অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই চলছে পাঠদান

দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০২২ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি।

বছরের পর বছর তারা আইন অমান্য করে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দুই যুগ পার করলেও এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতেই শিক্ষার্থীদের বিভাগভেদে পরিশোধ করতে হয় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, সাত বছরের সাময়িক অনুমতি নিয়ে অস্থায়ীভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা যাবে। সনদ পেতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক একর এবং অন্যান্য এলাকায় দুই একর জমিতে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জন্য সাময়িক অনুমতিপত্র নবায়নের সুযোগ রাখা হয় আইনে। সাময়িক অনুমতিপত্র বা নবায়ন করা মেয়াদের মধ্যেও শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও শিক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়েছে আইনের ১২ ধারায়।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ বলেন, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করা হবে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের পাশাপাশি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব অস্থায়ী ক্যাম্পাস অবৈধ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর প্রতিফলন কার্যত নেই। অন্তত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমতির মেয়াদ পার করেছে, এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। বছরের পর বছর তারা আইন অমান্য করে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে বন্ধ হবে শিক্ষার্থী ভর্তি, এমন নির্দেশনা দিয়েছিল ইউজিসি। কিন্তু এমন নির্দেশনা থেকে কার্যত ইউটার্ন করেছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারকির দায়িত্বে থাকা এ সংস্থাটি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোতে বন্ধ হয়নি শিক্ষার্থী ভর্তিও। নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ই সময় পাচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিগগিরই আরও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে। ইউজিসি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালে সাময়িক অনুমতি লাভ করে। দীর্ঘ ২৬ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও। এ বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির কাছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে বলে জানা গেছে। ২০০১ সালে অনুমোদন লাভ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। চলতি বছরের শুরুতে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়েও স্থানান্তর করতে না পারায় ফের সময় চেয়েছে তারা।

একইভাবে পুরোপুরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি ২০০১ সালে অনুমোদন পাওয়া ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা), ২০০২ সালে অনুমোদন পাওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ২০০৩ সালে অনুমোদন পাওয়া দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকাকে চলতি জুলাইয়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বলেছে ইউজিসি। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। তবে এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুলশান ২ নম্বরের ক্যাম্পাসকেই স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে চায় বলে ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে ইউজিসির দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, ২০২২ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলতি বছরের জানুয়ারির পর অল্প কিছুদিনের জন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ থাকলেও কার্যত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়ে ছাড় দিয়েছে ইউজিসি। ফলে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই চলছে পাঠদান। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা আর তদারকির কারণেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মের মধ্যে আসছে। আগে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা চিন্তাও করেনি তারাও এখন স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তাদের আইনের মধ্যে পরিচালিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //