কৃষি বদলে দিয়েছে বিজয়নগরের মানুষের ভাগ্য

ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই জীবিকা নির্বাহ করেন কৃষিকাজ করে। তবে সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় একসময় এ উপজেলার অনেকেই জড়িয়ে পড়েন চোরাকারবারিতে। কিন্তু কৃষি বদলে দিয়েছে বিজয়নগরের মানুষের ভাগ্য। বিশেষ করে চোরাকারবারিদের অনেকেই এখন কৃষিকাজ করে জীবনযাপন করছেন। প্রতিবছর অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ধান, মৌসুমি ফল ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হচ্ছে সম্ভাবনাময় এ জনপদে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে আলাদা করে ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে ২০১০ সালে গঠিত দেশের ৪৮২তম উপজেলা বিজয়নগর। ২২১ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় রয়েছে হাওর, সমতল ও উঁচু টিলা। তবে ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এক সময় বেকার যুবকদের অনেকেই জড়িয়ে পড়েন মাদক ও বিভিন্ন পণ্যের চোরাকারবারে। তবে এ চিত্র বদলাতে থাকে গত ৭-৮ বছর আগে থেকে। ধীরে ধীরে অনাবাদি জমিগুলোতে বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন শুরু করেন স্থানীয়রা। সেই থেকেই শুরু হয় বিজয়নগরবাসীর বদলে যাওয়ার যাত্রা। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে অর্থনৈতিক সক্ষমতা। দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান।

বিজয়নগরের হাওর এলাকাগুলোতে চাষ হয় বোরো, আউশ ও আমন ধান। আর সমতলে আবাদ হয় ঝিঙা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বেগুন ও কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজি এবং উঁচু জমিতে বিভিন্ন মৌসুমি ফল।

মূলত বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণপুর, সিঙ্গারবিল এবং হরষপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে মৌসুমি ফলের আবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। এসব গ্রামের উঁচু জমিগুলোতে বিভিন্ন জাতের লিচু, কাঁঠাল, মাল্টা, আম ও কমলার মতো চাহিদা সম্পন্ন ফলের আবাদ হয়। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনাতে ফল-সবজি চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে অনেক পরিবার।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বিজয়নগরের মাটি জৈবপদার্থ ও দোআঁশ সমৃদ্ধ। এছাড়াও এখানকার মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে বোরন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। পাশাপাশি মাটিতে পিএইচের পরিমাণ ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ পর্যন্ত। যা ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

চলতি মৌসুমে বিজয়নগরে ৪৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচু, ৩৪৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা এবং ৩৭ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এবার বিজয়নগর থেকে ৫০-৬০ কোটি টাকার ফল বাজারজাত হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। তবে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফলের আকার কিছুটা ছোট হয়েছে।

এছাড়াও প্রতিবছর ৬-৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো, আমন ও আউশ ধান চাষ হয়। এসব ধানি জমি থেকে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ কোটি টাকার ধান পাওয়া যায়। 

এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, প্রতিবছর বিজয়নগরের কৃষকরা অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিভিন্ন ফল-ফসল উৎপাদন করছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সহজেই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা যায় দেশের নানা প্রান্তে। শুধু ফলের মৌসুমেই ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ফল বাজারজাত হয় বিজয়নগর থেকে। সবচেয়ে বেশি অর্থ আসে ধান থেকে। কৃষি এখানকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাই কৃষিপণ্যের উৎপাদন আরও বাড়াতে কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //