অনলাইন ক্লাস নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলায় গুগল মিট ও জুম প্লাটফর্মে পাঠদান চালু রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকরা গুগল মিট-জুম ব্যবহার না করে শিশু-শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে। এতে অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, ফেসবুক আইডি একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এই আইডি শেয়ার করা অনুচিত। আর ফেসবুক-নীতি অনুযায়ী ১৩ বছরের নিচে কারো ফেসবুক আইডি খোলারও অনুমতি নেই।

দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে নাবালক। অথচ মেসেঞ্জার গ্রুপে ১৩ বছরের নিচের শিশু-শিক্ষার্থীদেরও পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে একদিকে ফেসবুকের শর্ত ভঙ্গ হচ্ছে, অন্যদিকে অভিভাবকদের গোপনীয়তা ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এতে সৃষ্টি হতে পারে পারিবারিক-সামাজিক অশান্তিও।

ব্যাংকার সজল আহমেদ। তার মেয়ে রাজধানীর একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ক্লাস হচ্ছে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে। মেয়ের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। বাবার ফেসবুক আইডি দিয়ে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। উজ্জ্বল আহমেদ বলেন, ফেসবুকে ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় থাকে। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক ধরনের ব্যক্তিগত আলাপ থাকতে পারে। মেয়ে এসবের কোনটা থেকে কোনটায় চলে যায়, এ নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতে হয়।

রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, অনলাইন প্লাটফর্মটি নতুন। অভিভাবকরা সবাই গুগল মিট বা জুমে অভ্যস্ত নন। কিন্তু সবারই একটি ফেসবুক আইডি আছে। শতভাগ শিক্ষার্থীকে অনলাইন পাঠদানে উপস্থিতির জন্য এ মাধ্যমটি বেছে নিচ্ছেন তারা। তারা বলেন, ফেসবুক মেসেঞ্জারের অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের নজরদারির পরামর্শ দিয়ে থাকি। অনলাইনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে পাঠদানের জন্য অভিন্ন অনলাইন মাধ্যম তৈরি করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাজধানীর একজন শিক্ষক বলেন, অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। ফেসবুকে ক্লাস নেয়া যাবে না, এমনটাও বলা হয়নি। তবে শিশুদের ফেসবুক ব্যবহার করতে দেয়া ঠিক নয়।

শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, করোনার মধ্যে একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে অনলাইনে অভ্যস্ত হওয়া। আমরা অনলাইনে পাঠদান শুরু করেছি। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। এগুলো আস্তে আস্তে ইমপ্রুভ হচ্ছে। তিনি বলেন, টেকনোলজিতে নানা ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, অনলাইন প্লাটফর্মে পাঠদানে শিক্ষকরা পারদর্শী নন। শিক্ষকদের এই প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে হবে। অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তথ্য-প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার শর্তে উল্লেখ আছে, আইডি খোলার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। এর নিচে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলাকে ‘ফেডারেল আইনের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর আহসান জোহা বলেন, ১৩ বছরের কম বয়সিদের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম নেই। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে নাবালক ধরা হয়। তিনি বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের অনলাইনে ক্লাস করা মোটেই ঠিক নয়। এ জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম (গুগল মিট, জুম) রয়েছে। শিক্ষার্থীরা হয়তো বাবা-মায়ের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করছে। তবে সেখানে মা-বাবার ব্যক্তিগত গোপনীয় অনেক কিছু থাকতে পারে। একজনের ডিজিটাল মাধ্যম অন্যজন ব্যবহার করা ভয়াবহ অপরাধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও লঙ্ঘন।

এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্করা নিষিদ্ধ (ডার্ক নেট) অনেক কিছুতেই ঢুকে পড়ছে। অনলাইনে ক্লাস নিয়ে শিক্ষকদের ওরিয়েন্টেশনের প্রয়োজন ছিল, যেটি করা হয়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //