শেরপুরের অক্সিজেন বাড়ি ‘আনন্দ ধাম’

শেরপুরের মাদার তেরেসা খ্যাত সমাজ সেবক রাজিয়া সামাদ ডালিয়ায় বাড়ি ‘আনন্দ ধাম’ যেন হাজারও বাহারি ফুল আর লতা-পাতার আশ্রম হয়ে উঠেছে। প্রকৃতি প্রেমী অনেকেই এ বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘অক্সিজেন বাড়ি’। এ অক্সিজেন বাড়ি বা আনন্দ ধামে রয়েছে শতাধিক দেশি-বিদেশী বাহারি ফুলগাছসহ প্রায় ২ হাজার ফল, অর্কিড আর লতা-পাতার গাছ। বছর জুড়েই এই আনন্দ ধামে ফুটে থাকে নানা প্রজাতির বাহারি ফুল। আশি ঊর্ধ্ব বয়সেও প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা করে সেই বাগানের পরিচর্যা করে সময় কাটান সমাজ সেবক শেরপুরের মাদার তেরেসা খ্যাত রাজিয়া সামাদ ডালিয়া। তার আনন্দ ধামের বাহারি ফুল আর সবুজের পরশ নিতে প্রতিদিনই আসেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। রাজিয়া সামাদ ডালিয়ার মানবসেবার পাশাপাশি এক চিলতে সবুজ আর বাহারি ফুলের ঘ্রাণ নিতে কিছুক্ষণ সেই ছায়াসুনিবির পরিবেশ উপভোগ করে ক্লান্তি দূর করেন নানা বয়সের মানুষ।

শেরপুর জেলা শহরের ২ নং ওয়ার্ডের নাগপাড়া মহল্লার বাসিন্দা শেরপুরের মাদার তেরেসা খ্যাত সমাজ সেবক রাজিয়া সামাদ ডালিয়া। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া প্রায় ২০ শতক জমির এ বাড়িটি ভিতর ১০ শতক জমির উপর টিনসেডের বসত ভিটা। আর বাকি ১০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন শতাধিক প্রজাতির দেশি-বিদেশী ফুলের গাছসহ প্রায় ২ হাজার ফল, অর্কিড ও লতা-পাতার বাগান। বছর জুড়েই ফুটে থাকে নানা রঙের বাহারিসব ফুল। পাশাপাশি বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন টবে ঝুলে আছে নানা প্রজাতির অর্কিড। ফলে বাড়িটিতে সব সময়ই ছায়া ও ঠান্ডা সবুজে ঢেকে থাকে। 

রাজিয়া সামাদ ডালিয়া জেলা ডায়বেটিকস সমিতির সভাপতির পাশাপাশি রয়েছেন নানা সমাজ সেবা মূলক সংগঠনের সাথে জড়িত। সেইসাথে তিনি তার ব্যক্তিগতভাবে অসহায় মানুষের পাশে থেকে করে যাচ্ছে মানবসেবা।

শেরপুরের এই আনন্দ ধামে সমাজসেবী, স্বেচ্ছাসেবক তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি নানা পেশা ও বয়সের মানুষ প্রতিদিনই ছুটে আসেন প্রকৃতির অক্সিজেন নিতে।


রাজিয়া সমাদ ডালিয়ার আনন্দ ধামের বাগানে রয়েছে প্রায় ২ হাজার গাছ। নামা জাতের ফল গাছের পাশাপাশি ফুল গাছের মধ্যে জাট্টোবা, ট্রাম্পেইড ভাইন, পেশন ফ্লোওয়ার, অলকানন্দ, মাধবী, মালতি, এরোমেটিক জুঁই, গ্লাডিয়েল, জার্বেডা, কলাবতি, পদ্ম, শাপলা, জল পপী, ৭ রঙের অপরাজিতা, ৫/৬ রঙের জবা, ৬ রঙের রঙ্গন, অনন্তলতা, নীলমণি, জিনিয়া, দোলনচাঁপা, বেলী, গাদা, গন্ধরাজ, টেরেনিয়া, রয়েলিয়া, গোলাপ, বিভিন্ন রঙের অর্কিডসহ দেশি-বিদেশী শতাধিক ফুল গাছ।

এসব বাহারি ফুল গাছের সুবাস নিতে এবং সবুজের পরশ নিতে ছুটে আসেন অনেক প্রকৃতি প্রেমী। এসময় এ বাগানের বিভিন্ন গাছের ডালে নানা জাতের পাখপাখালির ডাকাডাকিতে পুলকিত হয়ে উঠে তাদের মন।

রাজিয়া সামাদ ডালিয়ার বয়স এখন ৮১ বছর চলছে। এই বয়সেও তিনি তার ডায়াবেটিক হাসপাতালের নানা কাজের ফাঁকে নিজের হাতেই পরিচর্যা করে থাকেন এই বাগান।

এ অক্সিজেন বাড়ির বিষয়ে আরেক সমাজসেবক রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, প্রতিষ্ঠাতা আল আমীন রাজু জানায়, জন্মের পর থেকেই ফুল আর প্রকৃতির সাথে বড় হওয়ায় সেই ফুল আর প্রকৃতিকে তিনি ছাড়তে পারেনি। দুই সন্তান ঢাকায় বসবাস করলেও তার এই আনন্দ ধামের আনন্দকে ছেড়ে যেতে পারছে না। তাই আজও তিনি নিজ হাতে লালন করছেন তার এই একান্ত পরিবার ও সবুজ প্রকৃতিকে। তিনি শুধু তার বাড়িই নয়, রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করাও তার নেশা। মানবতার কাজের পাশাপাশি তার হতে গড়া ডায়বেটিকস সমিতির হাসপাতালের দেখাশোনা করে থাকেন।

রাজিয়া সামাদ ডালিয়া জানায়, তার বাবা খান বাহাদুর ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের চিফ হুইপ ছিলেন। শেরপুর শহরের তাদের বেশিরভাগ জমিজমা সামাজিক ও মানবতার কাজে দান করা হয়েছে। রাজিয়া সামাদ ডালিয়ারা ১১ ভাইবোন। স্বামী আব্দুস সামাদ ছিলেন রোডস এন্ড হাইওয়ের সুপারেন্ডেন্ট। ১৯৬৪ সালে তাদের বিয়ে হলে দুই ছেলে মেয়ে হওয়ার পর ১৯৮২ সালে স্বামী মারা যান। এরপর কিছুদিন ঢাকায় থাকার পর ৯০ দশকের দিকে নিজের পৈত্রিক বাড়িতে ফিরে আসেন অনেকটা নাড়ীর টানেই।

শেরপুরে এসেই তিনি ডায়াবেটিক সমিতির মাধ্যমে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা থেকে নানান মানবিক কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তার বাড়ির ভিতর গড়ে তুলেন নানা ফলদ ও বাহারি ফুল আর লতা-পাতার বাগান। তার বাবাও ছিলেন ফুল প্রেমী। তৎকালে ঢাকার বাসায় ছিল নানা ফুলের বাগান। সেই বাগানের ডালিয়া ফুল থেকেই বাবা তার নাম রাখেন ডালিয়া। বর্তমানের তার বাড়ির ফুল গাছের নানা বাহারি ফুলের সুবাস আর সৌন্দর্যে আনন্দময় সময় কাটে তার। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। প্রকৃতির রঙ ছড়ানো বাগানের বিভিন্ন দেশীয় পাখপাখালি ভরে যায়। তাই তিনি পাখিদের জন্য বিভিন্ন গাছের ডালে কৃত্রিম বাসাও বেঁধে দিয়েছেন।

স্থানীয় মানুষও প্রতিদিন রাজিয়া সামাদ ডালিয়ার আনন্দ ধামে ঘুরে এসে ক্লান্তি ও ক্ষণিকের জন্য চিন্তামুক্ত হয়ে যায় এবং প্রকৃতির ছোঁয়া নিয়ে মনকে আরে সতেজ করে তুলেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //