নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে নতুন করে আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে উখিয়া- টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। রাখাইনসহ আশপাশ অঞ্চলের আরো চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে টেকনাফ এবং উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এমন সব আশঙ্কা প্রকাশ করায় ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এক সপ্তাহ  ধরে সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি এবং মর্টার শেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে আগুনের ধোঁয়াও৷ 

এদিকে নিরাপত্তার কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একদিনের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসা রয়েছে। 

আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনের নির্দেশনায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের কাছে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আবারো গোলাগুলি চলছে। বিস্ফোরিত হচ্ছে মর্টার শেল।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সোমবার সকালেও একটি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাসহ আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

তিনি আরো বলেন, আমরা যারা এপারে বসবাস করছি সবাই আতঙ্কে আছি, কখন কোন সময় কি হয় জানি না। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে না যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।

এর মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এবং উখিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এখানে উস্কানি হিসাবে কাজ করতে পারে বলে শঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে এক ধরনের নাশকতা হওয়ার আশঙ্কা আছে। কাজেই ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। মিয়ানমারে এই সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে নতুন করে আবারো রোহিঙ্গা আগমনের একটি শঙ্কাও রয়েছে। 

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে প্রাণ বাঁচাতে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এতে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অবস্থানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি।

মিয়ানমার অংশে অবস্থানরত স্বজনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির চক্রান্ত রুখে দিতে ক্যাম্পে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারে দেওয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা।

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, নতুন করে কোন রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না। সীমান্তে বিজিবি কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছে৷ আশা করছি আমাদের চেকপোস্ট যেকোনো রকম মুভমেন্ট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করিনি।

বর্তমানে উখিয়ার কতুপালং হয়ে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশের স্বতন্ত্র তিনটি ব্যাটেলিয়ন। একই সাথে একাধিক আনসার ক্যাম্প। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আর্মড পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে টহলও দিচ্ছে তারা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //