বরিশালে হাসপাতালের প্রিজন সেলে আসামি নিহত

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন মানসিক ভারসাম্যহীন হত্যা মামলার এক আসামির হামলায় নিহত হয়েছেন মোতাহার হোসেন (৬৭) নামের হত্যা মামলার অপর এক আসামি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অজিত কুমার মন্ডল (৪০) নামের অপর এক মাদক মামলার আসামি।

আজ রবিবার (১৪ এপ্রিল) ভোরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন প্রিজন সেলে হামলায় আহত মোতাহার হোসেনকে দুপুর দেড়টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। হতাহত তিনজনই বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতি।

নিহত মোতাহার হোসেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার বুড়ামজুমদার গ্রামের মৃত রফিজ উদ্দিনের ছেলে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি কিডনি রোগ এবং স্ট্রোকজণিত সমস্যা নিয়ে গত ৩ এপ্রিল তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এছাড়া অভিযুক্ত তরিকুল সিকদার (২৫) পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রামের মোশারফ সিকদারের ছেলে। মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য গত ৬ এপ্রিল তাকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়। তাছাড়া আহত মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাসিন্দা মাদক মামলার আসামি অজিত কুমার মন্ডলকে ভর্তি করা হয়েছে গত ৬ এপ্রিল।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন দুটি কক্ষে নারী এবং পুরুষ আসামিদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কক্ষ সংকটের কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন এবং স্বাভাবিক রোগীদের এক কক্ষে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

রবিবার ভোর রাতে মানসিক ভারসাম্যহীন আসামি তরিকুল সিকদার বাথরুম থেকে প্রিজন সেলে এসে স্যালাইনের স্ট্যান্ড দিয়ে অপর আসামি মোতাহার ও অজিতের মাথায় আঘাত করেন। এতে তারা দুজনই গুরুতর আহত হন। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে মোতাহার নামের বৃদ্ধ আসামির মৃত্যু হয়। লোহার রডের আঘাতে মাথায় রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হতে পারে বলে জানান ডা. সাইফুল ইসলাম।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘শনিবার থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের প্রিজন সেলের দায়িত্বে ছিলেন কারারক্ষী সুমন চন্দ্র দে, কামরুল এবং আব্দুর রব। কিন্তু যখন হামলার ঘটনা ঘটে তখন তারা একজনও কর্মস্থলে ছিলেন না। চা পানের কথা বলে তিনজনই বাইরে চলে যান। তাই আসামিদের ডাক-চিৎকার শুনেই প্রিজন সেলের গেট তালা দেওয়া থাকায় কেউ থামাতে পারেনি।

তবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলা সুপার এবং জেলারকে তাদের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা সত্যেও তারা কল রিসিভ করেননি।

নিহত মোতাহার হাওলাদারের ছেলে আমিনুল ইসলাম মিরাজ তার বাবাকে হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ঝগড়ার সময় প্রতিপক্ষের একজন স্ট্রোক করে মারা যান। সেই ঘটনাকে হত্যা দাবি করে আমাকে এবং আমার বাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। বাবাকে হত্যার দুদিন আগে প্রতিপক্ষরা হাসপাতালের প্রিজন সেলে এসে কারারক্ষীদের সাথে কথা বলে গেছেন। এর দুদিন পরেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এমনকি যখন হত্যা করা হলো তখন কারারক্ষীরা একজনও দায়িত্বে ছিলেন না। সকালে আমার ফুফু বাবার সাথে দেখা করতে আসে। কিন্তু তাকে বাবার সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আমি নিজেও একাধিকবার সিনিয়র জেল সুপার এবং জেলারকে ফোন করেছি খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। পরে বেলা ১২টার দিকে যখন প্রিজন সেলের কাছে যাই তখন দেখতে পাই বাবার মাথা ব্যান্ডেজ করা। এ থেকেই বোঝা যায় আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব মিস্ত্রি বলেন, ‘একজন আসামি অপর এক আসামিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এসময় অপর একজনকে আহত করেছেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা সেটা আমরা এখনো নিশ্চিত নই। এ ঘটনায় নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা বা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আপাতত এই ঘটনায় মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //