ঐতিহ্য ধরে রাখবে লাউড় চত্বর

হাওর বেষ্টিত ও পর্যটন সমৃদ্ধ তাহিরপুর উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কয়েকটি স্পষ্টকে নতুন নামকরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি তাহিরপুর থানার সামনে বৌলাই নদী ঘেঁষে জায়গাটিকে দৃষ্টি নন্দন করে নামকরণ করা হয়েছে লাউড় ভিউ। পূর্ব পাশেই হবে বৌলাই নদীকে নিয়ে পানির ফোয়ারা বৌলাই ভিউ। এছাড়াও কয়েকটি স্পষ্টকে নতুন নামকরণ করা হয়েছে।

এতে করে আগত পর্যটক লাউড় চত্বর নামকরণের কারণে তাহিরপুর এক সময় ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল তা জানার চেষ্টা করবে। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া অতিথ ইতিহাস সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আরো আগ্রহ বাড়বে।

উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে কয়েকটি স্পষ্ট কে নতুন রূপে তুলে ধরার জন্য ও ঐতিহ্য সর্বসমক্ষে তুলে ধরার জন্য লাউড় ভিউ নামকরণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

কারণ তাহিরপুর উপজেলা এক সময় ছিল লাউড় রাজ্যের রাজধানী। উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামটি ছিল লাউড় রাজ্যের রাজধানী। সেখানে রয়েছে এখনো তার প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন।

তবে একেই স্থাপনায় পূর্ব দিকে ইসকন মন্দির ঘেঁষে একটি দৃষ্টি নন্দন পানি ফোয়ারা নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে বৌলাই ভিউ নামকরণ করা হবে।

আগত পর্যটক শামসুল ইসলাম জানান, থানার ঘাটে এসে খুব লাগছে দৃষ্টিনন্দন করায় তবে লাউড় ভিউ নামকরণ দেখ জানার আগ্রহ বাড়ছে কেন এমন নামকরণ হল। পরে জানতে পারলাম তাহিরপুর উপজেলা লাউড় রাজ্যের রাজধানীর ছিল। নামকরণ করাটা খুব ভালো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, প্রাচীনকালে শ্রীহট্ট (সিলেট) কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। শ্রীহট্টের (সিলেট) তিন ভাগ তিনজন পৃথক রাজা বা নৃপতি দ্বারা শাসন কাজ চালানো হতো। এর মধ্যে গৌড় রাজ্য, লাউড় রাজ্য ও জয়ন্তিয়া রাজ্য নামে তিন রাজ্যের রাজা বা নৃপতির অধীনস্থ ছিলেন আরো অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূমির মালিকরা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও আংশিক ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে অবস্থান ছিল লাউড় রাজ্যের। সেই সময়ে লাউড়ের রাজধানী ছিল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়।

হলহলিয়া নামক গ্রামে এখনো ওই রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। কেশব মিশ্র সিংহ নামে একজন এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কৌনজগোত্র থেকে খ্রিষ্টীয় দশম বা একাদশ শতকে তিনি লাউড় গড়ে তোলেন। পরে বিজয় মানিক্য নামে একজন নৃপতি এখানে রাজত্ব করতেন। কারো কারো মতে বঙ্গ বিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার ও পরাজিত সম্ভ্রান্তরা জীবন বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে যান। এদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন। লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আর দুটি উপ-রাজধানী ছিল। এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষই লাউড়ের হাউলী, হলহলিয়া বা হাবেলী নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এখন এই দুর্গ ভগ্নাবশেষভাবে দেখা যায়। প্রতিটি প্রকোষ্ঠের মনোরম কারুকার্য দেখলেই বোঝা যায় এখানে কোনো সম্ভ্রান্ত রাজা বা নৃপতি বসবাস করতেন।

সাকিব মিয়া জানান, তাহিরপুরের অনেকে ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে নানান কারণেই তা হারিয়ে যাচ্ছে অযত্নে আর অবহেলায় তবে ধরে রাখতে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের কারণেই মানুষ জানায় চেষ্টা করবে অতিথি ঐতিহ্য সম্পর্কে এতে করে তাহিরপুর উপজেলা আরো আলোচনায় আসবে।

তাহিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, তাহিরপুর উপজেলা ইতিহাস ঐতিহ্য ভরপুর কিন্তু নানান কারণেই তা বিলুপ্তির পথে তাই সবার সহযোগিতা নিয়ে কয়েকটি স্পষ্ট কে নতুন রুপে তুলে ধরে ঐতিহ্য সর্বসমক্ষে তুলে ধরার জন্য নামকরণ করার কার্যক্রম চলছে। আমাদের অতিথ ঐতিহ্য ভুলে গেলে হবে না।

তাহিরপুর থানার পাশে নির্মাণাধীন সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পটি দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অংশে সুনামগঞ্জ জেলার প্রাচীন কালের রাজধানী তাহিরপুর উপজেলার লাউড় রাজ্যের নামে লাউড় চত্বর করা হতে পারে এবং দ্বিতীয় অংশ নদীর সহিত সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ কাজ চলমান। এটি শেষ হলেই তাহিরপুর বৌলাই চত্বর নামকরণ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //