যশোরে ২ সহস্রাধিক গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বনবিভাগের

অব্যাহত তাপপ্রবাহের মধ্যে যখন গাছ লাগানোর দাবি জোরালো হচ্ছে, তখন উল্টো যাত্রা যশোরের বনবিভাগের। যশোরের ৪ সড়কের দুই সহস্রাধিক গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনবিভাগ। সামাজিক বনায়নের এই গাছ কর্তনের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র বিজ্ঞপ্তিও আহ্বান করা হয়েছে। এ নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবাদও জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত যশোরের জনজীবন। বৃষ্টিহীন খরতাপে পুড়ছে এই অঞ্চল। প্রকৃতির এই বৈরি আচরণের জন্য অনেকগুলো কারণের মধ্যে গাছ কেটে ফেলাও একটি কারণ বলে চিহ্নিত করছেন পরিবেশবাদীরা। এ জন্য তারা বৃক্ষরোপণের উপরেও গুরুত্ব প্রদান করছেন। সবাই যখন গাছ লাগানো দাবি জানাচ্ছে, তখন যশোরের ৪ সড়কের ২ হাজার ৪৪ বড় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ।

গত ২৫ এপ্রিল বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দু'টি অপরিচিত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক বনায়নের আবর্তকাল উত্তীর্ণ বাগান ও অন্যান্য উৎসের বনজদ্রব্য বিক্রির জন্য নির্ধারিত শর্তানুসারে দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর থেকে আন্দুলিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের ২৪৩, চাঁচড়া—ভাতুড়িয়া—সাড়াপোল হয়ে তেঁতুলিয়া গ্রাম পর্যন্ত ৯ কিলোমিটারে ৯৭৯, কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা বাজার থেকে পাচারই বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারে ৫০২ ও বাঘারপাড়া উপজেলার ধোয়াখোলা বাজার থেকে তালবাড়িয়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ৩১০ বর্ষীয়ান গাছ বিক্রি করা হবে। এসব গাছের মধ্যে রেইনট্রি, বকাইন, মেহগনি, সেগুন, বাবলা, খৈয়েবাবলাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে।

যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার বাসিন্দা শামীম হোসেন জানান, চাঁচড়া—ভাতুড়িয়া সড়কের দু’পাশে অনেক গাছ থাকায় এই এলাকার পরিবেশ তুলনামূলক শীতল থাকে। সড়কের দু’পাশে সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। গাছে অনেক পাখির বাসা রয়েছে। গাছগুলো কেটে ফেলা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।

এ ব্যাপারে সামাজিক বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, গাছগুলো সামাজিক বনায়নের। নির্দিষ্ট আবর্তকাল উত্তীর্ণ হলে এই গাছগুলো কেটে নতুন করে বনায়ন করা হয়। নিয়ম মেনেই গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাছ কাটার তফসিল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।

তবে বন বিভাগের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, তারা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন, বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের দুই হাজারের বেশি বর্ষীয়ান গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছে। তারা বন বিভাগের এই অপরিণামদর্শী উদ্যোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অবিলম্বে দরপত্র আহ্বান বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে পরিবেশ ও গাছবিধ্বংসীদের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //