ভালো ফল করবে। 

কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতের শিফটের দায়িত্ব পালন করতে করতে কথাগুলো প্রায়ই ভাবি। লেখাপড়ার পরিবেশের মধ্যে থেকে-এক অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করে। জ্ঞান হোক সব সময়ের সর্বজনের সঙ্গী।   

লেখক : লিড, ফ্যাসিলিটিস, স্কট লাইব্রেরি
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //