চিংড়িতে ঝোঁক সাতক্ষীরার চাষিদের

‘আগে ধান ও সবজি চাষ করতাম। কয়েক বছর ভালো ফলন হলেও জলবায়ু পরিবর্তন ও লবণাক্ততার কারণে ফসল ভালো হচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে পরে মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েছি। এখন ভালোই চলছে সংসার। বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি গলদা, হরিণা, তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, মৃগেল বিভিন্ন জাতের প্রজাতের মাছ চাষ করছি।’-বলছিলেন সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার মহিষকুড় গ্রামের সুনীল শীল (৫৫)।

তিনি আরও বলেন, আগে কৃষিকাজ করে মা-বাবা, দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন তিনি। কিন্তু মাত্র তিন বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে এখন বছরে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। এতে করে পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে ভালোই চলছে তাদের সংসার। সুনীল শীল বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে দেশের মৎস্য উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে ‘আইওটি ডিভাইস’ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে মাছ উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে।

একই উপজেলার ফটিকখালী গ্রামের যমুনা দাসী জানান, স্বামীর মৃত্যুর আগে মাত্র দেড় বিঘা জমি রেখে যান। জমিতে কৃষি করে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছিল না। দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। পরে বাগদা চিংড়ি চাষ করে এখন অল্প জমিতে অধিক মাছ উৎপাদন করে দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি।

শুধু সুনীল বা যমুনা দাসী নয়, রিনা রানী, পারুল রানী মন্ডল, নয়ন মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন চিংড়ি চাষি একই কথা শুনিয়েছেন। তারা বলছেন, নতুন ‘আইওটি ডিভাইস’ ব্যবহারের ফলে ঘেরের সঠিক পরিচর্যা সম্ভব হচ্ছে। ঘেরের গভীরতা কতটুকু দরকার, পর্যাপ্ত পানি আছে কিনা, লবণের মাত্রা কম না বেশি, অক্সিজেন দেওয়া লাগবে কিনা-এ সবই এই ডিভাইস বলে দেয়। এ জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিলে মাছ মরে না, উপরন্তু উৎপাদন বেড়ে যায়। 

চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমির ৫৪ হাজার ৯৬০টি লবণ পানির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। সারা দেশে মোট যে পরিমাণ রপ্তানিজাত চিংড়ি উৎপাদন হয় তার ৬৫-৭০ শতাংশ জোগান দেয় সাতক্ষীরা জেলা। চলতি মৌসুমে জেলায় ২৪ হাজার ৫৪৭ টন রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদিত এসব চিংড়ির অন্তত ৭০ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে, যা থেকে দেশে বৈদেশিক আয় এসেছে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালে সাতক্ষীরা জেলাকে অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে চিংড়ি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বড় বড় ফ্যাক্টরি গড়ে উঠবে। যার ফলে চিংড়ি ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় বাড়বে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //