ফেব্রুয়ারি এলেই সংবর্ধনা, বাকি ১১ মাস কেউ খোঁজ রাখে না

ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের যেসব ভাষা সৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের আজও বেঁচে আছেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙ্গা (হলদীটারী) গ্রামে।

সরেজমিন ওই ভাষা সৈনিকের বাড়ি গিয়ে জানা যায়, বয়সের ভারে ন্যুব্জ পড়া এই ভাষা সৈনিকের শরীরের অবস্থা ভালো নেই। ফেব্রুয়ারি এলেই তাদের দেওয়া হয় সংবর্ধনা। কিন্তু বাকি ১১ মাস তাদের কিংবা পরিবারের লোকজনের কেউ খোঁজ রাখেন না বলে অভিযোগ এই ভাষা সৈনিকের।

এসময় ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই জেলা প্রশাসন রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণপত্র প্রেরণ করে ডেকে নিয়ে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু বছরের বাকি ১১ মাস কেউ খোঁজ রাখেন না।

ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা।

আবদুল কাদের ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেসময়ে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তারা। লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ছিলেন আবদুল কাদের। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল সমর্থনে আবদুল কাদেরসহ ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য বিদ্যালয়ে চলে আসে।

পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কৌশলে ছাত্রনেতারা বিদ্যালয়ের জানালা দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তারা চিহ্নিত হলে পুলিশ তাদের ধরে এনে থানায় আটকে রাখে। কিন্তু তারা তখন থানা হাজত থেকেই রাষ্ট্র ‘ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দেওয়া শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের তখন ছেড়ে দেয় পুলিশ।


আবদুল কাদের ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙ্গা (হলদীটারী) গ্রামে পরিবারের বসবাস করছেন।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে সারাদেশের মতো সক্রিয় ভূমিকায় ছিল লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। জেলায় জীবিত ও প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২ জন ভাষা সৈনিক ছিলেন। এদের মধ্যে ১১ জন প্রয়াত হয়েছেন। তারা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল বুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //