জয়পুরহাটে আলু ক্ষেতে লেটব্লাইট রোগ, দিশেহারা কৃষক

আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাটে এবার আলু ক্ষেতে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে লেটব্লাইট (নাবীধ্বসা) রোগ। ফলে বার বার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আলুর গাছ বাঁচাতে পারছেন না কৃষকরা। চার দিন পর পর তারা জমিতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। সব জাতের আলু ক্ষেতেই এবার দেখা দিয়েছে এই রোগ। আলু রোপনের দেড় থেকে দুই মাস পর কাণ্ড ও পাতা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলায় এবার আলু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার কৃষকরা ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু রোপন করেছেন। যার মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে আলুতে লাভ বেশি পেয়ে কৃষকরা এবার অধিক উৎপাদনের আশায় বেশি দাম দিয়ে উন্নত জাতের আলু বীজ কিনে বপন করেছেন। এছাড়া সার, সেচ ও কীটনাশকের দামও বেশি। ফলে গত বছরের তুলনায় আলু চাষে এবার বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার বেশি খরচ পড়েছে কৃষকদের। কিন্তু বীজ বপনের দেড় থেকে দুই মাস পর আলু গাছে এবার ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিয়েছে। ভালো ক্ষেতে হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে কাণ্ড ও পাতা মরা রোগ। দ্রুত গাছ মরে যাচ্ছে। আবার পাতা কালো হয়ে যাচ্ছে। গাছ বাঁচাতে কৃষকরা চার দিন পর পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন। তাতে মড়ক কিছুটা কমলেও পুরোপুরি ভালো হচ্ছে না। 

কৃষকরা বলছেন, আগের মত কীটনাশক কাজ করছে না। বার বার ক্ষেতে স্প্রে করতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেতের গাছ মরে গেছে। আবার মড়ক থেকে ক্ষেত বাঁচাতে অনেক কৃষক দুই মাস বয়সের আলু তুলে বিক্রিও করছেন। জেলার সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া, কালাই উপজেলার হারুঞ্জা, ভাবকী ও খুঞ্জিয়াপাড়া এবং ক্ষেতলাল উপজেলার তেলাবদুল, তালশন, ভাশিলা ও মামুদপুর এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে আলু ক্ষেতের এমন চিত্র দেখা গেছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, চার বিঘা জমিতে ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক জাতের উন্নত বীজ কিনে তিনি আলু চাষ করেছেন। বর্তমানে আলু গাছের বয়স দেড় মাস। কিন্তু পুরো ক্ষেতেই মড়ক দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে তিন বার ছত্রাকনাশক স্প্রে করে কিছুটা মড়ক কমেছে। তবে পুরোপুরি রোগ সারেনি। এজন্য প্রতিদিন পরিচর্যা করতে হচ্ছে। 

ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শতকে চার মণ হারে আলু উৎপাদন হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু যেভাবে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে এবার আলুর উৎপাদন অনেক কম হবে। বার বার স্প্রে করেও গাছের রোগ ভালো হচ্ছে না।

ক্ষেতলাল উপজেলার তালশন গ্রামের কৃষক জামির উদ্দিন বলেন, ৬ বিঘা জমি পত্তন (লিজ) নিয়ে আলু চাষ করেছি। কিন্তু পাতামরা রোগ দেখা দেওয়ায় ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ব্যারাম কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। 

সমন্তাহার গ্রামের কৃষক মোকাব্বের আলী বলেন, মামুদপুর মাঠে দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করার এক মাস পর ক্ষেতে রোগ দেখা দেয়। একবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সবগুলো গাছ মরে গেছে। ওষুধ স্প্রে করারও সুযোগ পাওয়া যায়নি। 

বেলগাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, এবারের মত কোনো বার আলু ক্ষেতে রোগ দেখা দেয়নি। কৃষিবিভাগ বলছেন আবহাওয়ার কারণে না-কি এবার আলু ক্ষেতে রোগ বেশি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেও আলুক্ষেত বাঁচাতে পারছি না।

আলুক্ষেতে রোগের কথা স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার এনামুল হক বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার আলু ক্ষেতে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আশা করছি এতে ফলনে কোনো প্রভাব পড়বে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //