চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে সবজি ক্ষেত

চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রী রেকর্ড করা হয়, এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৯ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৬ শতাংশ ও দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৫ শতাংশ এবং সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস,বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭১ শতাংশ। 

রবিবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৯ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ ও বেলা ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস,বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২০ শতাংশ এবং সকাল ৯টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস,বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৬৮ শতাংশ। তিনি আরো জানান, আর্দ্রতা বেশি অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জন্য গরমে অস্বস্তি বেশি লাগছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩২ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ ও দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ এবং সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫৮ শতাংশ। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রী, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ। সকাল ৯টা তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৫ শতাংশ এবং দুপুর ১২ টায় রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৯ শতাংশ। বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, মাঝে একদিন বাদে চুয়াডাঙ্গায় ৫দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার আওতায় রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪২ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪  ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৫ শতাংশ এবং দুপুর ১২টায় রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৫ শতাংশ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৭ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২২ শতাংশ এবং দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩১ শতাংশ। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৭ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ এবং ওই দিন বেলা ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৩ শতাংশ। তিনি আরো জানান, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কোনভাবেই কমার সম্ভাবনা নেই।

চুয়াডাঙ্গা ক্রমাগত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে সবজি ক্ষেত পানি দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন কৃষকেরা। তাপপ্রবাহে ক্ষেতের ফসল পুড়লেও সে সব তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। বারং বার এ জেলার ৪টি উপজেলায় সবজির ক্ষতির পরিমাণ জানাতে ব্যর্থ হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন ডিঙ্গেদহের হাটখোলা গ্রামে গেলে সেখানকার কৃষক স্বপন বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে করল্লার আবাদ করেছি। ২-৩ দিন পর পর পানি দিয়েও তা রক্ষা করতে পারছিনা। করল্লা গাছ থেকে ঝরে পড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দিননাথপুর গ্রামের হারিস মিয়া বলেন, এই দাবদাহে বেশি ক্ষতি হচ্ছে কচু, পান, তরমুজ ও কাঁচা মরিচের। ঘনঘন সেচ দিয়েও কোনোভাবেই শুকিয়ে যাওয়া থেকে ঠেকানো যাচ্ছে না। তাছাড়া সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি নিয়ে আমি শঙ্কিত। কারণ অধিক দামে এগুলো বিক্রি করতে হবে।

অভিন্ন কথা বলেন সদর উপজেলার হানুরবাড়াদী গ্রামের কৃষক দোয়াল্লিন। তিনি বলেন, তার ফলন্ত কলা গাছের কাঁদি পড়ে যাচ্ছে, তরমুজের ফল ঝরে যাচ্ছে, বেগুন গাছে বেগুন ধরছেনা, কচু গাছ রোদে পুড়ে যাচ্ছে, শসা ক্ষেত তাপপ্রবাহে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, দেরীতে লাগানো ভুট্টা ক্ষেতেরও একই দশা। কোন ভাবেই ফসল ধ্বংস ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্রমাগত সেচ দিয়ে কিছু ফসল ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর কত টাকা ব্যয় করে সেচ দেয়া যায়।

চুয়াডাঙ্গার হানুড়বাড়াদী গ্রামের আবুল বলেন, তিনি তার ৬ বিঘা জমিতে বিনা-২৫ জাতের ধানের আবাদ করেছে। ধান ভাল হয়েছে। রোদ গরমের কারণে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি নিজের স্যালোমেশিন চালিয়ে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করে ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আশা করছি এ জমি থেকে ১৫০ মন ধান হবে। মাজরা পোকা না ঠেকাতে পারলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

একই গ্রামের ধান চাষি আনসার ও খাইরুল বলেন, সরকার নির্ধারিতের চেয়ে বেশি ৩ হাজার টাকা ব্যয় করে বিএডিসির সেচ পাম্প থেকে আমাদের সেচ সুবিধা নিতে হচ্ছে। টাকা বেশি লাগলেও ঠিকমত সেচ সেবা পাচ্ছি।    

চলমান তাপপ্রবাহে ফসল রক্ষায়  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, অতি তাপপ্রবাহের কি কি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা এখনো নিদিষ্ট করতে পারিনি। উপজেলা পর্যায়ে কাজ চলছে। দুই/এক দিনের মধ্যেই আমরা ফসলের ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারবো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //