পার্বত্য চট্টগ্রামে পাসের হার হ্রাস
২০২৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাসের হার হ্রাস পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। সংগঠনটি বিপর্যয় রোধে শিক্ষা মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা, শিক্ষক সংকট নিরসন, বিশেষ শিক্ষা বোর্ড গঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্রাবাস চালু করার দাবি জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি উঠে এসেছে। পিসিপি পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের চলমান সংকট নিরসনে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যথোপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে পিসিপি সভাপতি-সম্পাদক বলেন, নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২৬ নভেম্বর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাসের হার গত বছরের তুলনায় অনেক পিছিয়েছে। এর আগে মাধ্যমিক বোর্ড (এসএসসি) পরীক্ষায়ও এ অঞ্চলে পাসের হার কমেছে। প্রতি বছর দেশের অপরাপর অঞ্চলের চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পাশের হারে পিছিয়ে থাকলেও সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সমাধান বা উত্তরণের জন্য উপযুক্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
পিসিপি নেতারা বলেন, যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার বেহাল অবস্থা ও দিন দিন বিপর্যয়ের পথে ধাবিত হচ্ছে। তাই আমরা পাহাড়ে শিক্ষার বিপর্যয় রোধকল্পে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা, শিক্ষক সংকট নিরসন, বিশেষ শিক্ষা বোর্ড গঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্রাবাস চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকস্তরে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যে চলছে। এর সাথে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, এমপি, মন্ত্রী এবং সরকারে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই জড়িত রয়েছে। পাহাড়ে একদিকে শিক্ষার গুণগত মান নেই, অপরদিকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অদক্ষ-অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার এই বেহাল অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পিসিপির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মুখে উন্নয়নের বুলি আওড়ালেও দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার শিক্ষা-স্বাস্থ্যর মতো বিষয়গুলো উপেক্ষা করে রাখা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে জাতিসত্তাগুলোর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের অভাবে আলোর মুখ দেখছে না। নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা, বাংলা ভাষায় শিক্ষা গ্রহণে দুর্বোধ্যতা, পাহাড়ে অর্থনৈতিক দারিদ্র্যতা, পর্যাপ্ত স্কুল-কলেজ ও ছাত্রাবাস সংকট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় তৈরি করেছে। কাজেই, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মনে করে, দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার বিপর্যয় রোধ করার বিশেষ শিক্ষা বোর্ড চালু করা জরুরি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh