২২ কোটি টাকার প্রকল্পের ছাদ ঢালাইয়ে ধস, তদন্ত কমিটি গঠন

পটুয়াখালী রাঙ্গাবালী উপজেলায় রাতের আধারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদ ঢালাইয়ের শুরুতেই ধসের পরার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন- নির্মাণাধীন কাজে স্টিল প্রোপস ব্যবহারের বদলে বাঁশ দিয়ে ছাদের সেন্টারিং করায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে ধসের ঘটনা লুকাতে ওই রাতেই সকল নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দাবি করে স্থানীয়রা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যা পরবর্তী রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন-দুর্বল সেন্টারিং এবং তারাহুরা কাজটি করায় ধসে পরেছে। এ ঘটনায় এলজিইডির রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনের পর ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পটুয়াখালী স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধায়নে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ চলছিল। ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি করছিলেন পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের মালিকানাধীন “প্রাইম কনস্ট্রাকশন”। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ ) সকাল থেকে নির্মাণাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। ওইদিন সন্ধ্যা পরবর্তী রাতে প্রতিষ্ঠানটির বারান্দা অংশের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিল শ্রমিকরা। কাজ শেষ করার পূর্ব মুহূর্তে বারান্দার ছাদ ধসে পরে। যদিও ধসের সময় ভবনের নিচে লোকজন ও অথবা শ্রমিকরা ছিল না। এসব বিষয়ে পটুয়াখালী সিভিল সার্জনকে একাধিকবার কল দিয়ে পাওয়া যায়নি। কাজ চলাকালে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন কর্মকর্তার উপস্থিতি ছিল না বলে জানান এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৪ মার্চ পটুয়াখালী স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কর্মকর্তার উপস্থিতি ছারা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিল শ্রমিকরা। সন্ধ্যার পরবর্তী রাতে প্রতিষ্ঠানটির বারান্দার ছাদের ঢালাই কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। ছাদ ঢালাই শেষ দিকে পৌঁছালে তা ধসে পরে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-গুরুত্বপূর্ণ অথবা মেঘা প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজে স্টিল সাটার অথবা প্রোপস ব্যবহারের বিধান থাকলেও বাঁশ দিয়ে তা সম্পন্ন করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এসব প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাহাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের পুরো ছাদটি ১০ হাজার স্কয়ার ফুট। এরমধ্যে বারান্দার অংশটুকু শুধু ১৭২ স্কয়ার ফুট। আমরা সবাই যখন ইফতারি করতে গেলে শ্রমিকরা ছাদের অংশ টুকু ঢালাই দেওয়া শুরু করেন। স্টিল সার্টার ও প্রোপসের বদলে বাঁশের ব্যবহার কেন, এমন প্রশ্নে কোন জবাব দেননি রাহাত হোসেন।

স্থানীয়রা জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলা উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা পেতে দীর্ঘ দুই যুগ থেকে আন্দোলন করে আসছে উপজেলাবাসী। সবশেষে ২০১২ সাল রাঙ্গাবালী উপজেলা গঠিত হলেও দীর্ঘ দিনেও নির্মাণ হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চরাঞ্চলের দুই লাখ মানুষে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট  হাসপাতাল নির্মাণ শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর নির্মাণ কাজ পায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের মালিকানাধীন প্রাইম কনস্ট্রাকশন। ১০ হাজার স্কয়ার ফুটের ভবনটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি টাকা। অথচ নির্মাণ শেষ না হতেই শুরু হয়েছে ধস। সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেনতেনভাবে কাজ করছেন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //