বরিশালে অভিযানে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার মৎস্য কর্মকর্তা

বরিশালের হিজলায় মৎস্য কর্মকর্তা কারেন্ট জাল উদ্ধার অভিযানে গিয়ে ফাঁড়ি পুলিশের দুই দফা হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার হরিনাথপুর বাজার এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের অভিযোগ হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুর রহিম তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। এসময় মৎস্য অফিসের তিন কর্মচারীকে বেধরকভাবে মারধর করেছে পুলিশ।

হামলায় আহতরা হলেন- হিজলা উপজেলা মৎস্য বিভাগের মাঠকর্মী মো. হানিফ, মাঝি মো. ইয়াসিন ও সাইদুল ইসলাম। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফাঁড়ি ইনচার্জ আব্দুর রহিম।

হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে নৌ-পুলিশের সদস্যদের সহযোগিতায় মৎস্য বিভাগের লোকজন সেখানে অভিযানে যান। তবে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে এক বস্তা অবৈধ জাল জব্দ করেন তারা।

মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জাল উদ্ধারের পর স্থানীয় নারীরা জানায়, ৫-৬ দিন আগে বিপুল পরিমাণ জাল এবং টাকা নিয়ে গেছে হিজলা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জসহ সদস্যরা। বিষয়টি জানার পর আমি হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম সাহেবকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। তিনি আসলে তার সামনেই জাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আবারো উপস্থাপন করেন স্থানীয়রা। সেইসাথে অভিযানিক দলের সদস্যরাও তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। এতে ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থল থেকে হিজলা সদরে চলে যাওয়ার পথে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমসহ একাধিক পুলিশ সদস্য সিভিল ড্রেসে আমাদের যানবাহনের গতিরোধ করে। যারমধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য নেমেই থ্রি-হুইলারের সামনে থাকা মাঝি সাইফুল ইসলামকে গালাগাল ও মারধর করে।

একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য লাঠি নিয়ে তেরে গেলে অন্যরা তাতে বাধা দেয়। তখন মাঠকর্মী হানিফ, মাঝি ইয়াসিনসহ বেশ কয়েকজন তাদের হামলার শিকার হন। একই সময় মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম আমাকে গালাগাল করেন এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। হিজলা থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের ওসিকে বিষয়টি জানিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ-পুলিশের সদস্যদের অভিযানের বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই সময় আমি অফিসে ছিলাম।

বিকেল ৪টার দিকে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। আমি গেলে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, আমি নাকি ওই বাড়িতে কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়েছি। তবে ওই বাড়ির মহিলারা সেখানে বসেই আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পথে অভিযানিক দলের সাথে আবারো দেখা হয়। তখন মৎস্য বিভাগের মাঝি ওই এলাকার লোকদের ডাক দিয়ে আমাদের মারতে বলে। সেসময় আমি মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাকে বিষয়টি শান্ত করতে বলি। আমার ফোর্সরাও পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। বিষয়টি আমি আমার থানার ওসিকে জানিয়েছি।

তবে প্রকাশ পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম মৎস্য কর্মকর্তাকে শাসাচ্ছেন। তার দুই সহযোগী অভিযানিক দলের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং মারধর করছে। আর নৌ পুলিশ সদস্যরা সবাইকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন, হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ জুবাইর আহমেদ। তবে প্রকাশ্যে কোন পুলিশ সদস্য কাউকে মারধর বা সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করলে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হিজলা নৌ পুলিশের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযানে গিয়ে থানা পুলিশের সাথে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ঝামেলা ও হাতাহাতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে নৌ-পুলিশ সদস্যরা ছিল, তবে পুরো বিষয়টি এখনো বিস্তারিত জানি না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //