মিরগঞ্জ খেয়াঘাটের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব, বৃদ্ধ খুন

বরিশালের মুলাদীতে খেয়াঘাটের আধিপত্য নিয়ে ছেলেদের সাথে দ্বন্দ্বে আব্দুর রব নামের ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত দুই আসামি এবং একজন ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের চর কমিশনার এলাকার ফেরিঘাট সংলগ্ন বন্দুকসী বাড়ির সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত আব্দুর রব হাওলাদার (৬৩) ওই গ্রামের মৃত ধলু হাওলাদারের ছেলে। তবে বেলা ৩টা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এনিয়ে মিরগঞ্জ ফেরি এবং খেয়াঘাটের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রাণ হারালো তিনজন।

তবে দীর্ঘদিনের এই বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নেই পুলিশের। উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ওয়ারেন্টের আসামিদের গ্রেপ্তার না করে তাদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।

নিহতের ছেলে আব্বাস হাওলাদার বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যার দিকে মুলাদীর মিরগঞ্জ ফেরিঘাটে তার পরিচালিত একটি বাস কাউন্টারে কুকুর ঘুমিয়ে ছিলো। এজন্য প্রতিপক্ষ মানিক কাউন্টারে লাথি মারে। আমি এর প্রতিবাদ করি। এজন্য মানিক সরদার ও আহসান সরদারসহ তাদের লোকেরা আমার ওপর চড়াও হয়। রাতেই তারা আমার ওপর হামলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

তিনি বলেন, ‘সকালে বাবা বাজার করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকযোগে খাসেরহাট বাজারে যাচ্ছিলেন। কিছুদূর যেতেই প্রতিপক্ষ মানিকের স্বজন মুলাদী মিরগঞ্জ খেয়াঘাটের আলোচিত মনির সরদার হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি কামাল সরদার ও জামাল সরদার এবং কাজিরচর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শামীম খানের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন মিলে বাবাকে বহনকারী ইজিবাইকের গতিরোধ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা চাপাতি দিয়ে বাবাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে এবং পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

আব্বাসের দাবি ‘হত্যাকাণ্ডের সাথে কামাল, জামাল এবং শামীম খান ছাড়াও মানিক, আহসান, তোতা সরদার, ইব্রাহিম, আল আমিন মোল্লা, করিম মল্লিক, নেছার, সুলতান, জাফর, ইকবাল সরদার, আসাদ সরদার, আল আমিন সরদার ও মাহাবুব সরদারসহ আরও অনেকে জড়িত।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাবাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ছেলে আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবাকে হত্যার নেতৃত্ব দেয়া কামাল ও জামাল সরদার দুই ভাই। আগেও তাদের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, ডাকাতিসহ ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কাউন্টার ম্যানেজার মনির হত্যা মামলায় দুই ভাইয়ের নামে আদালতের ওয়ারেন্ট রয়েছে। ওয়ারেন্ট নিয়ে তারা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকার কারণেই আজ আমি আমার বাবাকে হারালাম। আমরা এর বিচার চাই।

এপ্রসঙ্গে মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘নিহত এবং হামলাকারী দুই পক্ষের মধ্যে মিরগঞ্জ ফেরিঘাট এবং খেয়াঘাটের আধিপত্য নিয়ে অনেক আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধের জের ধরেই মঙ্গলবার সকালে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আব্দুর রব হাওলাদারকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

স্বজনদের অভিযোগ ওয়ারেন্টের আসামি কামাল এবং জামাল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের কেন গ্রেপ্তার করলো না এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘তারা ওয়ারেন্টের আসামি কি-না আমি জানি না’ বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বরিশালের মুলাদী, হিজলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ তিনটি উপজেলাবাসীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মিরগঞ্জ ফেরি এবং খেয়াঘাট। এই ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে দীর্ঘ বছর ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইতোপূর্বে মনির সরদার ও তুহিন সরদার নামে দুটি খুন হয়। তাছাড়া আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয় সিআইডি সদস্যরা। যাত্রী নির্যাতনের একাধিক ঘটনাও ঘটে মিরগঞ্জে। ফলে তিন উপজেলাবাসীর গলারকাটা মিরগঞ্জ খেয়াঘাটের ইজিরা প্রথা বাতিল করে ব্রিজ নির্মাণের দাবি আরও জোরালো হলো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //