কক্সবাজারে অনাবাদী ভূমিতে সবুজের হাতছানি

কক্সবাজারে ন্যাড়া ও অনাবাদী পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০ লাখ চারাগাছ রোপণ করেছে বন অধিদপ্তর। রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া, ঘিলাতলি ও জঙ্গল গর্জনিয়া মৌজা এলাকায় প্রায় ৭৬৫ হেক্টর অনাবাদী বনভূমিতে এসব চারাগাছ রোপণ করা হয়। আগামী ২-৩ বছরে রোপণকৃত এসব চারাগাছ বড় হলে সবুজ সমারোহে বদলে যাবে এই অঞ্চলের পরিবেশ। এছাড়াও জীবিকায় বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বনের উপর চাপ কমে আসবে। ইতিমধ্যে এই বনায়নকে কেন্দ্র করে এলাকার প্রায় ৩ হাজারের অধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি  হয়েছে।

নতুনভাবে বনায়ন সৃজিত পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সবুজ অট্টালিকা। অথচ এই পাহাড়গুলো এক সময় অযত্ন, অবহেলা ও পতিত ভূমিতে পরিণত হয়েছিল।

অতিরিক্ত মাত্রায় গাছ কাটা ও বন উজাড়ের কারণে বিগত ৩০ বছর ধরে অনাবাদী ছিল উক্ত বনভূমি। অনাবাদী এসব বনভূমিতে পর্যায়ক্রমে নতুনভাবে বনায়ন সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন কক্সবাজার উত্তর বন অধিদপ্তর।

বন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যপ্রাণীর বাসস্থান নষ্ট, জৈব বিন্যাসের ক্ষতি ও অনুর্বরতা রোধে অনাবাদী সব বনভূমিকে পর্যায়ক্রমে সবুজায়নের পাশাপাশি বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বাকখালী রেঞ্জের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া, ঘিলাতলি ও জঙ্গল গর্জনিয়া মৌজার বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালাকে কেটে বন উজাড় করেন বনদস্যুরা। এতে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট , জৈব বিন্যাসের ক্ষতি ও অনুর্বরতা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাগুলোর খুব বেশি ভূমি ক্ষয় ও অনাবাদী জমিতে পরিণত হয়। এভাবে প্রায় ৩০ বছর পেরিয়ে যায়। তিন দশক পর এসব অনাবাদী বনভূমিতে নতুন করে বন সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ।

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সুফল নামে প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী বিটের উখিয়ার ঘোনা ও থিমছড়িতে ৩০০ হেক্টর, যার বরাদ্দ ৪৪ লাখ টাকা, ঘিলাতলি বিটের বেলতলিতে ৩৫০ হেক্টর যার বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা, কচ্ছপিয়া বিটের নদীর পশ্চিমকুল ও দুছড়ি এলাকায় ১১৫ হেক্টর যার বরাদ্দ ১৬ লাখ টাকাসহ মোট ৭৬৫ হেক্টর জমিতে বনায়ন সৃজন করা হয়েছে।

স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, নার্সারি সৃজন, জঙ্গলকাটা, চারারোপণ, বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও বাগান পাহারায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ৪৯০ জন মানুষের ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতে ৪৯০ জন শ্রমিক পারিশ্রমিক হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পেয়েছে। যা তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহে উপকৃত হয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বাকখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সরওয়ার জাহান জানান, বাগানের সকল স্থানে গাছের  আগাছা পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বাগানে ছায়া গাছ হিসেবে অড়হর ও বগামেন্ডুলা গাছ বিরাজমান রয়েছে। এছাড়া রোপণকৃত চারাগাছগুলো দিনদিন বড় হয়ে উঠছে। ওষুধি গাছ বাগানের সর্বত্র দেখা মেলে। প্রায় ৩০ বছর পূর্বে বিলীন হওয়া বনে পুনরায় বনায়ন সৃজন সঠিক পরিচর্যার কারণে সর্বত্র চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।

বাগানে দেশীয় প্রজাতির গামারী, চিকরাশ, অর্জুন, আমলকি, হরতকি, বহেরা, কদম, কৃষ্ণচুড়া, বট, সোনালো, চাপালিশ, গর্জন, শাল,নিম সহ ২৮ প্রজাতির প্রায় ২০ লাখ চারা গাছ রোপণ করা হয়েছে। বন বিভাগের অনাবাদী খালি ভূমিতে সবুজ বনাঞ্চল গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। 

সরওয়ার আরো জানান, ইতোমধ্যে সৃজিত বনায়নে দুই- তিনবার উডিং করা হয়েছে। এর আগে বনায়নে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কারও অর্জন করেছে। সুফল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুই-তিন বছরের মধ্যে কক্সবাজারে ন্যাড়া ও পতিত পাহাড় আর দেখা যাবে না।

এ বিষয়ে কক্সবাজার উত্তর বন অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার, বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকার সংস্থানের লক্ষ্যে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব বাস্তবায়ন করা গেলে বনের উপর মানুষের চাপ কমে আসবে। 

এছাড়াও সুফল প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধির কয়েক লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করেছে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ। সুদীর্ঘ পথচলায় ২০২০ সালে সফল ‘বনায়ন’ এ প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পান বাকখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা। এ ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //