১০ বছরের রেকর্ড ভেঙে যশোরে তাপমাত্রা ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে যশোর। আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) জেলায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। গত ২০১৪ সালে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

টানা তাপপ্রবাহকে উসকে দিয়েছে লোডশেডিং। সোমবার যশোরে দিনের বেলায় লোডশেডিং হয়েছে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা। তবে এর আগে লোডশেডিং দেখা যায়নি। শহরাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। গ্রামে রাত-দিন মিলে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে ধান ঝাড়াই মাড়াই এর কাজ ব্যাহত হচ্ছে। গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণীকুল। সারাদিন রোদ আর প্রচণ্ড গরমে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। 

যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি এপ্রিল মাস থেকে যশোরাঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল গত ২০ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। সেটির রের্কড ভেঙে আজ সোমবার তাপমাত্রার পারদ দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যদিও এর আগে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকড করে ২০০৯ সালে এপ্রিল মাসে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

গত কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে যশোরের সাধারণ মানুষের জনজীবন। শহরে দিনে লোকজনের উপস্থিতি কমে গেছে। তবে তিন চাকার চালকরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মুজিব সড়ক, দড়াটানা মোড় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র দাবদাহে প্রায় জনশূন্য দেখা গেছে। মানুষের উপস্থিতি যেমন কম তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও কম। কিছু ইজিবাইক, রিকশা দেখা গেলেও যাত্রীর অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে চালকদের। 

শহরের বকুলতলায় বসেছিলেন রিকশাচালক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। এতো গরমে মানুষ বের হবে কি করে? আমরা পেটের দায়ে বের হয়ে যাত্রী পাচ্ছি না। ভাড়ার রিকশা চালাই, মহাজনকে দেওয়ার মতো টাকাও এখনো হয়নি।

এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে জেলার শহরে ও গ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, সোমবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে চার বার বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে। প্রতিবার ২০ থেকে ২৫ মিনিট করে মোট দেড় ঘণ্টা মত লোডশেডিং ছিল। 

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল লতিফ বলেন, গরমে এখন পিক আওয়ারে ১২৫ থেকে ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে কখনো পুরোটা পাওয়া যাচ্ছে। আবার কখনো দুই এক মেগাওয়াটে সংকট থাকছে। যেমন-গতকাল সোমবার সকালে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। ২০ মিনিট করে বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চাহিদা রয়েছে ১৭৫ মেগাওয়াট। 

যশোর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। শহরে দিন রাতে দুই একবার বিদ্যুৎ গিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। 

এ বিষয়ে ওজোপাডিকোর যশোর ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রাহক রয়েছে ৫৬ হাজার। সোমবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৫ মেগাওয়ার্ট, বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪৫ মেগাওয়াট। যশোর ২ এর আওতায় গ্রাহক রয়েছে ৬০ হাজার। এখানে গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৫ মেগাওয়াট, পাওয়া গেছে ৪৫ মেগাওয়াট। 

নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, গতকাল হঠাৎ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। যে কারণে লোডশেডিং হয়েছে। 

অপরদিকে গরমের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ২৫ রোগী। যার মধ্যে ১১ জনই শিশু রোগী। গতকাল মোট রোগী ছিল ১১ জন। গতকাল নতুন করে (বিকাল ৬টা পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন। এ তথ্য দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হোসনেআরা বেগম।

এদিকে, লাগাতার তাপদাহের কারণে রোদের মধ্যে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, এই গরমে ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথার রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এই সময়ে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিট স্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করে। এসময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। দিনমজুর বিশেষ করে কৃষকরা যেন সকাল ১১টার মধ্যে এবং বিকেলে তাপমাত্রা কমলে কাজ করেন সেই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //