বগুড়ায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ ২৭ স্কুলশিক্ষার্থী

বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে দলটির নেতাকর্মী ও পুলিশের মাঝে সংঘর্ষে উভয়পক্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এসময় পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৭ শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

জানা যায়, কেন্দ্রীয় ঘোষিত বিএনপি’র ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচী আজ মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০ টায় বগুড়ায় বের হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অপরদিকে বিএনপির কর্মসূচির মত বেলা ১১টায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’র কর্মসূচী ঘোষণা করে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ।

একই দিন মাত্র এক ঘন্টার ব্যবধানে দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচীকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যানবাহন চলাচল কমে য়ায়। বড়বড় বিপনীবিতান বন্ধ করা হয়। সাধারণ মানুষের ভিড়ও কমে যায়। শহরজুড়ে পুলিশ সদস্যরা মোড়ে মোড়ে সতর্কতার সাথে টহল দিতে থাকে।

এর মাঝে, বেলা সাড়ে ১২ টার সময় বগুড়ার বনানী থেকে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে পদযাত্রা শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দিকে অগ্রসর হয়। পথে ইয়াকুবিয়ার মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ সদস্যরা শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে বাধা দিলে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ছোঁড়ে। এসময় ইয়াকুবিয়া মোড়ের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচচ বিদ্যালয়ের ২৭জন শিক্ষার্থী টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে।

পরে স্কুলের শিক্ষক ও এলাকবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন স্কুল শিক্ষার্থীরা ভালো রয়েছে।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শফিক আমিন কাজল জানান, মঙ্গলবার সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়া ইয়াকুবিয়া স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীরা শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের শ্বাসকষ্ট ও চোখমুখ জ্বালাপোড়া করছিলো। চোখ মেলতে পারছিলো না। পরে তাদের অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। শেষ পর্যন্ত ২৭ জন স্কুল ছাত্রীকে ভর্তি করা হয়। তারা সকলেই ভালো আছে। বিকালে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে সব মিলিয়ে ১০ জন আহত হয়েছে বলে দাবী করা হয়। এছাড়া ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়।

এ ঘটনার পর বেলা ১ টায় বগুড়া শহরের বিএনপি অফিসের সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা আবারও টিয়ারশেল ছোড়ে।

বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ইয়াকুবিয়ার মোড় থেকে সরাসরি সাতমাথায় যাওয়ার অনুমতি ছিল না। তারা যেতে চাইলে পরিস্থিতি বিবেচনায় এতে বাধা প্রদান করা হয়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর লাঠি, ইট-পাটকেল নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়। এরমধ্যে নারুলি ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলামকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করেছে। এই হামলায় ৩ জন নারী পুলিশ সদস্য, নারুলি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ ১০ পুলিশ সদস্যকে আহত করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। এসব ঘটনায় পৃথকভাবে মামলা দায়ের করা হবে। বগুড়া শহরের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। যানবাহন ও বিপনী বিতান খোলা রয়েছে।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা জানান, পদযাত্রাটি ওই সড়কের কলোনী, ঠনঠনিয়া, মফিজপাগলার মোড়, সাতমাথা, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা, ফুলবাড়ি, বিসিক, মাটিডালি স্কুল হয়ে মাটিডালি বিমান মোড়ে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পথে পুলিশ সদস্যরা মিছিলে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।

এদিকে সকাল ১০ টা থেকে বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পার্কে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’র কর্মসূচী পালন করে জেলা আওয়ামী লীগ। এতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন। এক পর্যায়ে বিএনপির মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ দলীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শহরের জিরো পয়েন্টে অবস্থান গ্রহণ করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //