মিয়ানমার থেকে আসছে বিস্ফোরণের শব্দ, আতঙ্কে স্থানীয়রা

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় নাফ নদীর ওপার থেকে থেমে থেমে আসছে ছোট-বড় বিস্ফোরণের শব্দ। এছাড়া মিয়ানমারের আকাশে চক্কর দিতে দেখা গেছে হেলিকপ্টার।

স্থানীয়রা বলছেন, বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টা থেকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে টানা বিস্ফোরণের শব্দ এসেছে। থেমে থেমে আসছে বিস্ফোরণের শব্দ। মিয়ানমারের আকাশে চক্কর দিতে দেখা গেছে হেলিকপ্টার।

নাফ নদী এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর শহরকে ঘিরে চলছে এ সংঘাত। মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা ও ফাদংচা নামের গ্রামেই এসব বিস্ফোরণের বিকট শব্দ হচ্ছে। এসব এলাকা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কয়েকটি ফাঁড়ি রয়েছে। যেগুলোর দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে বিদ্রোহীরা।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোছাইন জানিয়েছেন, নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে বৃহস্পতিবার রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেছে। শুক্রবার সকালে দুটি বিকট শব্দে এপারের মাটি কেঁপে ওঠে। দুপুর ১২টার দিকেও থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ আসছিল।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় থেমে থেমে গোলাগুলি হওয়ার আওয়াজ শুনতে পান তারা। মাঝেমধ্যে মাটি কাঁপানো শব্দও শুনেছেন তারা। শুক্রবার সকালের ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক তৈরি হয়।

শাহপরীর দ্বীপের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আমিন জানিয়েছেন, শাহপরীর দ্বীপের ওপারে মিয়ানমারের মংডুতে শুক্রবার সকালে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। এর কিছুক্ষণ পর বিকট দুটি শব্দে কেঁপে ওঠে সীমান্ত এলাকা।

শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়ার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, মিয়ানমারে রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সকালে দুটি বিকট শব্দে এপারের মাটি কেঁপে উঠেছে। এখনো থেমে থেমে আসছে শব্দ।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলি শব্দ শুনা যায়। একারণে  স্থানীয় লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সম্প্রতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরের সমস্যায় দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এপারেও গুলি আসবে- এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলা এসে পড়ে বাংলাদেশে দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এছাড়া রাখাইন প্রদেশে বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির হামলায় টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে বিজিপির সদস্যসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাদেরকে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহি উদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাতভর গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছে সীমান্তে থাকা বিজিবির সদস্যরা। সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী জানান, মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //