কুষ্টিয়ায় তামাকের চাষ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

কুষ্টিয়ার মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তামাক চাষ হচ্ছে। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব বাড়ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত সার কীটনাশক প্রয়োগের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা অন্য ফসল বাদ দিয়ে তামাক চাষ করছে। 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলায় ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমির মধ্যে এবার বোরো আবাদ হচ্ছে মাত্র ৩৬ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। অপর দিকে তামাক কোম্পানিগুলো প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছে। 

বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা সার-বীজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করে এবং ভালো দামেরও নিশ্চয়তা দেয়। তা ছাড়া টার্গেটের জন্য আলাদাভাবে কার্ড তৈরি করে দেয়। ফলে চাষিরা তামাক চাষে উৎসাহী হয়। মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার তামাক চাষি জীবন আলী মণ্ডল বলেন, তামাক চাষে উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় আমরা এই আবাদ করে থাকি। বিক্রি শেষে মোটা একটা টাকা পাওয়া যায়।

তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করার ফলে ভালো ফলন হয়। বিক্রির ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয় না। অথচ টমেটো বা সবজির আবাদ বেশি হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিংবা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দাম পাওয়া যায় না। ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা এবং চাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণ না করায় কৃষকরা অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ গৌতম কুমার রায় বলেন, তামাক চাষের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তিনি বলেন, এক একর জমির তামাক জ্বালাতে ৫ মেট্রিক টন জ্বালানি হিসেবে খড়ির প্রয়োজন হয়। এতে বৃক্ষ উজাড় হয়। তামাক জ্বালানোর সময় যে ধোঁয়া বের হয় তাতে ছত্রাক নিকোটিন ও কেমিক্যাল টেস্টিসাইড ড্রকিসহ নানাবিধ উপাদান থাকে যা বাতাসে মিশে যায়। তেমনি চারাগাছ বড় করা পর্যন্ত যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় সেগুলো বৃষ্টির পানিতে নদীতে চলে যায়। এতে ২১৪ প্রজাতির জলজ প্রাণী ধ্বংস হয়। 

গ্রামে তামাক চাষের জন্য কৃষকের পাশাপাশি ঘরের বৌ-ঝিদের এ কাজে সহায়তা করতে হয়। শিক্ষার্থী স্কুলে না গিয়ে তামাকের কাজে যুক্ত থাকে। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলারাও এসব কাজে জড়িত থাকার ফলে তাদের ভূমিষ্ঠ সন্তানরা বিকলাঙ্গ হয়। জেলার সবচেয়ে বেশি তামাকের চাষ হয় মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলায়। আর এই দুই উপজেলাতেই সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধীর জন্ম হয়। 

মিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উপজেলায় চলতি বছর তামাক চাষ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর। আগে এসব জমিতে গম, মসুর, ছোলা, মটর, ভুট্টা, সরিষার আবাদ হতো। কিন্তু তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। 

তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনা করে বিকল্প ফসল উৎপাদনে সরকারিভাবে সার-বীজ, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দিলে সাড়া পাওয়া যাবে। 

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন জানান, তামাক চাষ ও সেবন কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ মানবদেহের স্পর্শকাতর অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করে। জেলায় এবারও বিপজ্জনক মাত্রায় তামাক আবাদ হয়েছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //