বগুড়া অর্থনৈতিক জোন ৯ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

বগুড়ার মৃত শিল্পনগরীকে আবারো চাঙ্গা করতে অর্থনৈতিক জোন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ঘোষণা হওয়ার পর টানা ৯ বছর কেটে গেলেও অবকাঠামোগত কোন কিছুই দাঁড়ায়নি। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ স্থাপনের মধ্যে দিয়ে শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়া তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। আসবে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ। বেড়ে যাবে কর্মচাঞ্চল্য কথাগুলো এখনো খাতা কলমে বন্দি হয়ে আছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, কৃষি জমি ইচ্ছেমত ব্যবহার কমাতে ও বগুড়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাড়াতে দ্রুত অর্থনৈতিক জোনের বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি। 

জানা যায়, বগুড়াকে বলা হয় উত্তরাঞ্চলের রাজধানী। উত্তরের ১৬ জেলায় মানুষ বগুড়ায় আসেন ব্যবসায়ীক কাজে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে বগুড়ার গুরুত্ব বেড়েছে আগের থেকে বেশি। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ স্থাপনের মধ্যে দিয়ে শিল্পনগরী খ্যাত বগুড়ার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। আসবে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ। বেড়ে যাবে কর্মচাঞ্চল্য। বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কথা শুনে এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেধেছিল। কিন্তু নানা কারণে সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। যে কারণে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলতে নানা বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ায় একটি অর্থনৈতিকজোন স্থাপনের ঘোষণা প্রদান করেন। এরপর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে গত ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল একটি আদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হয়। এজন্য বগুড়া-নাটোর মহাসড়কসংলগ্ন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের পাঁচটি মৌজার ২৫১ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের কাজ স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল অধ্যাদেশ ১৯৮২ এ নোটিশ দেওয়া হয়। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর বিধান মতে ৩ ধারায় নোটিশ জারী করা হয়। পরবর্তীতে ৬ ধারা নোটিশ জারির পর ১৩৫ জন জমির মালিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেড় গুণ হারে ক্ষতিপূরণ না ধরে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন ২০১৭ মোতাবেক তিনগুণ ধরে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে লিখিত আপত্তি দাখিল করেন। সেই আপত্তির আলোকে গত ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হতে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি করা হয়। অভিযোগকারীগণ স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন ২০১৭ মোতাবেক তিন গুণ ধরে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক ৫টি রিট মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দেশনার জন্য নির্বাহী চেয়ারম্যান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। এই পত্রের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাজাহানপুর বগুড়াকে আহবায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে জেলার শাজাহানপুর উপজেলায় জোরা মৌজায়, বিরগাঁ মৌজায়, চকজোড়া মৌজায়, চকভালী মৌজায় ও পারতেকুর মৌজা মিলিয়ে সর্বমোট প্রায় ৩০৯ একর জমির প্রস্তাব দিয়ে জেলা প্রশাসক বগুড়া বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রস্তাবিত জমির এরিয়া নক্সা প্রস্তুত পূর্বক ব্যবস্থাপক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়। 

বগুড়া অর্থনৈতিক জোনের জন্য প্রস্তাবিত প্রায় ৩০৯ একর জমির মধ্যে বগুড়া থেকে শহীদ ক্যাপ্টন মনসুর আলী রেল স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরপর থেকে বগুড়ায় অর্থনৈতিক জোন স্থাপন প্রকল্পটি এখন থমকে আছে। বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রকল্প বব মিলিয়ে ঝুলে রয়েছে। প্রকল্প বাতিলও করা হয়নি আবার প্রকল্পের অগ্রগতিও নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৯ বছরেও প্রকল্পটি আলোরমুখ দেখতে পায়নি।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন জানান, বগুড়ায় যত দ্রুত সম্ভব অর্থনৈতিক জোন চালু করতে পারলে কৃষি জমি নষ্ট হতো না। বগুড়ায় নতুন করে ইন্ড্রাস্ট্রি চালু হবে। এসব কল কারখানায় হাজারো শ্রমিক কাজ করবে। উৎপাদিত পণ্য দেশে বিদেশে বিক্রি হবে। এতে করে বগুড়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত হবে। কিন্তু বিষয়টি থমকে থাকায় ইচ্ছেমত কলকারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। পাশের জমি দূষণ হয়ে যাচ্ছে।

বগুড়া বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আজিজার রহমান মিল্টন জানান, বগুড়া বিসিক এলাকায় নতুন করে কোন জমি বাড়েনি। আধুনিক সুযোগ সুবিধাও বিসিকে নেই। আধুনিক করে একটি অর্থনৈতিক জোন গড়া হলে কারখানা মালিকরা উপকৃত হতো। আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে কারখানা মালিকরা আগের থেকে দিগুণ উৎপাদন করতে পারতো। যত উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ততটায় বগুড়ায় আয় বৃদ্ধি পাবে। শ্রমিক কাজ পাবে। অর্থনৈতিক জোন গড়া হওয়ার সংবাদে কলকারখানা মালিকরা নতুন করে চিন্তা করেছিল। কিন্তু কয়েক বছর হয়ে গেলো অর্থনৈতিক জোন গড়া হয়নি। এতে কিছুটা হলেও হতাশ হয়ে আছে ব্যবসায়ীরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //